- সাইফুল ইসলাম.
শুক্রবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলায় কোথাও কোথাও এবং উজানে বৃষ্টি হওয়ার কারণে মনু নদী ও ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে।
এতে সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোণা জামে মসজিদের পাশে, দাউদপুর সড়কে মধ্যেস্থল, ব্রাহ্মণগ্রাম এলাকায় কুশিয়ারা নদীর বাঁধে ভাঙন দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
সদর উপজেলার ১নং খলিলপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান অরবিন্দ পোদ্দার বাচ্চু বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় বালু ভর্তি বস্তা ফেলে পানি আটকানো যায়নি। এতে হামরকোণা, দাউদপুর, ব্রাহ্মণগ্রামসহ প্রায় প্রায় তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী রবিবার সন্ধ্যায় বলেন,মনু নদী মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাট ব্রিজ এলাকায় বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদী বিপদসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার।শেরপুর কুশিয়ার নদীর পানি ৫০ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে।’ তিনি আরও বলেন, শেরপুওে কুশিয়ারার বাঁধ ভাঙন দেখা দিলে সেখানে বাঁধ রক্ষায় ৪ হাজার বস্তা বালু পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই দুটি নদীর চিহ্নিত করা ৩৬টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধগুলো মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কোথাও কোথাও পুরো বাঁধের তিনভাগই ভেঙে গেছে পানির তীব্র ¯্রােতে। যেকোন সময় পানির তীব্র ¯্রােতে এসব বাঁধের কোথাও ভেঙে বন্যার সৃষ্ঠি হতে পারে।
অপরদিকে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সকল আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে সংষ্কার করে রাখতে ইউএনও দেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গত শুক্রবার দিবাগত রাতে কমলগঞ্জ উপজেলার পৌরসভার রামপাশা এলাকায় ধলাই নদীর বাঁধ ভাঙনের কবলে পড়া বাড়িঘর ও ফসলি জমি থেকে শনিবার সন্ধ্যা থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করে। কিন্তু উজানে বৃষ্টি হওয়ার কারণে রবিবার সকাল থেকেই পানি বেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছেন, কমলগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ফখরুল ইসলাম। রবিবার বিকালে নতুন করে আদমপুর ইউনিয়নের হকতিয়ারখলার উত্তর ও দক্ষিন পল্লীতে ২টি ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করছে।
ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের নতুন ও পুরাতন তিনটি ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করে কমলগঞ্জ পৌরসভা, রহিমপুর ও ইসলামপুর ও আদমপুরের ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তিনশত পরিবার পানি বন্দি রয়েছেন। জেলা প্রশাসন বন্যাকবলিত মানুষের মধে দুইশত প্যাকেট শুকনো খাবার ও ২ মে্িট্রক টন চাল বরাদ্ধ করা হয়েছে।
তবে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কয়েকটি ঝুকিপুর্ণ স্থানে ভাঙ্গনের আশংকা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্যমতে পানিতে ডুবে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ৮ হেক্টর ও কমলগঞ্জ উপজেলায় ১২৫ হেক্টর আউশ ধান ও সদর উপজেলার মনুমুখ ইউনিয়নের ৭ হেক্টর আমনের চারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক কাজী লৎফুল বারী জানান, এবছর মৌলভীবাজার জেলায় ৫৩ হাজার ১০ হেক্টর আউশ ধান আবাদ হয়েছে। এপর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১৪০ হেক্টর ধান ও চারা। রবিবার থেকে ধানের জমির পানি কমছে বলে জানান।
মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক জানান জেলার কমলগঞ্জ ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ২৩ টি পুকুর, ৩ হেক্টর মাছের আবাদের প্রায় ৫ দশমিক ৯ মেট্রিকটন মাছ বানের পানিতে ভেঁসে যায়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা।’
মৌলভীবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকমোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান জানান, সদর উপজেলায় ইউএনও ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে ১নং খলিলপুর ইউনিয়নের ৫টি গ্রামে পানি প্রবেশ করায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মধ্যে ২০০ প্যাকেট শুকনা খাবার ও দুই হাজার মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। তবে পানি না কমা পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে।’
মৌলভীবাজার মনু ও ধলাই নদীর পানি বিপদ সীমার উপর বইছে কুশিয়ারার বাঁধ ভাঙনে খলিলপুর ইউনিয়নের তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী
শেয়ার করুন