সদ্য বিদায়ী এডিশনাল এসপির আবেগঘন স্ট্যাটাস ও আমাদের অনুভূতি

  • শাকির আহমদ……
  • সদ্য বিদায়ী মৌলভীবাজার জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) আবু ইউসুফ। চাকরি জীবনে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারীতে যোগ দেন এই সার্কেলে। যোগদানের প্রথম বছরেই তাঁর দক্ষতা ও বিচক্ষনতায় প্রশংসিত হয়েছিলেন সর্বমহলে। সম্প্রতি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে মালিতে যোগদান করতে তিনি এই কর্মস্থল থেকে বিদায় নিয়েছেন।
  • দুইদিন আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর তাঁর ফেইসবুক টাইমলাইনে মৌলভীবাজারের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসটি জেলার বিভিন্ন স্থরের মানুষের মনে নাড়া দিয়েছে। অনেকের মতো আমার মনেও এক অন্যরকম অনুভূতি উপলব্দি করেছি। তৃপ্ত মনে উপলব্দি হচ্ছে, একজন সরকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে আমরা (মৌলভীবাজারবাসী) ভালোবাসতে পেরেছিলাম বলেই উনি আমাদের ভুলতে পারছেন না।
  • যোগদানের প্রথম বছরই মৌলভীবাজারে আলোচিত জঙ্গি আস্তানা ঘেরাওসহ জঙ্গিদের সকল অপতৎপরতা বন্ধে সামনের সারিতে ভূমিকা পালন করেন তিনি। এরপর একে একে সামাজিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন অসংগতি দূরীকরণে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে থাকেন। এই সার্কেলের অধিনস্ত সড়কের যানজট নিরসনে তাঁর বিভিন্ন ভূমিকার কারনে সর্বজন প্রশংসিত হয়েছেন। এমনকি তাঁর কাজের স্পৃহা দেখে তৎকালীন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল মৌলভীবাজার পৌর শহরের যানজট নিরসনেও পরামর্শ নিয়েছিলেন।
  • এছাড়াও আত্মহত্যা বন্ধে সামাজিক আন্দোলনসহ বিভিন্ন স্থানীয় জমিজমা সংক্রান্ত মামলার জটলা আলোচনা সাপেক্ষে উভয় পক্ষকে সমাধান করে দেয়াসহ আরও অনেক কর্মকাণ্ডের কারনে তিনি স্থানীয়দের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।
  • সাংবাদিকদের সাথে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কিছুটা দা-কুমড়া সম্পর্ক থাকলেও তাঁর সাথে ছিলো স্থানীয় সাংবাদিকদের বেশ সখ্যতা। আমার জানামতে, জেলার অনেক পুলিশ কর্মকর্তা এই সখ্যতা নিয়ে উনাকে জিজ্ঞাসা করতেন। উনি অবলিলায় নিজেকে মিডিয়া বান্ধব স্বীকার করতেন। এবং নিজেকেও সাংবাদিক পরিচয় দিতেন। সাংবাদিকদের সাথে এই সম্পর্কের কারন হিসেবে তিনি উল্লেখ করতেন, ঢাকার কর্মজীবনে তিনি মেট্টোপলিট্টন পুলিশের মিডিয়া উইং দেখভাল করতেন।
  • দেশমাতৃকার গৌরব উজ্জ্বল করতে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে মালির উদ্দেশ্যে তিনি যোগদানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন। সর্বশেষ গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে কুলাউড়া থানা পুলিশের আয়োজনে উনার বিদায়ী অনুষ্ঠানে উনার বক্তব্যের প্রায় অংশ জুড়ে কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখার মানুষের বন্দনা। উনি এই কর্মস্থলকে নিজের জন্মস্থানের পর ভলোলাগার উল্লেখ করে বলেন, সুযোগ পেলে তিনি এই মৌলভীবাজার জেলায় আবার আসবেন। তাঁর কর্মস্থল কুলাউড়ার মানুষ তাঁকে অনেক ভালোবাসতো। বিশেষ করে কুলাউড়ার সর্বস্তরের মানুষের কাছে তিনি ‘ভালো মানুষ’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
  • গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাত ৮ টা ৫০ মিনিটে নিজের ফেইসবুক টাইমলাইনে মৌলভীবাজারকে ঘিরে তাঁর আবেগঘন স্ট্যাটাসটি নিচে তুলে ধরা হলো-
  • ‌‘মৌলভীবাজার ভুলি নাই, ভুলা যায় না’
  • কাজের ব্যস্ততায় অনুভূতি ব্যক্ত করা যায় নাই। মৌলভীবাজার থেকে বিদায় নেয়ার সময় মনে হয়েছে আপনজনদের কাছ থেকে কিছু দিনের বিদায় নিচ্ছি।
  • মনে হচ্ছে, অচিরেই মিশন শেষে তাদের কাছে ফিরে যাব। কিন্তু বিধাতা কি লিখেছেন জানি না।
  • ডিএমপি থেকে গিয়ে জেলায় যখন চাকরি করার চিন্তা করলাম তখন বস হিসেবে শাহজালাল স্যারের অধীনে কেন চাকরি করতে গিয়েছিলাম তা স্যারের সফলতাই বলে দেয়। অবশ্য বর্তমান এসপি স্যারও অনেক অনেক ভাল। সার্কেল এডিশনাল এসপিও।
  • কুলাউড়ার লোকজনের সাথে মিশে গিয়েছিলাম বিরোধ মীমাংসা করতে গিয়ে। আসলে চেষ্টা করেছিলাম “কেউ না যেন ফিরে খালি হাতে।” অন্ততঃ সান্তনা টুকুও যাতে পায়।
  • কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ীর রাজনৈতিক নেতাদের অন্তরের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ জানালেও কম হবে, কারণ কেউ কোনদিন ধমক তো দূরের কথা অযাচিত তদবিরও আমার কাছে করেন নাই।
  • সাংবাদিকেরা আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয় বন্ধু এবং বড়ভাই হওয়ায় তাদের সহযোগিতা ছিল সবচেয়ে বেশি। তাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
  • সবশেষে পুলিশ কর্মকর্তাদের কথা না বলে পারা যায় না। সত্যি বলতে গেলে, এসপি শাহজালাল স্যারের জন্যই মৌলভীবাজার যাওয়া (ডিএমপি থেকে)। আনোয়ার স্যার, রওশন স্যার এবং সারওয়ার স্যারের উপদেশ ও সহযোগিতা আমার কাজের পথকে করেছে প্রশস্থ। স্যারদের অসংখ্য ধন্যবাদ। এডিশনাল এসপি রাশেদ এবং প্রতিটি থানার প্রত্যেক পুলিশ সদস্য আমাকে বিপদে ফেলার বিন্দু মাত্র চেষ্টা করেনি। তাদেরকেও ধন্যবাদ।
  • অনেক সুখকর স্মৃতিময় ঘটনা বলার ইচ্ছে ছিল। সময় সহায়ক হলো না।’
শেয়ার করুন