কানাইঘাট (সিলেট) প্রতিনিধিঃ
ইয়াবা মামলায় বর্তমানে জেল হাজতে থাকা সহ একাধিক মাদক চোরাচালানী মামলার আসামী তোতা মিয়া কানাইঘাট লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউপি আ’লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় সর্বত্র তোলপাড় চলছে। আওয়ামীলীগের মতো একটি সংগঠনের দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন মাদক ও ইয়াবা ব্যবসায়ী সহ যারা দলের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড করছে তারা যেন দলের তৃণমূল পর্যায়ে নেতৃত্বে আসতে না পারে এ জন্য শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও একাধিক মামলার আসামী ইয়াবা মামলায় কারাবন্দি তোতা মিয়া কি করে জেলে থেকে কাউন্সিলে প্রার্থী হয়ে কালো টাকার মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে এনিয়ে মিডিয়ায়ও তোলপাড়।
গত কয়েকদিন ধরে তোতা মিয়ার অপরাধের ফিরিস্তি তোলে ধরে গণমাধ্যমে সংবাদ ও প্রকাশিত হচ্ছে। দলের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নিবেদিত ক্লীন ইমেইজধারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য দলের মধ্যে সুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন, তখন কানাইঘাটের একটি ইউনিট শাখার আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ইয়াবা মামলায় কারাবন্দী একাধিক মামলার আসামী তোতা মিয়া সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় দলের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও চলছে তোলপাড়। খোদ আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোতা মিয়ার নানা ধরনের অপরাধের তথ্য তোলে ধরে সম্মেলনে আসা জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়ীত্বশীল নেতৃবৃন্দকে তুলোধুনো করছেন।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের দ্বি-র্বাষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কয়েকদিন পূর্বে গ্রেফতার হওয়া বর্তমানে কারাগারে থাকা তোতা মিয়া সভাপতি পদে জেলে থেকেও প্রার্থী হন। স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, তোতা মিয়া এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যাবসায়ী ও চোরাকারবারী। এলাকায় আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে দেশ বিরোধী চোরাচালান বিজিবি’র সাথে খারাপ আচরন সহ নানা ধরনের দাঙ্গা-হাঙ্গামা কাজে সে জড়িত রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ইয়াবা, মাদক ব্যাবসাসহ চোরাচালানের কয়েকটি মামলা রয়েছে। পূর্বে সে পুলিশের হাতে ফেন্সিডিল সহ গ্রেফতার হয়ে জেল খাটে। এছাড়া অন্যান্য মাদক মামলায় কয়েকবার হাজতবাস খাটে চোরাচালান করে কোটিপতি হয়েছে সে।
কয়েক বছর পূর্বে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একটি ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হয়ে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে সীমান্ত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, সুরইঘাট বাজার কেন্দ্রীক নানা ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড, মাদক ইয়াবা ব্যবসা সহ চোরাচালানের সাথে জড়িত হয়ে পড়ে। তার পরিবারের অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে চোরাচালান ও মাদকের মামলা পর্যন্ত রয়েছে। জেল থেকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি পদে তোতা মিয়া প্রার্থী হয়ে যে কোন মূল্যে জয়ী হওয়ার জন্য সেখান থেকে তার পরিবারের সদস্য, অনুসারীদের নির্দেশনা দেন তোতা মিয়া। সম্মেলনে সভাপতি পদে বিজয়ী হতে যত টাকা খরচ হয় এবং প্রয়ােজনে কাউন্সিলে ভোটারদের ভোট কালো টাকার মাধ্যমে কিনার নির্দেশ দেন বিভিন্ন মামলার আসামী তোতা মিয়া বলে নেতাকর্মীরা জানান। সেই আলোকে তোতা মিয়ার ভাই জাকারিয়া সহ তার কিছু অনুসারী কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে অনেক কাউন্সিলারদের ভােট কিনে নেন। সম্মেলনে তোতা মিয়া সভাপতি পদ থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা থাকলে তার ভাই জাকারিয়া সভাপতি পদে প্রার্থী হয়।
কারাগারে থাকার পরও একজন একজন চিহ্নিত অপরাধী কীভাবে প্রার্থী হলো এসব অভিযোগ সম্মলনে ক্লীন ইমেইজের সভাপতি প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত কমিটির আহবায়ক ফখর উদ্দিন, অপর দুই সভাপতি প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল খালিক, বোরহান উদ্দিন মহরী অভিযোগ আকারে বক্তব্যের মাধ্যমে সম্মেলনে আগত নেতৃবৃন্দের কাছে জোরালো ভাবে তুলে ধরেন। কিন্তু তাদের কোন অভিযোগ আমলে না নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কানাইঘাটের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক প্রাপ্ত নেতা মোহাম্মদ আলী দুলাল কাউন্সিলরদের ভোট গ্রহণে যান। ফখর উদ্দিন, আব্দুল খালিক তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, কিছু নেতা তাদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য অসংখ্য অপরাধমূলক কর্মকান্ডসহ রাষ্ট্র বিরোধী, চোরাচালান, মাদক, ইয়াবা মামলার আসামী তোতা মিয়ার পক্ষে অবস্থান নেন সম্মেলনে। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী যারা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে অপরাধ কর্মকান্ড করেছেন, মাদক, ইয়াবা ব্যবসা করছেন, চোরাচালানে জড়িত রয়েছে এবং সংগঠনের নীতি পরীপন্থী কাজে লিপ্ত রয়েছে, তারা যেন তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে না আসতে পারে এজন্য কঠোর রয়েছেন। কিন্তু তা জেনেও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মলনে দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আলী দুলাল সহ জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ তোতার প্রার্থীতা বাতিল না করে বহাল রেখে কাউন্সিল সম্পন্ন করেছেন। তোতা মিয়া সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ঘাটি খ্যাত লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নে সংগঠনকে কবর রচনা করা হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। তোতা মিয়ার পদ স্থগিত করে সভাপতি পদে নতুন করে কাউন্সিল দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নিবেদিত নেতাকর্মীরা জেলা, উপজেলা নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
জানা গেছে ফখর উদ্দিন সহ দলের নেতাকর্মীরা লিখিত আকারে তোতা মিয়ার অপরাধের ফিরিস্তি তুলে ধরে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তারা তোতা মিয়ার পদ স্থগিত না করলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের শরনাপন্ন হবেন এবং প্রয়োজনে আদালতে মামলা ও সাংগঠনিক ভাবে নানা ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ করবেন। এদিকে জেল থেকে ইয়াবা মামলার আসামী তোতা মিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর মিডিয়াসহ কানাইঘাট আওয়ামী লীগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন মহল এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। অনেকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ একটি বিশাল সংগঠন তারা টানা ক্ষমতায় রয়েছে। সেই দলে তোতা মিয়ার মত একাধিক মামলার একজন আসামী কিভাবে কাউন্সিলে অংশ নিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তোতা মিয়া কাউন্সিলে সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় সম্মেলনের দিন অপর তিন সভাপতি প্রার্থী তোতা মিয়া ইয়াবা সহ অনেক মামলার আসামী উল্লেখ করে আমাদের কাছে আপত্তি জানিয়ে ছিল। তারা কানাইঘাট আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক প্রাপ্ত নেতা সম্মেলনের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আলী দুলাল সহ জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে তোতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরেন। কিন্তু সম্মেলন পরবর্তী ভোট গ্রহণ প্রক্রীয়া শেষে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রেজাল্ট ঘোষণা করা হলেও এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন এবং সম্মেলন পরবর্তী বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন আছে, এখনো চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। শুনেছি জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে অপর তিন প্রার্থী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তোতা মিয়ার ভাই জাকারিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তার ভাই আওয়ামী লীগের নিবেদিত একজন কর্মী। এলাকায় সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, যার প্রমাণ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীরা তাকে ভােট দিয়ে সভাপতি নির্বাচিত করেছেন। তার ভাই’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে দাবী করে বলেন, একটি কুচক্রী মহল তার ভাই’র বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।