কিশোরীর মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল, স্থানীয়দের দাবি হত্যা

  • কুলাউড়া প্রতিনিধি :
  • কুলাউড়ার বরমচাল কালামিয়াবাজারের একটি বাসায় প্রেমিকের সাথে গোপনে দেখা করতে যায় স্কুল ড্রেস পরিহিত কুলসুমা বেগম তাসলিমা (১৭) নামের এক কিশোরী। এসময় স্থানীয় গ্রাম পুলিশসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রেমিক যুগলকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। পরিচয় নিশ্চিত হয়ে গ্রামপুলিশের মারফতে মেয়েটিকে তাঁর পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেন স্থানীয়রা। প্রেমিক স্থানীয় নও মুসলিম আব্দুল আজিজ।
  • ওই দিন বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) বিকালে হঠাৎ একটি সিএনজি অটোরিক্সা যোগে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। রাতে একটি অ্যাম্বুলেন্স যোগে তসলিমার মৃতদেহ নিয়ে আসেন তাঁরা। স্থানীয়দের জানানো হয়, তাসলিমা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ (স্ট্রোক করে) হয়ে মারা গেছে। পরেরদিন শুক্রবার (৬ জুলাই) এলাকায় মাইকিং করে সকাল ১১ টায় দাফন করা হয়। ঘটনাটি রহস্যজনক মনে হলেও স্থানীয়রা কিছু বোঝে ওঠার আগেই দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
  • এদিকে পরিবারের দাবি তাসলিমার মৃত্যু হৃদরোগ জনিত উল্লেখ হলেও স্থানীয়রা তা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তাই ঘটনার ৭ দিন অতিবাহিত হলেও এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও তোলপাড় চলছে। স্থানীয়দের দাবি-প্রেমঘটিত কারণে পরিবারের লোকজনের হাতে নির্মমমভাবে মৃত্যু হয়েছে স্কুলছাত্রীর।
  • উপজেলার বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী তাসলিমা। জন্ম নিবন্ধন অনুসারে তার জন্ম তারিখ ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি।
  • স্থানীয় লোকজন জানান, গত ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক ১১টায় স্কুল ড্রেস পরিহিত ও স্কুলব্যাগসহ তাসলিমা বরমচাল রেলস্টেশন সংলগ্ন কালামিয়ার বাজারের একটি বাসায় প্রেমিক নও মুসলিম আব্দুল আজিজের সাথে দেখা করতে যায়। বিষয়টি বাজারবাসীর সন্দেহ হলে গ্রামপুলিশ কয়ছর মিয়াসহ ব্যবসায়ীরা ওই বাসায় যান। বাসায় গিয়ে ওই স্কুল ছাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত করার পর ব্যবসায়ীরা গ্রামপুলিশ কয়ছর মিয়াকে দিয়ে তাসলিমাকে মহলাল (রফিনগর) গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
  • মহলাল (রফিনগর) গ্রামের লোকজন জানান, সকালের ঘটনার পর বিকাল আনুমানিক ৫টায় একটি সিএনজি অটোরিক্সায় করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ির লোকজন তাসলিমাকে নিয়ে বেরিয়ে যান। রাতে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আবার ফেরৎ আসেন। আসার পর এলাকার মানুষকে জানান তাসলিমার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ (স্ট্রোক করে) হয়ে মারা গেছেন। পরদিন শুক্রবার এলাকায় মাইকিং করে সকাল ১১ টায় দাফন করা হয়।
  • স্থানীয় লোকজনের দাবি, লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়া এবং পুলিশকে অবহিত না করে তাসলিমার লাশ দাফন করা হয়।
  • তাসলিমার লাশ দেখা মহিলারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাসলিমার গালে একটা আচড় ও গলায় আঙ্গুল দেবে যাওয়ার চিহ্ন সুস্পষ্ট ছিলো। লাশের ময়না তদন্ত হলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তাসলিমার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হবে বলে ওই মহিলারা জানান।
  • নও মুসলিম আব্দুল আজিজ (মুসলিম হওয়ার আগের নাম লিটন দাস) এর সাথে দেখা করা প্রসঙ্গে জানান, তিনি পেশায় কাঠমিস্ত্রী। কাজের সুবাদে তাসলিমাদের বাড়িতে যাতায়াত এবং ঘনিষ্টতা। সেই সুবাদে গত ২ বছর থেকে তাসলিমার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আব্দুল আজিজের সাথে তাসলিমাদের পরিবারের সদস্যদের সখ্যতা গড়ে উঠে। তাসলিমার প্রেমে আসক্ত হয়ে আব্দুল আজিজ ৬ মাস আগে অর্থাৎ গত মাঘ মাসে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হন। তাসলিমার মা মারা যাওয়ার আগে ৪দিন উনার সাথে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে সার্বক্ষণিক ছিলেন। তাসলিমার বাবা জহুর উদ্দিন স্ত্রীর মৃত্যুর পর দেশে ফিরে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে আব্দুল আজিজ তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। চিকিৎসা ব্যয়ভারও বহন করেন। তার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা ধার নিয়েছে তাসলিমার পরিবার। তাসলিমার সাথে আব্দুল আজিজের সম্পর্কের বিষয়টি জেনে জহুর উদ্দিন দু’জনকে মারপিটও করেন। এরপর থেকে উভয়ের দেখা সাক্ষাৎ কমে যাওয়ায় ঘটনার দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার তাসলিমা বাজারে আসে আব্দুল আজিজের সাথে দেখা করতে।
  • এদিকে তাসলিমার মৃত্যুর পর হতাশ আব্দুল আজিজ জানান, আমি হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছি তাসলিমার জন্য। তাসলিমার পরিবার খুবই উগ্র। এতে তিনি খুব আতঙ্কে আছেন। তবে তসলিমার বড় বোন ও ভাই হাবিবুর রহমান রাহাতকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেই মৃত্যুর আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
  • বরমচাল ইউনিয়নের গ্রামপুলিশ কয়ছর মিয়া জানান, কালামিয়ার বাজারে পাশে আব্দুল আজিজের ভাড়াটিয়া বাসায় তাসলিমাকে পাওয়ার পর তার চাচা জয়নাল মিয়াকে ফোন দেই। তিনি তাসলিমাকে বাড়িতে নিয়ে দেয়ার কথা বলেন। আমি তাসলিমাকে বাড়িতে দিয়ে আসি। কিন্তু বিকালে শুনি তাসলিমা স্ট্রোক করে মারা গেছে। এটা কি করে সম্ভব?
  • বরমচাল কালামিয়া বাজারের সাধারণ সম্পাদক মাছুম আহমদ চৌধুরী বাজারের পাশের বাসা থেকে তাসলিমাকে উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মেয়েটিকে গ্রামপুলিশ কয়ছর মিয়াকে দিয়ে তার বাড়িতে পাঠিয়েছি।
  • বরমচাল ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মহলাল এলাকার মেম্বার ফখরুল ইসলাম জানান, ঘটনার দিন আমি সিলেট ছিলাম। রাতে ফোন দিয়ে তাসলিমার পরিবার মৃত্যুর বিষয়টি তাকে জানায়। পরদিন সকাল ১১টায় তিনি জানাযায় অংশ নেন। পরে লোকমুখে তিনি মৃত্যু নিয়ে নানা কথা জানতে পারেন।
  • নিহত তাসলিমার বাবা জহুর উদ্দিন জানান, ঘটনার দিন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। বাড়িতে ফিরে মেয়েকে অসুস্থ্য অবস্থায় বৃহস্পতিবার আছরের পর ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে একঘন্টা পর তাসলিমার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর ২-৩দিন পর পুলিশ বাড়িতে এসেছিলো। বৃহস্পতিবারে কালামিয়ার বাজারে কি ঘটেছে, তা তিনি জানেন না।
  • এব্যাপারে কুলাউড়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত সব সধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শেয়ার করুন