বাবার কোলেই শিশু তুহিনকে হত্যা করা হয়

  • সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি.
  • প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই পাঁচ বছরের শিশু তুহিন হাসানকে তার বাবা, চাচা ও চাচাতো ভাই মিলে নির্মমভাবে খুন করে। সে সময় শিশুটি বাবার কোলেই ছিল।
  • মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. খালেদ মিয়ার আদালতে তুহিনের চাচাতো ভাই শাহরিয়ার ও চাচা নাসির উদ্দিন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। এদিন সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস বিফ্রিংয়ে সাময়িক ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান এসব কথা জানান।
  • মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন, সোলেমান, সালাতুলসহ অনেকের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তুহিনের বাবা আবদুল বাছিরের শত্রুতা ছিল। সে নিজেও একটি খুনের মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি। এই মামলার অন্য অভিযুক্তরাও আরও বেশ কিছু মামলার আসামি। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া দুই আসামির স্বীকারোক্তিতে এসব জানা গেছে।’
  • জবানবন্দির বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘুমন্ত শিশুটিকে হত্যার সময় সে বাবার কোলেই ছিল। তুহিনের বাবা আবদুল বাছির ও চাচা নাসির উদ্দিন শিশুটিকে প্রথম ছুরি দিয়ে আঘাত করে। জবাইয়ের পর সবাই মিলে তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। কান কাটে, গোপনাঙ্গ কাটে। রশি দিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রাখে। শিশুটির চাচি ও চাচাতো বোন আপাতদৃষ্টিতে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে মনে হয়নি। বাছির, নাসির, জুলহাস, মোছাব্বির, শাহরিয়ার সরাসরি জড়িত ছিল বলে পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হয়েছে। এ মামলায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূল পরিকল্পনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা পুলিশ তদন্ত করে বের করবে। দুটি নাম লেখা ছুরি শিশুটির পেটে বিদ্ধ ছিল এগুলো ফরনেসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। এছাড়া ফিঙ্গারপ্রিন্টও পরীক্ষা করা হবে।’
  • ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্যাম কান্ত সিনহার আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আবু তাহের মোল্লা তুহিনের বাবা, দুই চাচাসহ তিন জনের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শুনানির সময় আদালত তুহিনের বাবা বাছিরের কাছে জানতে চান তাদের কোনও আইনজীবী আছে কিনা। তখন সে বলে, তাদের কোনও আইনজীবী নেই। পরে আদালত সরাসরি অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলেন।
  • উল্লেখ্য, রবিবার (১৩ অক্টোবর) রাতে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে রাতের আঁধারে পাঁচ বছরের শিশু তুহিনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ঘাতকরা তার লাশ রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। এ সময় তুহিনের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। তার পেটে দুটি ছুরি ঢোকানো ছিল, দুটি কান কাটা, এমনকি যৌনাঙ্গটিও কেটে ফেলা হয়।
  • খবর পেয়ে সোমবার সকালে জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, সিআইডি ও ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের বাবা আব্দুল বাছির ও তার তিন চাচা মাওলানা আব্দুল মোছাব্বির, জমসেদ মিয়া, নাছির, জাকিরুল, চাচি খয়রুন বেগম ও চাচাতো বোন তানিয়াকে থানায় নিয়ে আসা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই পুলিশ খুনের কারণ ও খুনিদের পরিচয় নিশ্চিত হয়।
শেয়ার করুন