জামালপুর প্রতিনিধিঃ
জামালপুর সদর উপজেলা কেন্দুয়া ইউনিয়নের গহেরপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যকর্মীদের অবহেলায় প্রসবের সময় এক নবজাতক কন্যাশিশু মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় প্রসূতির বিক্ষুব্ধ স্বজনরা ক্লিনিক ঘেরাও করে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। গতকাল বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে এ ঘটনার পর থেকে জনসমূদ্রে পরিনত হয় কমিনিউটি ক্লিনিক প্রাঙ্গন। এ সময় শত শত উৎসাহী জনতা বিবরণ দিতে থাকেন এ ক্লিনিকের গর্বপাতের নামে করা কালো ইতিহাসের।
জানা গেছে, জামালপুর সদর উপজেলার শীতলকুর্শা গ্রামের ইজিবাইক চালক লিটন মিয়ার প্রসূতি স্ত্রী শাপলা বেগমকে (২২) গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পাশের কেন্দুয়া ইউনিয়নের গহেরপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে যান সন্তান প্রসবের জন্য। ক্লিনিকের প্রশিক্ষিত দাই শিউলী বেগম ও আয়া আলেয়া বেগম তাকে স্বাভাবিক প্রসব করানোর চেষ্টা করেন। কয়েক ঘন্টা সময় পার হয়ে গেলেও প্রসূতি শাপলা বেগম কাজটি না পারলে তাকে না করে দিতে অনুরোন করেন দাই শিউলী বেগমকে। কিন্তু এর পরও চেষ্টা চালিয়ে যান দাই। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি মৃত কন্যা নবজাতক প্রসব হয়। প্রসূতি ও তার স্বজনদের কান্নাকাটিতে ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয় উৎসুক গ্রামবাসী কমিউনিটি ক্লিনিক ঘেরাও করে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন। খবর পেয়ে প্রসূতির গ্রামের বাড়ি, এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে তার স্বজনরাও সেখানে ভিড় করেন।
এ সময় প্রসূতি শাপলা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন, কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, “আপনেরা পারবেন না আমারে ছাইড়া দেন। কয় কি আর একটু আর একটু। আমি যাবার চাইছি। তাও আমারে যাবার দেয় না। আমারে ছাড়ে না। আমি কইছি আমার বাচ্চার ক্ষতি হইলে বাচ্চাডা ভইরা দিয়ন নাগবো। আমি স্বাস্থ্যকর্মী শিউলী বেগমের শাস্তির দাবী করছি।”
ওই প্রসূতির অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে ক্লিনিকটির দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) ফজিলাতুন্নেছা ফেন্সী এ প্রতিনিধির কাছে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
খবর পেয়ে জামালপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. আবু তাহের এবং সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ভুক্তভোগী প্রসূতি ও তার স্বজনদের সাথে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করে বিষয়টি সুরাহা করা হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বেলা সাড়ে ৪টার দিকে ওই প্রসূতিকে বাড়িতে নিয়ে যায় তার স্বজনরা।
মেডিকেল অফিসার ডা. আবু তাহের এ ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রসূতি ও তার স্বজনদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি সুরাহা করা হয়েছে। প্রসূতির আগে থেকেই হয়তো কোনো সমস্যা ছিল। ফলে মৃত নবজাতক প্রসব হয়েছে। ওই ক্লিনিকের প্রশিক্ষিত দাই শিউলী বেগমই প্রসবের সব কাজ করে থাকেন। এখানে দায়িত্বে অবহেলা হওয়ার মতো কিছু হলে তা খতিয়ে দেখা হবে। ওই প্রসূতি বর্তমানে সুস্থ আছেন। স্বজনরা তাকে বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
ক্লিনিকের প্রশিক্ষিত দাই শিউলী বেগম এ ঘটনার দুঃখ প্রকাশ করলেও, প্রসূতির ঘটনার তার দায় রয়েছে বলে শিকার করেছেন।