ডাক্তারের অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে নাসিরনগরে স্বাস্থ্য সেবা

আকতার হোসেন ভুইয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ

প্রয়োজনীয় ডাক্তারের অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে নাসিরনগর উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা। দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, কর্মচারী সংকটে স্বাস্থ্যসেবায় বেহাল দশা বিরাজ করছে। ৫০ শয্যা হাসপাতালে ২১ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে ১৩ জন ডাক্তারের পদ শূন্য রয়েছে। কাগজে-কলমে ৮ জন ডাক্তার কর্মরত থাকলেও এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলাজী), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন) সহ ৪ জন চিকিৎসক সংযুক্তির আদেশের ভিত্তিতে বছরের পর বছর ধরে অন্যত্র কর্মরত রয়েছে। এছাড়া রয়েছে প্রয়োজনীয় কর্মচারী সংকটও।

২০০৭ সালে উপজেলার একমাত্র হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাস্তবে সেবাদানের ক্ষেত্রে কোন প্রকার উন্নতি ঘটেনি। দুর-দুরান্ত থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অনেক রোগী চিকিৎসক না পেয়ে সেবা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যেতে হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ডাক্তারের পরিবর্তে চিকিৎসা দিচ্ছে হাসপাতালের পিয়ন আর ওয়ার্ড বয়রা। ব্যান্ডেজ, সেলাইসহ বিভিন্ন অস্ত্রোপাচার পিয়ন, ওয়ার্ড বয়রা করে থাকেন। ৫০ শয্যা হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (স্যার্জিকেল), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি এন্ড অবস), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ডেন্টাল), জুনিয়র কনসালটেন্ট (নাক কান গলা), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), প্যাথলজিষ্ট, রেডিওলজিষ্টসহ অনেক চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূণ্য পড়ে রয়েছে। অথচ এ হাসপাতালে প্রায় সময় ইনডোরে ৬০/৭০ জন রোগী ভর্তি থাকে এবং আউটডোরে ৩/৪শ রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। বিশেষ করে গাইনি কোন ডাক্তার না থাকায় মহিলা রোগীদের চরম দূভোর্গ পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতালে ব্লাড ব্যংক নেই। এখানে এক যুগ ধরে এক্স-রে মেশিন থাকলেও মেডিকেল টেকনোলজিষ্টের (রেডিওগ্রাফি) অভাবে পড়ে রয়েছে। হাসপাতালে অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার (ওটি) ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও প্রয়োজনীয় জনবল, এ্যানেসথেসিয়ার ও সার্জারি ডাক্তার না থাকায় সিজারসহ অন্যান্য অপারেশন বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া বছরের পর বছর অব্যবহ্নত ও তালা বন্ধ থাকায় প্রায় কোটি টাকা মূল্যের এসব চিকিৎসার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ১টি পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৩টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে ৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র রয়েছে। একটিতেও ডাক্তার নেই। উপজেলার একমাত্র গুনিয়াউক ১০ বেড পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অবস্থা জরাজীর্ণ। ২ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও একজনও নেই। ৪ জন সেবিকার পদ থাকলেও একজন সেবিকা রয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ফার্মাসিষ্ট), মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব) সহ এমএলএসএস, মালি, নিরাপত্তা প্রহরীর পদ শূন্য রয়েছে। এসব কেন্দ্রে চিকিৎসক, কর্মচারি, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির স্বল্পতা, বিদুৎ, পানি, স্যানিটেশন সমস্যা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, জরার্জীণ অবকাঠামো, চিকিৎসক ও কর্মচারিদের আবাসিক সংকটসহ নানাবিধ সংকটে উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশতে অবকাঠামো ও ডাক্তার না থাকায় নাসিরনগরের গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবা প্রায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। একাধিক সূত্র জানায় এ উপজেলায় ডাক্তার ও সেবিকাদের পোষ্টিং দেয়া হলেও তদবির করে তারা অন্যত্র চলে যায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ অভিজিৎ রায় ডাক্তার সংকটের কথা স্বীকার করে জানান বর্তমানে ২ জন ডাক্তার দিয়ে চলছে আউটডোরের চিকিৎসা কার্যক্রম, এতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। ডাক্তার সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে প্রতিমাসে সিভিল সার্জনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও প্রতিকার হচ্ছে না। বর্তমানে হাসপাতালে বিনামূল্যে স্বাভাবিক প্রসব করানো হয় এবং রোগীদের জলায়ু ক্যান্সার নির্ণয়ে ফ্রি পরীক্ষা করানো হচ্ছে।

শেয়ার করুন