মাধবপুর প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শিয়ালউড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ করেছেন অভিভাবক, গ্রামবাসী ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। জানা যায়, মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের শিয়ালউড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতির। প্রতিবছর সরকার রুটিন মেইটেনেন্স, স্লিপ ও ক্ষুদ্র মেরামতসহ বিদ্যালয়ের উন্নয়নে আর্থিক বরাদ্দ দিলেও একটি ভবন রং করা ছাড়া আর কোন উন্নয়ন হয়নি বিদ্যালয়টির। বাকী টাকারও কোন হদিস নাই। এমন অভিযোগ প্রায় সবার। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৪ বছর যাবত এই বিদ্যালয়ের দায়িত্বে আছেন প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলাম। ৬৪৭ জন শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠানে আছেন ১০ জন শিক্ষক। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, রুটিন ম্যান্টিন্যান্সের ৪০ হাজার টাকা, ওয়াশব্লকের ২০ হাজার টাকা, প্রাক-প্রাথমিকের শ্রেণীর ১০ হাজার টাকা, স্লিপের ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়া ছাত্র/ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। উপবৃত্তি সুবিধাভোগীদের ছবিসহ উপবৃত্তি রেজিস্টার থাকার কথা থাকলেও সরজমিনে গিয়ে উপবৃত্তির রেজিস্টারের কোন অস্তিত্ব খোঁজে পাওয়া যায়নি। নামে মাত্র রয়েছে একটি প্রাক প্রাথমিকের শ্রেণী কক্ষ। প্রাক প্রাথমিকের শ্রেণী কক্ষটি সজ্জিত থাকার থাকলেও শুধু দুটি মাদুর বিছানো রয়েছে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাক প্রাথমিকের শ্রেণী কক্ষে মাদুরে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কয়েক জন ছাত্র ছাত্রী বসে আছে। একজন শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে থাকলেও নেই কোন প্রাক প্রাথমিকের ছাত্র/ছাত্রীদের জন্যে নির্ধারিত খেলাধুলা সামগ্রী। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন জাতীয় পতাকা বিতরণ ও চিঠির মাধ্যমে বাঁশের লাঠি পরিহার করে এসএসএফ স্টিলের পাইপে পতাকা টানানোর নির্দেশ দিলেও ওই বিদ্যালয়ে বাঁশেই টানিয়ে রাখা হয়েছে জাতীয় পতাকা। অফিস কক্ষসহ প্রতিটা শ্রেণী কক্ষই অপরিচ্ছন্ন। ভেঙে পড়ে আছে শিশুদের একমাত্র খেলার সরঞ্জাম দোলনাটিও। খালি পড়ে আছে স্থাপিত সততা স্টোরের আলমিরাগুলো। হদিস নেই সরকারের দেওয়া ল্যাপটপ। একাধিক বার চেয়েও পাওয়া যায়নি বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যয়ের হিসাব। অফিস কক্ষে টানানো আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেড়া দুটি ছবি। এসব ব্যাপারে শিক্ষা কর্মকর্তাকেও সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের হিসাব দেখাতে পারেনি প্রধান শিক্ষক। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় পরিদর্শন বইতে উল্লেখ করেছেন দ্বায়িত্বরত কর্মকর্তাগণ। এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রৌশন আলী ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য রোকিয়া আক্তার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের কথা স্বীকার করেন। তারা বলেন, এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান, প্রতিষ্ঠানের অনুন্নয়নও অর্থের হিসাবের অস্বচ্ছতা রয়েছে। এমনকি তিনি আরো বলেন, এই বিদ্যালয় থেকে কোন ছাত্র/ছাত্রী পরিক্ষা পাস অন্য কোন হাই স্কুলে ভর্তি করতে অনিহকা প্রকাশ করে। বর্তমানে অন্যান্য শিক্ষকদের আচার-আচারণ তেমন ভাল নয়। এসব অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে গ্রামবাসী সভা করে বিদ্যালয়ের অর্থকড়ির সঠিক হিসাব দেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন কিন্তু নির্ধারিত সময় ও তারিখে ভিতর প্রধান শিক্ষক সন্তোষজনক ভাবে গ্রামবাসীকে হিসাব বুঝাতে পারেনি তাই গ্রামবাসী লিখিত ভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে শিয়ালউড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে সকল কাজ চলমান আছে। আস্তে আস্তে সব কাজ করবো। বিদ্যালয়ের পরিদর্শন বই এবং হিসাব ভাউচার আমি বাড়িতে নিয়ে রেখেছি। এ ব্যাপারে মাধবপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দ্বিজেন্দ্র চন্দ্র আচার্য জানান, গত ৪ নভেম্বর আমিসহ সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গিয়ে অনেক বিষয়ে অসঙ্গতি পাই। পরিদর্শন বহিতে আমরা নোট দিয়ে এসেছি। এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ
শেয়ার করুন