মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, মালয়েশিয়া থেকেঃ
বাংলাদেশের শ্রম বাজার বন্ধ থাকায় বিভিন্নভাবে মালয়েশিয়া প্রবেশ করেছেন প্রায় কয়েক লাখ প্রবাসী বা বিভিন্ন কারণে অবৈধ হিসেবে কাজ করেছেন মালয়েশিয়া নিয়মিত অভিযান চালালেও অবৈধ অভিবাসীদের বিরাট অংশ রয়ে গেছে মালয়েশিয়ার অভিবাসন পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে নতুন কৌশল নিয়েছে নিয়েছে দেশটির সরকার। সাধারণ ক্ষমার আওতায় স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে ৫ মাসের সুযোগ দিচ্ছে দেশটি।এর পরে অবৈধদের ধরতে কঠোর অভিযান চালাবে দেশটির পুলিশ।
অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফিরতে দেওয়া মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ মুনিরুছ ছালেহীন। এর মধ্য দিয়ে পুলিশের হাতে আটক ও কারাগারে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবেন অভিবাসীরা।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন বিন মোহাম্মদ ইয়াসিনের স্বাক্ষরিত এক ঘোষণায় গতকাল বৃহস্পতিবার বলা হয়েছে, আগামী ১ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুযোগ পাবেন অবৈধ অভিবাসীরা। মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের আওতায় দেশজুড়ে বা প্রতিটি জেলাতে ৮০ টি কাউন্টার খোলা হবে। অবৈধ ব্যক্তিদের সরাসরি অভিবাসন কার্যালয়ের কাউন্টারে উপস্থিত হয়ে আবেদন করতে হবে। যাদের কাছে পাসপোর্ট নেই, তারা ট্রাভেল পাস নিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন। প্রতি অভিবাসীকে ৭ হাজার রিঙ্গিত (১৪ হাজার টাকা) পরিশোধ করতে হবে। প্রতারণা থেকে সাবধান হতে এবং যে কোনো এজেন্ট বা দালালের সঙ্গে টাকা লেনদেন না করতে সতর্ক করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন দেশের ২০ থেকে ৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসী আছে বলে মনে করছে অভিবাসন খাত নিয়ে কাজ করা এশিয়ার ২০টি দেশের আঞ্চলিক সংগঠন ক্যারাম এশিয়া।তবে বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসীর সঠিক কোনো চিত্র পাওয়া যায়নি।মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রমবিভাগ বলছে, এটি কয়েক হাজার হতে পারে।যদিও এটি নাকচ করে দিয়েছেন অভিবাসন খাতে কাজ করা দেশের উন্নয়ন সংস্থা ও ব্যবসায়ীরা।তারা বলছেন, দেড় থেকে দুই লাখ অবৈধ অভিবাসী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে দেশটিতে।যদিও গত মার্চে বেসরকারি খাতে অভিবাসন বিষয়ক সংসদীয় একটি প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়া সফরে গিয়েছিল। দেশে ফিরে প্রতিনিধি দলটি জানায়, মালয়েশিয়ায় প্রায় ছয় লাখ কর্মী অবৈধ অবস্থায় আছেন।
বিমানবন্দর, বাংলাদেশ পুলিশ ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক দশকে মালয়েশিয়া থেকে ৮০ হাজারের বেশি কর্মী শূন্য হাতে দেশে ফিরে এসেছেন। গত ৬ মাসে ট্রাভেল পাস (টিপি) নিয়ে দেশে ফিরেছেন প্রায় আড়াই হাজার অভিবাসী।
নানা কারণে অবৈধ হয়ে পড়া অভিবাসীদের কালো তালিকাভুক্ত করে দেশে ফেরত পাঠাতে চেয়েছিল মালয়েশিয়ার সরকার। এ তালিকা করা হলে আর কখনো মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পেতেন না ফিরে আসা অভিবাসীরা। গত মে মাসে দুই দেশের যৌথ কমিটির সভায়, সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি তোলে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। সাধারণ ক্ষমার আওতায় ফিরে এলেও পরে আবার বৈধভাবে যাওয়ার সুযোগ পাবেন অভিবাসীরা।
এ বিষয়ে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত বা কালো (ব্লক লিস্ট) তালিকাভুক্ত করে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল, তা করা হয়নি। এটা অবশ্যই ইতিবাচক এখানে অবৈধ অভিবাসন দেশের জনশক্তি রপ্তানির জন্য নেতিবাচক।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বৈধভাবে কাজ নিয়ে মালয়েশিয়া গেছেন সাড়ে ১০ লাখ বাংলাদেশি।নানা অনিয়মের কারণে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এ শ্রমবাজারটি বন্ধ আছে।