রফিকুল ইসলাম জসিমঃ
২৮ অক্টোবর শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী। ১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর ভোর রাতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কমলপুর সাব সেক্টর থেকে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের ধলই সীমান্ত চৌকিতে প্রবেশ করে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন তিনি। স্বাধীন বাংলার জন্য তাঁর সর্বোচ্চ ত্যাগ নিজের জীবন বিলিয়ে দেওয়ায় বাঙ্গালী জাতি তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খোরদা খালিশপুর গ্রামের সন্তান সিপাহী হামিদুর রহমান।
১৯৯২ সালে বিডিআর (বিজিবি)’র উদ্যোগে সর্বপ্রথম কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই সীমান্ত চৌকির পাশে নির্মাণ করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিফলক। ২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১০ শতাংশ জায়গার ওপর সাড়ে ১৪ ল টাকা ব্যয়ে গণপূর্ত বিভাগ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্ম্মাণ করে। একই সঙ্গে কমলগঞ্জ পৌরসভার ভানুগাছ- মাধবপুর সড়কটিকে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়।
স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ দিন পর ২০১৯ সনে পাঠ্য পুস্তকে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের রনাঙ্গণ নিয়ে সমাধান হলেও দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এখনো শাহাদাৎবরণের স্থান ভুল তথ্য উপস্থাপন হচ্ছে। বিভিন্ন গনমাধ্যমে কমলগঞ্জের ধলই সীমান্তকে শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, সিলেটের ধলই বলে প্রচার করা হয়। এ কারনে দেশের অনেক পাঠক শিখছে ভুল ইতিহাস।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনুমোদিত চতুর্থ শ্রেণীর ‘আমার বাংলা বই’ এর রচিত “বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান” পাঠের প্রথম অংশে উল্লেখ করা হয় “সিলেটের সীমান্ত এলাকা। শ্রীমঙ্গল থেকে ১০ মাইল দক্ষিনে ধলই সীমান্ত ঘাটি”।
উপজেলা শিক্ষা অফিস ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সচিব বরাবর চতুর্থ শ্রেণীর বইয়ে হামিদুর রহমান পাঠে শ্রীমঙ্গলের স্থলে কমলগঞ্জ উল্লেখ করার জন্য লিখিতভাবে চিঠি দেওয়ার পরও আগষ্ট ২০১২ থেকে নতুন করে প্রকাশিত চতুর্থ শ্রেনীর বাংলা বইয়ে ‘‘বীরশ্রেষ্ঠর বীরগাথা’’ পাঠে শ্রীমঙ্গল থানার ধলাই সীমান্ত ফাঁড়ি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
তথ্যগত এই ভুল কারণে বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার বিভিন্ন সভা, সেমিনারে কথা বলা হয়, এমনকি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদনও করার পর স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর সেপ্টেম্বর ২০১৮ পুনর্মুদ্রণে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার ধলই সীমান্ত ফাঁড়ি সংশোধন করা হয় ২০১৯ শিক্ষাবর্ষ ৪র্থ শ্রেণির বাংলা বইয়ে ২৮ পৃষ্ঠায়।
জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা বাংলা নিউজ টোয়েন্টি ফোর.কম এর আজকে ২৮ অক্টোবর শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের ৪৭ তম শাহাদত বার্ষিকী একটি ফিচারে “ইতিহাসের এই দিনে” বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান শহীদ হন এই শিরোনামে উল্লেখ করছে যে, সিলেটের শ্রীমঙ্গল থানার সীমান্তবর্তী হানাদার বাহিনীর একটি আউটপোস্ট দখলের জন্য প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সি কোম্পানির হয়ে অপারেশনে অংশ নেন হামিদুর রহমান।
সর্বাধিক জনপ্রিয় ইন্টারনেট ভিত্তিক তথ্যসূত্র হিসাবে ব্যবহৃত হয় উইকিপিডিয়া বীর শ্রেষ্ট জীবনী শিরোনামে যে তথ্য সংযোজিত আছে তাতে বীর শ্রেষ্ট হামিদুর রহমানের মৃত্যুবরনের এলাকায় ধলই, শ্রীমঙ্গল, সিলেট উল্লেখ করেছেন৷ প্রকৃত সত্য হল যেখানে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান শহীদ হয়েছিলেন সে এলাকাটি হলো মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ৮নং মাবধপুর ইউনিয়নের দলই সীমান্ত এলাকা। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নয়। কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার দুরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার আর সেখানে শহীদ হয়েছিলেন সেই জায়গা থেকে দুরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার।
শুধু গণমাধ্যমে নয় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে ভুল রয়েছে। তাদের ওয়েব সাইটেও বীরশ্রেষ্ট হামিদুর রহমানের মৃত্যুবরণের স্থান সঠিক ভাবে তুলে ধরা হয়নি। শুধু মাত্র লিখা হয়েছে সেখানে শহীদ হয়েছিলেন সেই জায়গার নাম ধলই। কিন্তু ধলই কোন এলাকায় অবস্থিত তা চিহিৃত নেই। ওয়েব সাইটে অবশ্য জেলা বা উপজেলায় নাম থাকা প্রয়োজন। কারন জেলা/উপজেলা লিখা না থাকলে জাতি এটা জানবে কি ভাবে যে সিপাহী হামিদুর রহমান কোন জেলা বা উপজেলায় শাহাদাতবরণ করেছিলেন?