তক্ষকসহ পাঁচ পাচারচক্রের সদস্য আটক

  • সাইফুল ইসলাম.
    মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পৌর শহরের শান্তিবাগ এলাকায় একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তক্ষকসহ পাচারচক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে থানা পুলিশ।
    শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো.আব্দুস ছালেক সোমবার বিকেলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানিয়েছেন।
    তিনি জানান,রবিবার সন্ধ্যা রাতে শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের ৮নং ওয়ার্ডের শান্তিবাগ আবাসিক এলাকার সালাম বাবুচির বসতঘর হইতে হাতেনাতে তক্ষকসহ ওই ৫ চক্রকে আটক করা হয়।
    ৮জুলাই সোমবার বিকেলে তাদের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষন আইনে থানায় মামলা রুজু হয়েছে। আটককৃতদের বিকেলে মৌলভীবাজার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তক্ষকটিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেটি বর্ষিজোড়া ইকোপার্কে অবমুক্ত করা হবে।
    আটককৃত হলেন,হবিগঞ্জ জেলার বাহবল উপজেলার আলুয়া গ্রামের মো. আবদাল মিয়ার ছেলে মো. মোশাহিদ মিয়া (৩৫), হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি গ্রামের শামসুল হকের ছেলে মো. আলী হাসান মাসুক (৩০), একই উপজেলার আব্দাবহাই গ্রামের মো. ইসমাইল মিয়ার ছেলে মো. আফরোজ মিয়া (৩৫), শ্রীমঙ্গল শহরের শান্তিবাগ এলাকার আকবর উল্ল্যার ছেলে মো. আব্দুল ছালাম (৫৫), হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুরাবই গ্রামের আরফিন মিয়ার ছেলে মো. কাউছার মিয়া (২৪)।
    ওসি আব্দুস ছালেক বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপ-পরিদর্শক অনিক বড়–য়া,সহকারী উপ-পরিদর্শক সাকির হোসেন ও ইমাম হোসাইনসহ সর্ঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে শান্তিবাগ আবাসিক এলাকার সালাম বাবুচির বাসা থেকে ২২০ গ্রাম ওজনের একটি তক্ষকসহ ৫ পাচারীকে হাতেনাতে আটক করা হয়। তারা তক্ষকটিকে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সিলেটের এক চক্রের কাছে বিক্রির উদ্দ্যেশে শ্রীমঙ্গলে নিয়ে এসেছিল। তাদের মধ্যে পাচারকারী চক্রের মূল হোতা কাউছার মিয়া জানিয়েছে,তক্ষকটির বর্তমান বাজারমূল্য ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা হবে।’
  • প্রসঙ্গত. এর আগেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র‌্যাব-৯, শ্রীমঙ্গল শহরে ২০১৭ সালে ১৭ জানুয়ারী চারপাচারকারীকে তক্ষকসহ আটক করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তক্ষক পাচারকারী ৪ জনকে তৎক্ষণাৎ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়।
    জরিমানা প্রাপ্তরা হলেন- ঝিনাইদহ সদরের শহীদ মশিউর রহমান সড়কের (টিএনটি পাড়া) মৃত ডা. নঈমুদ্দিন আহমেদের ছেলে মোজ্জাদ্দেদ হাসান আমুল (৪০), ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের মৃত আয়াত উল্লাহের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৪০)।
    শ্রীমঙ্গল উপজেলার বরুণা-হাজিপুর এলাকার মৃত ডা. ফজলুল করিমের ছেলে লিটন আহম্মদ (৩৮) এবং মাইজদিহি চা বাগানের মৃত রাধা প্রসাদ বাউরির ছেলে সুনীল বাউরি (৫৫)।
    ওই দিন আমুল ও সিরাজুল নামে দুই ব্যক্তি তক্ষক সংগ্রহের লোভে পৌর শহরের মৌলভীবাজার রোডে অবস্থিত ‘গ্র্যান্ড শ্রীমঙ্গল’ হোটেলে অবস্থান নেন। তারা ‘ইনফর্মার’ হিসেবে বরুণা-হাজিপুর এলাকার লিটনকে কাজে লাগান। তাদের সঙ্গে ছিলো তক্ষক মাপার স্প্রিং নিকতি, ওজন মাপার যন্ত্র, ফিতা ইত্যাদি।
    বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বন্যপ্রাণী পাচারের অভিযোগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৯ ক্যাম্পের সদস্যরা আমুল, সিরাজুল ও লিটনকে আটক করে র‌্যাব অফিসে নিয়ে আসে। পরে লিটককে সঙ্গে নিয়ে র‌্যাব সাদাপোশাকে ক্রেতা সেজে মাইজদিহি চা বাগানের সুনীলের কাছে গিয়ে তার কাছে থাকা দু’টি তক্ষকসহ তাকে আটক করে।
    ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল হক বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর ছয় ধারাতে অপরাধ এবং ৩৯ ধারাতে শাস্তিস্বরূপ অপরাধীদের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
    তবে অপরাধীদের কাছ থেকে জানা গেছে, কোনো তক্ষক ১৭ ইঞ্চি বা এর বেশি হলেই এক হাজার কোটি টাকা পাওয়া যায়। আর এর লোভেই তারা গোপনে তক্ষক সংগ্রহ করে চীন দেশে পাচার করছেন। চীনে নাকি ক্যানসারের প্রতিষেধক তৈরির কাজে এটি ব্যবহার করা হয়। তবে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই বলে জানি।
    তারা আরও জানান, রাজধানীতে আহাদ নামে এক লোকের পক্ষে কাজ করেন আমুল ও সিরাজুল। তারা তক্ষক সংগ্রহের জন্য শ্রীমঙ্গলে অবস্থান করে স্থানীয় লিটনের সহযোগিতায় এই অবৈধ কাজটি করার চেষ্টা চালান।

শেয়ার করুন