মেলান্দহ কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা প্রায় এক কোটি টাকা চুরির দায়ে গ্রেপ্তার

আবু সায়েম মোহাম্মদ সা’-আদাত উল করীম:
জামালপুরের মেলান্দহে কৃষি ব্যাংকের বাজার শাখায় বেশ কয়েকজন গ্রাহকের হিসাব থেকে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা চুরি হয়ে যাওয়ার অভিযোগে ভিত্তিতে মোঃ মাসুদুর রহমান নামে একজন কর্মকর্তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ২৫ নভেম্বর (সোমবার) বিকালে ময়মনসিংহ বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপকসহ চার সদস্যদের একটি দল তদন্ত শুরু করে ব্যাংকের শাখাটিতে লেনদেন যাচাই করে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের প্রাথমিক সত্যতা খুঁজে পান। পরে মাসুদুর রহমানকে মেলান্দহ থানায় সোপর্দ করেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, দুবাই প্রবাসী রফিকুল ইসলামের একটি সঞ্চয়ী হিসাব রয়েছে কৃষি ব্যাংকের মেলান্দহ বাজার শাখায়। তিনি রবিবার সকালে জামালপুর শাখায় গিয়ে জানতে চান তার একাউন্টে মোট কত টাকা জমা আছে। ব্যাংক থেকে জানানো হয় তার হিসাবে কোনো টাকা জমা নেই। অথচ সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ২১ লাখ টাকা জমা ছিল। তিনি বেলা ২টার দিকে মেলান্দহ বাজার শাখায় গিয়ে নিশ্চিত হন বর্তমানে তার হিসাবে টাকা নেই। তিনি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মোঃ শফিকুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। বিষয়টি নিয়ে শাখা ব্যবস্থাপক কথা বলেন দ্বিতীয় কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানের সাথে। গ্রাহক মোঃ রফিকুল ইসলামের হিসাব শূন্যের বিষয়ে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। এ সময় হিসাব যাচাই করলে বেশ কয়েকজন গ্রাহকের জমার ক্ষেত্রে বড় অংকের গড়মিল ধরা পড়ে। কৃষি ব্যাংকের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা অবহিত হলে সোমবার বিকেলে ময়মনসিংহ বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক মোঃ দিদারুল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে চার সদস্যদের একটি দল মেলান্দহে পৌঁছে। তারা গ্রাহকের টাকা আত্মসাত ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত কাজ শুরু করেন। দ্বিতীয় কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বেশ কয়েকজন গ্রাহকের হিসাব থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা স্থানান্তর করেছেন বলে তারা নিশ্চিত হন।
বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক দিদারুল ইসলাম মজুমদার বলেন, অভিযুক্ত মোঃ মাসুদুর রহমানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রাহকদের হিসাব থেকে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা আত্মসাতের ধারণা পাওয়া গেছে। টাকার পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। আপাতত ব্যাংকের পক্ষ থেকে মেলান্দহ থানায় একটি মামলা দায়ের করে দ্বিতীয় কর্মকর্তা মোঃ মাসুদুর রহমানকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। পরে প্রধান কার্যালয় থেকে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত ও অডিট টিম পৌঁছে মূল তদন্ত শুরু করবে। তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে ঘটনাটি আড়াল করতে গিয়ে শাখা ব্যবস্থাপক মোঃ শফিকুল ইসলাম জরুরি ভিত্তিতে রবিবার রাতে রোকনুজ্জামান চৌধুরী নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে থেকে ১৮ লাখ টাকার চেক নিয়েছেন বলে অভিযোগ মিলেছে। এ প্রসঙ্গে মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি না। টাকা আত্মসাতকারীর শাস্তি হবেই। বেশ কয়েকজন গ্রাহকের হিসাব থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা সরানো হয়েছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। আমি শুধু ব্যাংকের ইমেজের চিন্তা করেছি। ঘটনা আড়াল করতে চাইনি। গ্রাহক রোকনুজ্জামানের কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকার একটি চেক ধার হিসেবে নিয়েছি। তার টাকা ফেরৎ দেওয়া হবে। এটা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রেজাউল ইসলাম খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,ময়মনসিংহ বিভাগী মহাব্যবস্থাপক সহ চারজন কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে মোঃ মাসুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রাতেই এ বিষয়ে আমরা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকের) কাছে একটি এজাহার পাঠিয়ে দিয়েছি।
শেয়ার করুন