ছোট বেলায় দেখতাম আমাদের বাড়িতে এক মহিলা ছিড়া কাপড় পড়ে নিয়মিত ‘ভিক্ষা’
নিতে আসতেন। তাকে গ্রামের সবাই ‘মাজরঘরি’ বলে ডাকতেন। সহজ-সরল ‘মাজরঘরি’
শুধু দু‘মুঠো খাবার যোগানোর জন্য গ্রামের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে
ছুঠে বেড়াতেন ‘ভিক্ষা’র ঝুলি নিয়ে। তার একটা বড় গুন ছিল সবাইকে খুশি করে
ভালবাসা দিয়ে তিনি ভিক্ষা বা সাহায্য নিতেন। কারো ঘরে ভিক্ষা চেয়েই তিনি
বলতেন, ‘আমি একটা ‘গীত’ (গান) হুনাইমুনে আমারে ভিক্ষা দিবায়নি ?’ আবার
অনেকে ‘মাজরঘরি’কে দেখলেই মজা করে বলতেন, ‘আগে গীত হুনানি লাগব ভিক্ষা
নিতে অইলে।’ তিনি তখন গীত শুনাতেন। তবে সবচেয়ে বেশি যে গীতটি তিনি
শুনাতেন সেটি এরকম ‘ট্যাকা পয়সা জমিদারী-পাইছইন সুন্দর নারী-কিছুই সাথে
যাবে না. . . .।’ হঠাৎ একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে শুনি সবাই আলোচনা
করছেন সেই ‘মাজরঘরি’ আর নেই, তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আমি সেসময় একটা বিষয়
খুব অনুভব করলাম সবাই ‘মাজরঘরি’র জন্য যতটা না হায়-আফসোস করছেন তার চেয়ে
বেশি আফসোস করছেন তার গীত যে আর শুনতে পারবেন না সেজন্য। আমি প্রাইমারির
ছাত্র হলেও তখন বুজেছিলাম ‘মাজরঘরি’কে নয় তার গীত গাওয়ার গুনের জন্যেই
হায়-আফসোস করছে সবাই। ‘মাজরঘরি’ ভিক্ষা বা সাহায্য নিতেন বটে তবে কাউকে
বিরক্ত করে নয়, বরং গীত শুনিয়ে সবাইকে খুশি করে ভালবাসার বিনিময়ে।আমাদের বাড়িতে এক প্রতিবদ্ধী হুজুর থাকতেন। হুজুরের একটি পা চিকন (সরু)
থাকায় এক পায়ে ভর করে তিনি হাঁটতেন। উনার বাড়ি ছিল কুমিল্লার লাঙ্গলকুট
এলাকায়। তিনি বছরে এক/দু’বার বাড়ি যেতেন কয়েক দিনের জন্য। বাকী সময়টুকু
কাটাতেন আমাদের এলাকাতেই। প্রায় ত্রিশ/পয়ত্রিশ বছর যাবত হুজুর আমাদের
গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে বসবাস করায় গ্রামের সবার কাছে ‘লেংরামুন্সি’ নামে
পরিচিত ছিলেন। ছোট বাচ্ছাদের অসুখ-বিসুখ হলে ‘লেংরামুন্সি’র কাছ থেকে
পানি, তেল পড়া নিতেন গ্রামের সবাই। আবার গ্রামের কারো বাড়িতে নবজাতক
জন্মের সংবাদ পেলে তিনি নিজেই ছুটে যেতেন ওই বাড়িতে পানি-তেল পড়া, তাবিজ
আর ঝাড়-ফোঁক দিতে। অবশ্য এর বিনিময়ে কিছু নগদ অর্থকরী পেতেন। আমরা উনার
কাছ থেকে আরবী শিক্ষা নিতাম প্রতিদিন সকাল বেলা। অন্য সময়টুকু তিনি
কাটাতেন ধান্ধা-ফিকিরের আশায়। উনার ফিকিরটি অবশ্য ছিল একটু ভিন্ন। তিনি
কথা বলার সময় হঠাৎ বলতেন, ‘বাহুরে বাহহু বাড়িতে ট্যাহা পাঠানোর দরহার
ছিল, ভিক্ষা-টিক্কা হরে আর হতদিন চলুম ? তা..লে দেওনা বিশ ট্যাহা, পানি
পড়া-ঠরা লাগলে দিমুনে।’ হুজুরের এসব কথা বলার মধ্যে একটা ভালবাসার ছোঁয়া
পাওয়া যেত। কখনও হুজুরের কথায় কাউকে বিরক্ত হতে দেখিনি। সবাই খুশি মনে
দশ/পাঁচ টাকা দিতেন। আবার গ্রামের অনেকেই দাওয়াত করিয়ে ভাল-মন্দ খাবার
খাওনোর পর কিছু দান-খয়রাত করতেন। এসবের মধ্যেই হুজুরের একটা সন্তুষ্টি
দেখতাম । কখনও শুনিনি নিজের অনেক ধন-সম্পদ আর টাকা-পয়সার জন্য আল্লাহর
কাছে চাইতে। তবে যারা দান-খয়রাত করতেন তাদের সুখ-শান্তি আর ধন-সম্পদের
জন্য আল্লাহর দরবারে বলতে কখনও কারপন্য করেননি তিনি। ১৯৯৬ সালে আমি কলেজে
পড়া অবস্থায় আমরা পাঁচ ভাই আর আব্বা-আম্মা শহরে আসি। এর বছর খানেক পর
তিনি আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে অনত্র চলে যান। তবে তিনি মাঝে মধ্যে
আমাদের বাসায় আসতেন। বিশেষ করে বাড়িতে (কুমিল্লা) আসা-যাওয়ার সময়। তিনি
সব সময় চট্টগ্রামের মেইল গাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন স্বল্প ভাড়া দিয়ে। হঠাৎ
শুনি একদিন তিনিও আর দুনিয়াতে নেই।আমার দোখানে বেশ কয়েক বছর ধরে এক ভিক্ষুক ভিক্ষা নিতে আসতেন। হাতে কয়েকটা
দশ-পাঁচ আর দুই টাকার নোট থাকতো। এসেই তিনি বলতেন, ‘দাদা আমার মেয়ের বিয়া
লাগাইছি আমারে কিছু সাহায্য দেইন।’ কবে বিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি ফাল্গুন
মাসের নাম বলতেন। এমন কি তিনি মাঘ মাসে এসেও ফাল্গুন আবার চৈত্র মাসে
এসেও ফাল্গুন মাসের নামই উল্লেখ করতেন। মিথ্যা কথা বলে সমাজে সাহায্য
চাওয়া অন্যায় হলেও তিনি হয়তো মনে করতেন তার এই মিথ্যা কথা বলাটা কেউ
বুঝেনি। ভিক্ষুক লোকটি জানিয়েছিল, তার বাড়ি শ্রীমঙ্গলের রাধানগর এলাকায়।
মেয়ের বিয়ের জন্য নয় এমনিতেই কিছু সাহায্য দিয়ে উপদেশ দিতাম এভাবে মিথ্যা
কথা না বলতে। তিনি মুচকি হেসে বলতেন, ‘ভিক্ষা চাইলে লোকজন দিতে চায় না
দাদা তাই. . .।’ লোকটির এই কথার মধ্যে একটা আবেগ দারুনভাবে কাজ করতো তাই
কখনও খালি হাতে ফেরত দেইনি। তিনি চাইলে এই পেশা ছেড়ে অন্য কিছু করতে
পারতেন। কিন্তু টাকা উপার্জনের সহজ উপায় মনে করে হয়তোবা তিনি এটি ত্যাগ
করতে পারেননি। আজ বেশ কিছু দিন যাবত উনাকে আর দেখিনি, জানি না সেই
মিথ্যুক ভিক্ষুকটি দুনিয়াতে বেঁচে আছে কি না।প্রায় এক যুগ আগে আমার এক মামাত্ব ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে চট্রগ্রামের
পটিয়ার মৌলভীরহাটে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার ছোট মামা
(ডা: মামা) একটু বেশিই পীর ভক্ত ছিলেন। আমরা যে বাড়িতে গিয়েছিলাম সেটাও
মৌলভীহাটের মোল্লাবাড়ী নামে পরিচিত। অনেকের মুখ থেকে আবার পীরের বাড়ি
বলতে শুনেছি। আর আমাদেরকে পাঠিয়েছিলেন সেই ছোট মামাই একটা কাজে। হঠাৎ
মামাত্ব ভাই আমার কাছে জানতে চাইলো কক্সবাজার কতো দূরে। তার জানতে চাওয়ার
মাঝে এক ধরনের রহস্য খুঁজে পেলাম। আমিও সোজা সাপ্টা বলে দিলাম তুই যেতে
চাস কি না সরাসরি বল। সে মৃদু হেসে বলল, ‘ভাই চলেন সকালে যাব আর বিকেলে
চলে আসব।’ পরের দিন সকাল বেলা নাস্তা করে রওয়ানা দিয়ে ঘন্টা দু’য়ের মধ্যে
আমরা কক্সবাজার পৌঁছি। সমুদ্র সৈকত উপভোগ করার পর ফিরে আসার সময় বাসে
পানজাবী টুপি পড়া এক ভদ্র লোক হাতে কিছু কাগজপত্র নিয়ে আঞ্চলিক ভাষায়
বলতে লাগলেন, ‘দান হরলে আল্লা দিব, দান হরলে আল্লা দিব, হেশি হেশি দান
হরেন’। লোকটি এত দ্রুত কথাগুলো বলছিল যে আমি তার কথাগুলো বুজতেই পারিনি।
মামাত্ব ছোট ভাইকে জিজ্ঞেস করলে সে আমাকে বুজিয়ে বলল লোকটি ভিক্ষা চাচ্ছে
‘দান করলে আল্লাহ দিব, দান করলে আল্লাহ দিব, বেশি বেশি দান করেন’ এই বলে।
সেদিন তাকে কিছু টাকা দান করেছিলাম। এর ফলে তিনি যে একটা সুরেলা কন্ঠে
মোনাজাত করেছিলেন যেটা আজও হৃদয়ে দারুনভাবে নাড়া দেয়। লোকটি যে ভাষায়ই
বলুক তার কথার মধ্যে হৃদয় স্পর্শ করার মতো একটা ভাব ও সুর ছিল।গত কয়েক বছর আগে হঠাৎ একদিন বঙ্গকবি লুৎফুর রহমান আমাকে মুটোফোনে বললেন,
‘রকিব তুমি রেডি হও, আমরা কয়েকজন আইরাম সাইদ ভাইর লাগি সাহায্য তুলতাম।’
সাইদ ভাইর পূরো নাম সাইদুর রহমান। তিনি জাতীয় দৈনিক ইনকিলাবের শ্রীমঙ্গল
উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন। জানিনা শ্রীমঙ্গলবাসী সাইদ ভাইকে মনে রেখেছেন কি
না। তিনি শ্রীমঙ্গল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। সাইদ
ভাইর কিছু রিপোর্টে শ্রীমঙ্গলে বেশ কয়েকবার তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল।
দোষে-গুণেই মানুষ, কিন্তু আমার দেখা মতে তিনি একজন সাহসী সাংবাদিক ছিলেন।
তিনি ছিলেন, খুব ভাল একজন আর্ট শিল্পী। তখন ডিজিটাল ব্যানারের প্রছলন ছিল
না। বিভিন্ন সভা সমাবেশের ব্যানার আর দোকানের সাইনবোর্ড এর জন্য উনার খুব
নাম-ঢাক ছিল। তিনি শ্রীমঙ্গল চারুকলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। আমি
তখন শ্রীমঙ্গল রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বে। বলতে গেলে
সাংবাদিকতা জগতের অনেক কিছু শিখেছি আমি সাইদ ভাইর কাছ থেকে। যাই হোক,
কিছু সময়ের মধ্যেই কবি লুৎফুর রহমান একটা ছোট্ট পিকআপ গাড়িতে মাইক আর
স্পিকার নিয়ে হাজির, সাথে আরো ৪/৫জন সেচ্ছাসেবী। স্টেশন রোড থেকে গাড়িতে
উঠে শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে চৌমূহনা আসার পর আমাদের সাথে যোগ দেন অধ্যাপক
সৈয়দ মুজিবুর রহমান স্যার। স্যারের কন্ঠে শুরু হলো জনসাধারনের দৃষ্টি
আকর্ষনের পালা। আমরা সাহায্যের আবেদন করছিলাম এভাবে- ‘মরন ব্যাধি
ক্যান্সার আক্রান্ত সাংবাদিক সাইদুর রহমান বাঁচতে চায়, যে যা পারেন
সাহায্যের হাত বাড়ান।’ কিন্তু মুজিব স্যার একসময় আবেগপ্রবণ হবে বলতে শুরু
করলেন, ‘আমরা সাইদুর রহমানের জন্য আপনাদের কাছে ‘ভিক্ষা’ চাচ্ছি, যার যার
অবস্থানুযায়ী সাহায্যের হাত প্রসারিত করুন।’ স্যারের কন্ঠে এমন আবেদন
শুনে সেদিন শহরের ব্যবসায়ী, পথচারী থেকে শুরু করে সাধারন জনসাধারন
শতস্ফূর্তভাবে আমাদেরকে সাইদ ভাইর জন্য ‘ভিক্ষা’ দিয়েছিলেন। কিন্তু
তারপরও সহকর্মী সাংবাদিক সাইদুর রহমানকে আমরা বাঁচাতে পারিনি।সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত)
সারোয়ার মো. সাইফুল্লাহ খালেদ স্যারের একটি কলাম পড়ছিলাম। স্যারের লেখাটি
যতই পড়ছিলাম ততোই মুগ্ধ হচ্ছিলাম। লেখাটির উল্ল্যেখযোগ্য কিছু অংশ
শুভাকাঙ্খিদের জন্য তুলে ধরলাম। তিনি বলছিলেন, বাস্তবতা হচ্ছে- প্লেনে
চড়েও অনুন্নত দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিরা ধনী দেশে ‘ভিক্ষা’র
জন্য ধরনা দেন। বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান
বলেছিলেন, ‘যখন বিদেশ সফরে যাওয়ার জন্য প্লেনে উঠি, তখন আমার দু’চোখে
পানি এসে যায়। আমি জানি, ‘ভিক্ষা’ করতে বিদেশ যাচ্ছি।’ এর আগে পরে বহু
অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী ‘ভিক্ষা’ করতে বিদেশ গেছেন এবং এখনও যান,
কিন্তু এমন তিক্ত সত্য অনুভূতির কথা কারো মুখে তো শুনিইনি, বরং বিদেশ
থেকে ‘ভিক্ষা’ আনতে পারাটা তারা নিজেদের ক্রেডিট বলেই দাবি করেন। তবে
১৯৮০-এর দশকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন বিদেশে সাহায্যের জন্য যেতেন,
তিনি বলতেন, ‘বিদেশে ভিক্ষা করতে যাই না বরং তারা আমাদের যে সম্পদ লুট
করেছে, তার পাওনা আনতে যাই।’আবার ঢাকার রাজপথে ট্রাফিক জ্যামের সময়ে পথ-ভিক্ষুকদের দেখা যায় গাড়ি
ঘেরাও করে হাত পাততে। ছোট ছোট শিশুদের কেউ বেলী ফুল বা অন্য কোনো ফুলের
মালা বা ফুল হাতে গাড়ি ঘেরাও করে। রেওয়াজটা বিদেশের। বিদেশে দেখেছি
রাজপথে অভাবী শিল্পীরা ভিক্ষা চায় না। তবে ফুটপাথে নানা ধরনের শিল্পকর্ম
রচনা করে পথচারীদের কাছ থেকে সাহায্য নেয়। তবে আমাদের দেশে অন্য রকমের
ভিক্ষুকও আছেন, যারা প্রাণদন্ড মওকুফ করতে রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে জীবন
ভিক্ষা চান। কেউ আবার প্রেমের ভিখারি। আবার নির্বাচনে প্রার্থীদের বাড়ি
বাড়ি ঘুরে ভোট ভিক্ষা চাওয়ার রেওয়াজও ছিল আমাদের দেশে।কতকাল থেকে শুনে আসছি দ্বারে দ্বারে ভিক্ষুকের করুণ আর্তনাদ, ‘মা-গো
ভিক্ষা দেন’। সেই যখন ছোট ছিলাম, দেখেছি গ্রামের দেয়ালঘেরা বাড়ির ভেতরে
ঢুকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভিক্ষুকরা আর্তনাদ করতেন, ‘মা-গো ভিক্ষা দেন’।
মা-চাচীরা তাদের খালি হাতে ফিরাতেন না। জানি না, কোন আদিকাল থেকে দ্বারে
দ্বারে ভিক্ষুকের এ আর্তনাদ পরিবারগুলো শুনে আসছে। মনে হয়, যখন থেকে
সম্পদ বণ্টনে বৈষম্য ও কাড়াকাড়ি শুরু হয়েছে তখন থেকেই অপেক্ষাকৃত দুর্বল
মানুষের এ পেশার উদ্ভব। তবে ভিক্ষুকেরও রকমফের আছে। ধর্মে আছে, গরিবের হক
আদায় করা সামর্থ্যবানদের দায়িত্ব। আমার মা ভিক্ষুকদের কখনো বিমুখ করতেন
না। একটি বিষয় আমাকে অবাক করে। ভিক্ষুকদের আল্লাহর কাছে নিজের জন্য কিছু
চাইতে দেখিনি। কেউ তাদের ভিক্ষা না দিলে হতাশায় ‘আল্লাহ’ বলে দীর্ঘশ্বাস
ছেড়ে চলে যায়। এদের কেউ শুধু দু‘মুঠো ভাতের জন্য, মেয়ে বিয়ে দেবে, রোগীর
চিকিৎসা করাবে, সন্তান পড়াবে, মসজিদ নির্মান, মাদরাসা চালাবে ইত্যাকার সব
ভালো কাজের খরচের জোগান দিতে সাহায্য চাইতে আসে। আবার কিছু ভিক্ষুক আছে
ভিক্ষাকে পেশা হিসাবেই বরন করেছে। তাইতো জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় মাঝে মধ্যে
দেখি কোনো কোনো ভিক্ষুক কোটিপতি হয়ে গেছেন।ভিক্ষা করা পাপ নয়। তবে ইসলাম ধর্মে তা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। নবী করিম
(সা:) বলেছেন, ‘যে কর্মবিমুখ ব্যাক্তি ভিক্ষা করে, শেষ বিচারের দিন তার
মুখমন্ডলে মাংস থাকবে না’ (মুখারি ও মুসলিম)। কারণ ভিক্ষা করাতে কোনো
গৌরব নেই। তবে যাকাত, সাদাকা ও উপহার নেয়া জায়েজ। এটা আর যাই হোক
ঘুষ-দুর্নীতি, চুরি-চামারি, মাদক, জুলুম-ডাকাতি ও জোচ্চুরি ইত্যাদির
তুলনায় ভালো। তবে ভিক্ষুকদের মধ্যে যেমন রকমফের আছে, তেমনি ভিক্ষা চাওয়ার
মাঝেও অন্তরের ভালবাসার আবেগ লাগে। সেই আবেগই মূলত ভিক্ষা পেতে
ভিক্ষুকদের সাহায্য করে। তাই লোভ, ক্ষোভ, রাগ, অহংকার ত্যাগ করুন দেখবেন
ভালোবাসা চলে আসবে অন্তরে।পরিশেষে জ্ঞানীদের বাণী আর ডাক্তার মেহজাবিন তুলির কিছু কথা উল্লেখ্য করে
শেষ করতে চাই। কথায় আছে, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। আবার আজকাল বিভিন্ন
যানবাহনের পিছনে দেখা যায় লেখা থাকে- ক্ষমতার গৌরব আর ফুলের সৌরভ বেশি
দিন থাকে না। জীবনে কাউকে আঘাত করার আগে ভেবে নেবেন নিজে আঘাত পেলে কেমন
লাগে। মনে রাখা উচিত, জীবনে কাউকে কাঁদিয়ে বেশিদিন ভালো থাকা যায় না।
গুছিয়ে মিথ্যা বলা মানুষগুলো সবার কাছে প্রিয় হয়, অপ্রিয় হয় শুধু মুখের
উপর সত্যি কথা বলা মানুষগুলো। তাই লোভ, ক্ষোভ, আর রাগ, অহংকার ত্যাগ করুন
দেখবেন ভালোবাসা চলে আসবে অন্তরে। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ
এরশাদের কথা ভাবুন একবার। আমার ছোট ব্রেনে দেখেছি বা অনুভব করেছি তার
একটাই ভয় ছিল জেলখানা বা কারাবাস, এজন্য দৌড়াদৌড়ি করতেন। মনে শান্তি
ছিলনা, তাই বিভিন্ন সময় পাগল মনে সত্য কথা বলে দিতেন। এখন তার আর ভয় নেই,
আর কোন দল তাকে কারাবাসে দিতে পারবেন না। তিনি অলরেডি চলে গেছেন
চিরকারাবাসে। আমরাও একদিন চলে যাব এই রঙ্গিন দুনিয়া থেকে। থাকবে শুধুই
কর্মময় জীবনের স্মৃতি আর ভালবাসা।এম এ রকিব
সহ-সম্পাদক, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব।
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি, দৈনিক নয়াদিগন্ত।
“ভিক্ষা’র সাতকাহন”
শেয়ার করুন