বিকল্প রুট সরাইল-নাসিরনগর-হবিগঞ্জ, সেতু মেরামতে অনিশ্চয়তা-ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ

  • স্টাফ রিপোর্টার.
  • ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যানবাহনের স্রোত এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলার সরু সড়কে। এতে স্থানে স্থানে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। স্থানীয় সড়ক-সেতুও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয় আর দূর-দূরান্তের যাত্রী সবাই। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সরাইলের শাহবাজপুরে তিতাস নদীর ওপর সেতুটির চতুর্থ স্পেনের ফুটপাতসহ রেলিং ভেঙে পড়ে। এরপরই সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) সব ধরনের ভারী ও মাঝারি যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুর ওপর দিয়ে। ঢাকা-সিলেটের মধ্যে চলাচলকারী এসব যানবাহনগুলোকে পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া না পর্যন্ত বিকল্প সড়ক হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-নাসিরনগর ও হবিগঞ্জের লাখাই-হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়ক ব্যবহার করার জন্য বলা হয়। এটি ছাড়াও সিলেট থেকে চট্টগ্রাম বা কুমিল্লামুখী যানবাহন বিজয়নগরের চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক ব্যবহার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সুলতানপুর দিয়ে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে যুক্ত হচ্ছে।
  • এদিকের যানবাহন এ পথেই আবার সিলেট যাচ্ছে। ঢাকা-সিলেটের মধ্যে চলাচলকারী যাত্রীবাহী অনেক বাস কুমিল্লা হয়ে এপথ দিয়েই আসা যাওয়া করছে। জেলার সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা শাহবাজপুর সেতু কবে চলাচল উপযোগী হবে তা নিশ্চিত করতে পারছেন না। নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ শামীম আল মামুন জানিয়েছেন আমরা এখনো বেইলি পাইনি। বেইলি পাওয়ামাত্র সংস্কার কাজ শুরু হবে। তা ছাড়া ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ দল আসার কথা রয়েছে। তাদের নির্দেশনা অনুসারেই কাজ হবে। এদিকে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি মঙ্গলবারই মোট ৬০ মিটার সিঙ্গেল-সিঙ্গেল মেবি জনসন বা অন্য কোনো প্রকার বেইলি সরবরাহ করার জন্য সড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে ‘অতীব জরুরি’ চিঠি পাঠিয়েছেন সড়কের কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। এতে বলা হয় সেতুর স্ট্রাকচার ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় এর পঞ্চম স্পেনের ওপর ৩০ মিটারের দুটি বেইলি স্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা থেকে সিলেট প্রান্ত অভিমুখে সেতুটির ৪র্থ স্পেনের পূর্ব পাশের ক্যান্টিলিভার অবস্থায় নির্মিত ফুটপাত রেলিংসহ ভেঙ্গে পড়েছে। এই চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয় পুরাতন সেতুটির পাশেই নতুন একটি সেতু নির্মাণাধীন। যার কাজ ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। আগামী জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে নতুন সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। তিতাস নদীর ওপর ১৯৬৩ সালে নির্মিত শাহবাজপুর সেতুর (পুরাতন) মাঝখানে বেইলি সেতু বসিয়ে কোনো রকমে যান চলাচল স্বভাবিক রাখা হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরে। মাঝে-মধ্যেই বেইলি সেতুতে ওঠার সময় চাকা দেবে গিয়ে যানবাহন আটকে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সওজ বিভাগ সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে সেতুর দুই পাশে ১৫ টনের অধিক ওজনের যানবাহন চলাচল নিষেধ করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়। তবে তাদের এই নির্দেশনা না মেনে প্রতিনিয়তই ১৫ টনের অধিক যানবাহন চলাচল করেছে এই সেতু দিয়ে। সরাইল প্রতিনিধি জানান- সরাইল হয়ে মহাসড়কের যানবাহন চলাচল করার কারণে সরাইলের বিভিন্ন স্থানে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় যানবাহন চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে সরাইল প্রবেশমুখে কুট্টাপাড়া সেতু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে আরো অনেক আগে থেকেই। সেতুটি মহাসড়কের যানবাহনের চাপ সামলানোর উপযোগী নয় বলেই জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা। ১২/১৫ ফুট পাশ আঞ্চলিক এই সড়ক দিয়ে ব্যাপক যানবাহনের চলাচল এরই মধ্যে নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। একদিনেই সড়কের অনেকস্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। নাসিরনগরেও সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। অন্যদিকে চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক দিয়ে মহাসড়কের যানবাহন চলাচল করায় এই সড়কেরও বিভিন্নস্থানে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তবে বিশ্বরোড খাটিহাতা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ওসি হোসেন সরকার জানিয়েছেন বিকল্প পথে গাড়ি চলাচলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
  • মাধবপুর-নাসিরনগর আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে চলছে যাত্রীবাহী বাস
    এদিকে মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা সিলেট মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ শাহবাজপুর ব্রিজ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় সিলেট থেকে কোনো যাত্রীবাহী বাস এবং পণ্যবাহী ট্রাক সরাসরি ঢাকায় যাচ্ছে না। এতে করে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে মাধবপুর পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রয়েছে। তবে স্বল্প পরিসরে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস মাধবপুর উপজেলার রতনপুর থেকে নাসিরনগর আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিশ্বরোড হয়ে ঢাকা যাচ্ছে। তবে রাস্তা সরু হওয়ায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়ে যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাইওয়ে পুলিশ, মাধবপুর থানা পুলিশ ও ট্রাফিক জোনের পুলিশ কাজ করছে। ট্রাফিক জোনের পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত থেকেই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানবাহন আটকা পড়ে। সকালে ছাতিয়াইন রতনপুর, নাসিরনগর আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
শেয়ার করুন