মোঃ ইবাদুর রহমান জাকির, বড়লেখা থেকেঃ
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি হাওরের কৈয়ারকোণা মৎস্য অভয়াশ্রম বিল ইজারা নেয়ার ভুয়া খবর ছড়িয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাছ লুট করছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। এ ব্যাপারে হাল্লা ইসিএ ব্যবস্থাপনা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি সাহাব উদ্দিন প্রায় ১ মাস আগে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিলেও প্রশাসনিকভাবে অদ্যাবধি কোনো ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
খুঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাকালুকি হাঁওরের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, জলজ উদ্ভিদ রক্ষা এবং হাল্লা এলাকার পাখিবাড়ির পাখিগুলোর অবাধ বিচরণ ও খাদ্যের সংস্থানের জন্য ২০১১ সালের ২৯ মার্চ উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের কৈয়ারকোণা বিলের ইজারা প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় তা স্থগিত করে সরকারিভাবে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। বিলটি রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব দেয়া হয় হাল্লা ভিসিজি (ভিলেজ কনজারভেটিভ গ্রুপ) নামের একটি সমবায় সমিতিকে। গত ২/৩ মাস ধরে রংধনু মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি উক্ত অভয়াশ্রমটি ইজারা নিয়েছে-এলাকায় এমন প্রচার করে প্রতিদিন অবৈধ কাপড়ি জাল দিয়ে লাখ লাখ টাকার মাছ লুট করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গেলে কৈয়ারকোণা অভয়াশ্রম বিলে দুইটি জেলে গ্রুপকে অবৈধ কাপড়ি জাল দিয়ে মাছ ধরতে দেখা গেছে। জেলে ফারুক মিয়া, আতিক মিয়া, নুরু মিয়া প্রমুখ জানান, রংধনু মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি মনোরঞ্জন বিশ্বাস বিলটি ইজারা নিয়েছেন জানিয়ে তাদেরকে দিয়ে মাছ ধরাচ্ছেন। একে একটি জেলে গ্রুপকে প্রতিদিন ৪ হাজার টাকা মজুরি দেযা হয়। তারা অন্তত লাখ টাকার মাছ ধরে দেন বলে জানালেন জেলেরা। রংধনু মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি মনোরঞ্জন বিশ্বাস প্রথমে মিনিস্ট্রি থেকে ইজারা নিয়েছেন বললেও পরে জানান, আবেদন করেছেন। অবাধে মাছ লুটের কারণে তিনি কৈয়ারকোণা অভয়াশ্রমটি রক্ষণাবেক্ষনের অর্ডার এনে পাহারা বসিয়েছেন। তিনি মাছ লুটের সাথে জড়িত নন বলে দাবি করেন। হাল্লা ভিসিজি’র সভাপতি সুলেমান আহমদ জানান, অভয়াশ্রম ঘোষণার পর থেকেই তার সমিতিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কৈয়ারকোণা বিলের রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। অদ্যাবধি পরিবেশ অধিদপ্তরের অর্থায়নে একজন ও হাল্লা ভিসিজি’র অর্থায়নে একজনসহ মোট দুইজন পাহারাদার বিলটির পাহারায় নিয়োজিত। কিন্তু রংধনু মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক বিলটি ইজারা আনার ভুয়া খবর ছড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিলের মাছ লুট করছে।
এ ব্যাপারে অভিযোগ দেয়ার ১ মাস অতিবাহিত হলেও আজও প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামীম আল ইমরান জানান, কৈয়ারকোণা অভয়াশ্রম বিলটি ইজারা প্রদানের কিংবা রক্ষণাবেক্ষনের জন্য নতুন করে কোনো সমিতিকে দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরিত অভিযোগটি তদন্তের জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।