বিশেষ প্রতিনিধি::
অবশেষে আগামী ১৩ অক্টোবরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন। এই সম্মেলনকে ঘিরে সকল প্রস্ততি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে কয়েকবার সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও নানান কারণে আর হয়ে উঠেনি। ফলে শ্রীমঙ্গলের আওয়ামীলীগে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসেনি। দেখা দেয় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা।
অন্যদিকে দীর্ঘ ১৫ বছর পর উপজেলা আওয়ামীলীগের এই সম্মেলন হওয়ায় নেতাকর্মীদের প্রাণচাঞ্চল্য অনেকটা বেড়ে গেছে। শহরে ও তৃণমুলের হাটবাজারে সম্মেলনের আসা সম্ভাব্য অতিথিদের ব্যানার,বিলবোর্ড ও পোষ্টার ব্যাপকভাবে সাঁটানো হচ্ছে। অতিথিদের সম্মানে বেশ কয়েকটি তোরণ ও গেইট নির্মাণ হচ্ছে। সম্মেলন সফল করতে প্রচারনার কাজ চলছে তোড়জোড়ে। সম্মেলনের সফলতা কামনা করে শহরে ব্যানার ফেস্টুন ছেয়ে গেছে।
সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কদর বেড়ে গেছে। আর তাতেই খুশি তৃণমূলের কাউন্সিলররা। এরই মধ্যে সম্ভাব্য সভাপতি-সেক্রেটারী প্রার্থীরা কাউন্সিলরদের কাছে নিজেদের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য দোঁড়ঝাঁপ শুরু করছেন। তবে সম্মেলনে কে হবেন দলের নতুন সভাপতি সেক্রেটারী এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূলে ও দুর্দিনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে এক ধরণের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। তাদের মনের শঙ্কা, বিগতদিনের সংসদ নির্বাচনে নৌকা ডুবাতে যারা প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছিলো তারাই যদি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন, সেই ভাবনা থেকে। কারণ সভাপতি সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে সেসব বিতর্কিতরাও কেউ কেউ এই সম্মেলনে প্রার্থী হচ্ছেন।
সম্মেলনকে ঘিরে শহরেও গ্রামে তেমন উত্তাপ লক্ষ্য করা না গেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিগত সংসদ নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে যারা নৌকার মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছিল এসব নেতাদের নিয়ে তুমুল বির্তক ও তির্যক মন্তব্য করতে দেখা গেছে।শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ইসমাইল মাহমুদ তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেন ‘শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে এক নেতার অনুসারীরা প্রচার করছেন তিনি দুর্দিনের কান্ডারি। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী তথা নৌকা ডুবানোর মহান লক্ষ্য নিয়ে ওই নেতা ঘড়ি মার্কার সওয়ার হয়েছিলেন। সেদিন কি দলের সুদিন ছিল?’বলে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
আর তাতেই উপজেলা যুবলীগের নেতা বদরুল আলম কমেন্টসে লিখেন ‘সেদিন নৌকার প্রার্থীকে ফেল করানোর জন্য কারা কি করেছে, শ্রীমঙ্গলের মানুষ আজও ভুলে নাই। তারা শেখ হাসিনাকে ডুবাতে চেয়েছিল।’ উপজেলা যুবলীগের আরেক নেতা নুরুল আমিন লিখেন‘যারা নৌকাকে ডুবাতে চেয়েছিল ২০০১ সালে ,শ্রীমঙ্গলের সবাই জানে। ওদের লজ্জা থাকা উচিত।’
ভুনবীর ইউনিয়নের তৃণমুলের কর্মী বেলাল আহমেদ লিখেন‘শ্রীমঙ্গলের এবং কমলগঞ্জের জনগন জানে কারা সেই দিন নৌকার বিরোধিতা করেছিল এবং দলের দুর্দিনে কাজ করেছেন। মুখে মুখে বললে হবে না জনগন তার সাক্ষি। হাইব্রীডমুক্ত আওয়ামীলীগ হবে এবার।’এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।তবে শেষমেশ ধারণা করা হচ্ছে,এবারের সম্মেলনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিগতদিনে দলের সাথে,নৌকার প্রার্থীর সাথে যারা বেইমানি করেনি,স্বচ্ছ ও দূর্নীতির কলঙ্কমুক্ত নেতৃত্বকেই কাউন্সিলরা বেছে নিবেন।
আর এ ক্ষেত্রে দলের তৃণমুলের মতামত ও কাউন্সিলরদের সমর্থনের মাধ্যমে আগামীর নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে বলে প্রত্যাশা রয়েছে নেতাকর্মী সবার।সর্বশেষ বিগত ২০০৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রয়াত সভাপতি ইসমাইল হোসেনকে সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেবকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এর পর দলীয় সভাপতি ইসমাইল হোসেনের মৃত্যুর পর সিনিয়র সভাপতি এম এ মনির সভাপতির দায়িত্ব পান। তিনিও মৃত্যুবরণ করার পর বর্তমানে সহ সভাপতি মো.আছকির মিয়া সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
সাধারণ সম্পাদক রনধীর কুমার দেব উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হওয়াতে সেসময়ে দলীয় বিধি নিষেধের অজুহাতে পদত্যাগ করেন। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট আজিজুর রহমান। তার মৃত্যুজনিত কারণে দায়িত্ব পান যুগ্ম সম্পাদক এম এ মান্নান। সেই কমিটি গঠনের পর থেকে আর সম্মেলন না হওয়াতে গুরুত্বপূর্ণ দুই পদে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে দলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
জেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষনার পরপরই পদ প্রত্যাশীরা শীর্ষনেতাদের আর্শীবাদ পেতে জোর লবিং করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি তৃণমুলে ও কাউন্সিলরদের সমর্থন আদায়ের প্রাণপণ চেষ্ঠা করছেন। এরই মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা মো.আছকির মিয়া। তারঁ দাবী,তিনি ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ৭০ সালে ভুনবীর ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ৭১ সালের ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষনে ছয়তারা টুপি মাথায় পরে বাঁশের লাঠি নিয়ে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেন এবং গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন। মাঝ পথে তিনি ১৯৮৬ সালে উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও ৯৬ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে লাঙল প্রতীকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। পরবর্তীতে ২০০২ সালে জুলাই মাসে ২৫০ জন নেতাকর্মী নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। এরপর ২০০৫ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে ও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
সভাপতি পদে আরেক প্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মান্নান। ৬৮-৬৯ সালে শ্রীমঙ্গল থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সেসময়ে স্থানীয়ভাবে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। তার দাবী, তিনি ১৯৭০-৭১ সাল পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ মনোনীত নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। ৭১ সালে স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ছিলেন। ৭১ সালের ২৩ মার্চ শ্রীমঙ্গল থানায় স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নেতৃত্ব দেন তিনি। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার পর একদল ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর খালেদ মোশাররফের অধীনে হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মুক্তিযোদ্ধে অংশ নেন। “১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করা হয়, তখন তিনি শ্রীমঙ্গলের আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সেদিন তিনি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর স্বপরিবারের হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও সেলিম তালুকদারের যৌথ নেতৃত্বে প্রতিরোধ যুদ্ধার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ছিলেন। আসন্ন উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে দলের নেতাকর্মীদের ইচ্ছায় সভাপতির পদ প্রত্যাশী তিনি। এমএ মান্নান বলেন,৬৯ এর গনঅভ্যুত্থানের পর সিলেটে বঙ্গবন্ধুর সাংগঠনিক সফরে আসলে শ্রীমঙ্গলে যাত্রাবিরতি করেন। তখন আমার বড় ভাই প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা ডা: আব্দুল আলীর বাসায় বঙ্গবন্ধু উঠেন’।
সভাপতি পদে আরেক প্রত্যাশী বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আজকের আওয়ামীলীগ এসেছেন বলে তার দাবী। তার পরিবারের বড় ভাই রনজিত কুমার দেব সাতগাঁও ইউনিয়নের অত্যন্ত জনপ্রিয় ৩ টার্মের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই ১৯৬৮ সাল থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে তার পরিবার জড়িত বলে তিনি দাবী করেন।
সর্বশেষ ২০০৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর গঠিত উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। ওয়ান ইলেভেনের সময়েও তিনি দলকে সুসংঘটিত করে কর্মীদের পাশে ছিলেন বলে দাবী করেন। দুর্দিনেও তিনি দলের সাথে বেইমানি করেননি। ২০০১ সালে যখন দলের একটি বৃহৎ অংশ ৭ জন রানিং ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে সংসদ নির্বাচনে নৌকাকে ডুবাতে একাট্টা হয়েছিলেন। তখন তিনি সাতগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। দলের ওই অংশটির শত চাপেও সেদিন তিনি নৌকার হাল ছেড়ে যাননি।
সভাপতি পদে অপর প্রত্যাশী বর্তমান শ্রীমঙ্গল পৌর আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী অর্ধেন্দু কুমার দেব বেভুল। এর আগে তিনি .বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি(সিপিবি’র) রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।তার দাবী,১৯৯৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন তিনি। ২০০৩ সালে থেকে পৌর আওয়ামীলীগের সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করছেন। এর পর থেকে দলের প্রতিটি নির্বাচনে বিশেষ ভুমিকা রাখেন তিনি। স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক হিসেবে সকলের কাছে তিনি গ্রহণযোগ্য বলে নেতাকর্মীর দাবী।
২০০৬ সাল থেকে বর্তমান কমিটিতেও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হন তিনি। তিনি বলেন,রাজনীতি দিয়ে শুরু হয়েছে আমার জীবন। এখনও রাজনীতিতেই আছি। রাজনীতিতে কোনো দিন পদবী চাইনি,জনপ্রতিনিধির কোনো পদেও কখনো লোভ করিনি। এটাই আমার রাজনীতির বৈশিষ্ট্য। আমার চাওয়ার পাওয়ার কিছু নেই। দলের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি’।
অপর সভাপতি পদ প্রত্যাশী বীরমুক্তিযোদ্ধা আবু শহীদ মো.আব্দুল্লাহ। তার দাবী,১৯৬৮ সালে স্কুল জীবনে নবম শ্রেণীর ছাত্র থেকেই পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের স্থানীয় ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। ৬ দফা,১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ৭১ এ মুক্তিযোদ্ধে অংশ নেন তিনি। ১৯৭২ সালে কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য। ৭৪-৭৫ সালে মুজিববাদী ছাত্রলীগের শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের জিএস পদে নির্বাচিত হন। ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের পর রাজপথে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হন। ৬ মাস জেল খাটেন। ৮৫ সালে আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। ৯০ সালে ঘাতকদালাল নির্মুল কমিটির আহবায়ক হন। তখনকার পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পরবর্তীতে উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক হন। ২০০৬ সাল থেকে জেলা আওয়ামীলীগের ২০১৭ সাল পর্যন্ত উপ-দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কিন্তু দলীয় কোন্দলে ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিরোধী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগে সে সেময়ে দল থেকে বহিষ্কার হন। তখন থেকেই দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়ে জেলার রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হন। জেলায় সৈয়দ মহসীন আলীর বলয়ে দলের কর্মকান্ডে যুক্ত হন।
সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক সহিদ হোসেন ইকবাল। তার দাবী, তিনি এ পদে থাকাবস্থায় একাধিকবার ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারীর দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পালন করেন।
তিনি ১৯৮৭-৯০ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ৯০ থেকে ৯৪ সালে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর রাজনীতি ছাত্রলীগ থেকে শুরু। এর পর থেকে দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীদের পাশে থেকে দলকে সুসংঘটিত করেন এবং প্রতিটি দলীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। সেজন্য দলের তৃণমূল কর্মীদের মাঝে তার একটি স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজ রয়েছে।সাধারণ সম্পাদক পদে অপর প্রার্থী মো.ইউসুফ আলী। তিনি শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান এম এ রহিমের অনুজ। দলীয় নেতাকর্মীরা জানান,বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরবর্তী দীর্ঘসময় বিরোধীদলে থাকা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের দুর্দিনের ভরসারস্থল ছিল এই পরিবারটি। ওই সময়ে এম এ রহিম ও ইউছুফ আলীকে দলের কান্ডারি বলা হতো। দলের যেকোনও ডিসিসনে একচ্ছত্র প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল তাদের। কিন্তু ১৯৯৬ সালে দল ক্ষমতায় আসার পর দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে সে সময়ে বির্তকিত কর্মকান্ড ও কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা ডুবাতে সরাসরি অবস্থান ছিল এই পরিবারের। নেতাকর্মীরা এখনও একবাক্যে বলেন, সেইসময়কার দলের দু:সময় আওয়ামীলীগে আর কখনো আসেনি। সেদিন তাদের অনুসারীদের নিয়ে প্রানপণ চেষ্ঠা করেও নৌকার বিজয় ঠেকাতে পারেননি। ফলে তারা তাদের অনুসারীদের নিয়ে দল থেকে সেসময় বহিষ্কার হন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিতর্কিত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনেও তারা তাদের অনুসারী নিয়ে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সরব হননি। তখন সময়ও দলীয় নেতাকর্মীদের মুখে মুখে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগ উঠেছিল।
পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলে তারা দলীয় কর্মকান্ডে এতোটা সক্রিয় না হলেও বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় প্রার্থীর সাথে একাধিক সভা সমাবেশে ইউছুফ আলীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
উপজেলা আওয়ামীলীগের ২০০৫ সালের আগেরকার কমিটি গুলোতে ইউছুফ আলী কোষাধ্যক্ষ পরবর্তীতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতিরও দায়িত্ব পান তিনি।
বর্তমান সম্মেলনকে ঘিরে ইউছুফ আলী তৃণমুলের নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদের কাছে তার পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য দিন রাত ছুটছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে অপর প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আকরাম খান। তিনি ৯১ থেকে ৯৫ সাল পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে একাধিকবার তাকে জেলে যেতে হয়েছে। এমনকি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিকদলের কর্মীদের হাতে তার বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সেসময়ে হামলার শিকার হতে হয়েছে।
এছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রত্যাশীদের নাম শোনা যাচ্ছে উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি তফাজ্জুল হোসেন ফয়েজ, উপজেলা যুবলীগের বর্তমান সম্পাদক ছালিক আহমদ ও কালাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সম্পাদক শেখ মো.উপরু মিয়ার।
মূলত: নেতাকর্মীদের মূখে মুখে সম্ভাব্য সেক্রেটারী পদে সহিদ হোসেন ইকবাল আর ইউছুফ আলী ও আকরাম খানের নাম নাম বার বার উচ্চারিত হচ্ছে।
পৌর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শামীম আহমদ মুঠোফোনে বলেন,‘যাদের আওয়ামীলীগের সদস্য পদ আছে তাদের যেকোনও জন কাউন্সিলে প্রার্থী হতে পারেন। কিন্তু সৎ নিষ্ঠাবান এবং যারা দলের প্রতি আনুগত্য ছিলেন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নৌকাকে ছেড়ে যায়নি এরাই আগামীতে সভাপতি সম্পাদক হবেন। এটাই তৃনমূল আওয়ামীলীগের চাওয়া। তিনি বলেন,‘যারা অতীতে বঙ্গবন্ধুর নৌকার বিরোধিতা করে নির্বাচন করেছে,তারাই যদি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে চলে আসে তাহলে তারা আবারো তাদের পছন্দের লোক এমপি প্রার্থী না হলে নির্বাচনের সময় দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে। আমাদের মনে রাখতে হবে সেদিন তাদের প্রবল বিরোধিতা সত্বেও তৃণমূলের কর্মীদের মাধ্যমেই নৌকার বিজয় ধরে রাখা সম্ভব হয়েছিল। ”
এদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন আগামী রোববার সকাল ১১টায় শ্রীমঙ্গল শহরের পুরানবাজারে আয়োজন করা হচ্ছে। সামিয়ানা টাঙিয়ে তৈরী করা হচ্ছে বিশাল মঞ্চ ও প্যান্ডেল। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপিস্থত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। প্রধান বক্তা থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন,উদ্বোধক থাকবেন মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নেছার আহমদ এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বদর উদ্দিন কামরান,উপাধ্যক্ষ ড.মো.আব্দুস শহীদ এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক রফিকুর রহমান,বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান।
আর এতে সভাপতিত্ব করবেন উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মো.আছকির মিয়া ও সভা সঞ্চালনা করবেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মান্নান।
সম্মেলন নিয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান মুঠোফোনে বলেন,‘কাউন্সিলের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ১৩ অক্টোবরই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রত্যেক ইউনিয়ন থেকে ৩১ জন কাউন্সিলর। সে হিসেবে একটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়ন মিলিয়ে ৩১০ জন কাউন্সিলর হবেন। তাছাড়া আরও যোগ হবে ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা কার্যকরি কমিটির সকল সদস্যবৃন্দ। তবে এ কমিটির ১০/১৫ জন সদস্য প্রবাসে চলে যাওয়া ও মৃত্যুজনিত কারণে ৪০/৪২ জনে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন,‘সম্মেলন দুইটি পর্বে অনুষ্ঠিত হবে। একটি উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান,তাতে কাউন্সিলর ডেলিগেট সমর্থক সকলেই উপস্থিত থাকবেন। সেখানে জাতীয় ও স্থানীয় জেলা উপজেলার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে বিকেল তিনটায় মূল অধিবেশন। সেখানে শুধু কাউন্সিলর আর উপজেলা,জেলা ও জাতীয় নেতৃবৃন্দগন থাকবেন। সভাপতি সম্পাদক পদে কাউন্সিল অধিবেশনে যদি প্রথমে সমঝোতায় না পৌঁছা যায়,তাহলে চুড়ান্ত পর্যায়ে গোপন ভোট হতে পারে।’
দীর্ঘ ১৫ বছর পর আগামী ১৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হচ্ছে কাঙ্খিত শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল সেই নৌকা ডুবানোর বিতর্কিতরাও প্রার্থী নতুন নেতৃত্ব নিয়ে তৃণমূলের মনে বড় শঙ্কা
শেয়ার করুন