বিশেষ প্রতিনিধি.
সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানের ১০ম মৃত্যু বার্ষিকী ৫ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার । ১০ম মৃত্যু উপলক্ষে নানা কর্মসূচী পালন করবে এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ,মরহুমের পরিবার ও তাঁর রাজনৈতিক সংগঠন বিএনপি। এই তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। মরহুম এম সাইফুর রহমান কর্মময় জীবনে তার অনন্য গুণে মানুষের হ্রদয়ে ঠাঁই করে নিয়ে ছিলেন। তার সাদামাঠা ব্যক্তিগত জীবন মানুষের দৃষ্টি কাড়ত। ছিল না চাওয়া পাওয়ার অস্থিরতা।এমনকি উচ্চ আকাঙ্খা উচ্চ বিলাসিতাও পচন্দ ছিলনা একদমই। কথা বলতেন মারপ্যাচের জটিলতা ছাড়াই সরল সহজ আর ইংরেজী মিশ্রিত আঞ্চলিকতায়। একারনেই দেশ বিদেশে সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ছিল তাঁর। দেশ দুনিয়ায় নাম কুড়ানো মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনের সেই ছেলেটি দেশের অন্যতম অর্থমন্ত্রী যিনি একনাঘাড়ে ১২ বার সংসদে বেশ সফলতার সাথে বাজেট পেশ করেছেন। কর্মে তারঁ অনন্য গুণ তিনি উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখতেন তা বাস্তবায়নও করতেন। এটাই তার অবিচল আস্থা বিশ্বাস আর কাজের প্রতি নিখাঁদ আন্তরিকথা ও কর্তব্যকর্মে দ্বায়িত্বশীলতার নজির। নিজ জন্মস্থান মৌলভীবাজার সহ পুরো সিলেট বিভাগেই রয়েছে তার চোখ ধাধাঁনো উন্নয়নের চোঁয়া।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: জন্ম ১৯৩২ খ্রীষ্টাব্দের ৬ অক্টোবর, মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনে। তার পিতার মোহাম্মদ আব্দুল বাছির,মাতার তালেবুন নেছা। ৩ ভাইয়ের মধ্যে সভার বড় ছিলেন তিনি, মাত্র ৬ বছর বয়সে তাঁর পিতা মারা যান। সে সময়ে তাঁর অভিভাবকক্ত গ্রহণ করেন চাচা মোহাম্মদ সফি।
শিক্ষাজীবন, গ্রামের মক্তব ও পাঠশালা শেষ করে তিনি ১৯৪০সালে জগৎসী গোপালকৃষ্ণ উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর ১৯৪৯সালে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিকুলেশনে উর্ত্তীণ হন। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে আইকম পাশ করে ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর তিনি ব্যারীস্টারী পড়ার জন্য লন্ডনে চলে যান সেখানে পৌঁছার পর মত পাল্টে যায় তার, ব্যারিষ্টারীর পরিবর্তে পড়েন র্চাটার্ড একাউন্টেন্সি।১৯৫৩-৫৮ সময়কালে পড়াশোনার পর ১৯৫৯ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ফেলোশীপ অর্জন করেন। এছাড়া তিনি আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষায়িত শিক্ষা গ্রহণ করেন। বিবাহ ১৯৬০ সালের ১৫ জুলাই বেগম দূররে সামাদ রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৩ পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ২০০৩ সালে তার স্ত্রী ইন্তেকাল করেন।
২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি এক মর্মান্তিক সড়ক র্দূঘটনায় নিহত হন। তার শেষ ইচ্চানুযায়ী বাহারমর্দনে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) র’ প্রতিষ্টা লগ্নে দলটির প্রতিষ্টাতা জিয়াউর রহমান আপন করে ডাকলেন দল গঠনে অংশ নিয়ে দেশও জাতীর কল্যাণে নিবেদীত হতে। তিনি তাই করলেন। রাজনীতিতে এলেন আলোকিত করলেন আলোকিত হলেন। ১৯৯৬ সালে ষষ্ট ও সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসন ও ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার -৩ ও সিলেট-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালের ৮ই জুন তিনি সংসদে দ্বাদশ বাজেট পেশ করে দেশের সংসদীয় ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক বাজেট পেশকারী হিসেবে রের্কড গড়েন। তিনি দীর্ঘদিন দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ছাড়াও দেশ-বিদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্টানগুলোতেও নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন কৃতিত্বের সাথে। তাঁর জীবদ্দশায় দেশ ও বৃহত্তর সিলেট নিয়ে যে উন্নয়ন মহা পরিকল্পনা করেছিলেন তার অনেক গুলো বাস্তবায়ন হলেও পুরোটা বাস্তবায়ন করতে পারেন নি। হঠাৎ এক র্মমান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিভেযায় তার জীবন প্রদীপ, স্তব্ধ হয়ে যায় তার দেখা উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার স্বপ্ন। বুধবার দুপুরে তাঁর জ্যৈষ্ঠ পুত্র সাবেক এমপি ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান জানান, তাঁর বাবা সবসমই মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পচন্দ করতেন। বৃহত্তর সিলেটে তিন যে দৃষ্টান্তকারী উন্নয়ন করে গেছেন এটিই তার বড় প্রমাণ। সাইফুর রহমান মানুষের হ্রদয়ে ঠাঁই পেয়েছেন মানুষের কল্যাণে করা উন্নয়নমূলক কাজেরও স্বীকৃতি পেয়েছেন। তিনি মরহুম পিতার জন্য সকলের কাছে দোয়া চান।
১০ম মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা কর্মসূচী: ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এম.সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ ও মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর গ্রামের বাড়িতে কোরানে খতম,মিলাদ,দোয়া,শিরনী বিতরণ করা হবে।এম.সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ ছাড়াও দলীয়ভাবে বিএনপির স্থানীয় জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা সকালে মরহুমের কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ,মিলাদ মাহফিল,দোয়া ও সাড়ে এগারোটায় স্মরণসভাসহ নানা কর্মসূচী পালন করবেন বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। সকালে সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হকের নেতৃত্বে সিলেট জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ মরহুমের কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ করবেন এবং পরে স্মরণসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিবেন। মৌলভীবাজার জেলা জামে মসজিদসহ জেলা ও উপজেলার মসজিদ গুলোতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও ঢাকায় এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের উদ্দ্যোগে ৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন অডিটোরিয়ামে বিকেল সাড়ে ৩টায় স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ডা: খন্দকার মোশারফ হোসেন ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ।
সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১০ম মৃত্যু বার্ষিকী
শেয়ার করুন