জামালপুরে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন; রহস্যজনক কারণে প্রশাসন নিরব

আবু সায়েম মো.সা’-আদাত উল করীমঃ 

জামালপুরের মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিনরাত অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হলেও রহস্যজনক কারণে উপজেলা প্রশাসন নিরব। এলাকাবাসী অনেকেই অভিযোগ করেন উপজেলা ও জেলা প্রশাসন বালু ও ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি। যার ফলে দিনদিন তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এলাকাবাসী বলেন, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় তারা কোন না কোন ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই এই অবৈধ্যভাবে ড্রেজার বসিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা আরো জানান, মেলান্দহ উপজেলার পশ্চিম ঘোষেরপাড়া ও কাহেতপাড়া এলাকার ঝারকাটা নদ থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনে কাহেতপাড়া এলাকার বড় একটি সেতু ও ঘোষেরপাড়ার ফসলি জমিসহ বসতবাড়ি হুমকির মুখে পড়ছে।
অন্যদিকে মাদারগঞ্জ উপজেলার আদারভিটা ইউপির পুড়াবাড়ি এবং সিধুলী ইউপির চরদুধিয়াগাছা এলাকায় একইভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে কিছু বালুদস্যু। এতে দুধিয়াগাছা গ্রামের বড় একটা সেতু হুমকির মুখে পড়েছে।
গত কয়েক মাস ধরে ছবিলাপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম, বারেক, চর ঘোষেরপাড়া গ্রামের মালেক মেকার, পশ্চিম ঘোষেরপাড়া গ্রামের রুবেল, সুরুজর উদ্দিনের ছেলে মাফিজ, হরিপুর গ্রামের হাবিজুর ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। বালু উত্তোলনের কারণে চর ঘোষেরপাড়া, পশ্চিম ঘোষেরপাড়া, দক্ষিণ কাহেতপাড়া, উত্তর কাহেতপাড়া, পুরাবাড়ী, হেমড়াবাড়ী, চরদুধিয়াগাছা এলাকার আবাদি জমি ও বসতবাড়ির জনপদ হুমকির মুখে পড়েছে। চর ঘোষেরপাড়ায় ও চরদুধিয়াগাছায় এরই মধ্যে ফসলি জমি ভেঙে পড়ছে।
জানা গেছে, দক্ষিণ কাহেতপাড়া ব্রিজের কাছে দু’টি ও চর ঘোষেরপাড়া এলাকায় ১টি পুড়াবাড়ি একটি এবং চরদুধিয়াগাছা এলাকায় একই স্থানে ৩টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। চারদিকে বড় বড় মেশিনগুলো চলায় বিকট শব্দ এবং মেশিনের কালো ধোঁয়া অনবরত বায়ু দূষণ করছে। ড্রেজারের পাইপগুলো নেয়া হয়েছে বিভিন্ন মানুষের ফসলি জমির মধ্য দিয়ে। এতে পাইপ ফেটে অনেক ফসলি জমিতে বালু জমে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। এ নিয়ে ড্রেজার মালিক ও জমি মালিকদের মধ্যে প্রায় বাক-বিতন্ডার সৃষ্টি হচ্ছে। এক স্থান থেকে দীর্ঘদিন বালু তোলার ফলে বড় বড় গর্তে সৃষ্টি হয়েছে।
মাদারগঞ্জ উপজেলার ঝারকাটা নদী পথে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন ওই এলাকার প্রভাবশালী মমতাজ, রব্বানী, তনা ও মনোহর আলী। তাদের দাপটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে নদী পাড়ের শতাধিক পরিবার। অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে তাদের আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে, এখন বাড়ির আঙিনাও ভাঙতে শুরু করেছে।
নদী পাড়ের বাসিন্দা খালেক, তারা মিয়া, মহবত, মনির মিয়া, ছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, তারা এ অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের কাছে কয়েকদফা আবেদন নিবেদন জানানোর পরেও বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। উল্টো ড্রেজার মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিচ্ছে।
কাহেতপাড়ার কামাল জানান, ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনে তাদের ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু।
এ বিষয়ে মাদারগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ড্রেজার মেশিন অবৈধ, আর যারা ড্রেজার দিয়ে বালু তুলবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বালু উঠানোর তথ্য পেয়েছি, খুব দ্রুত এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মেলান্দহ উপজেলা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কামরুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে এরই মধ্যেই অভিযান চালিয়ে মেলান্দহের বিভিন্ন এলাকায় কিছু ড্রেজার মেশিন পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
মেলান্দহের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামীম আল ইয়ামীনের সাংবাদিকদের জানান, উপজেলার ভূমি অফিসের অফিসারদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এ উপজেলাতে যেখানেই বালু উঠানো হবে, সেখানেই অভিযান চলবে।
শেয়ার করুন