- মৌলভীবাজার প্রতিনিধি.
২২বছর বয়সী সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে গিয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তার বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তর্তী ৯ নম্বর ইসলামপুর ইউনিয়নে বনগাঁও গ্রামের ফুল মিয়ার স্ত্রী সৌদি ফেরত রুবিনা বেগম। সৌদি আরবে নির্যাতনের বিবরণ শুনলে গা শিউরে উঠে।
গত মাসের ২৬ নভেম্বর সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার দুদিন পর (২৮নভেম্বর) শ্রীমঙ্গলের ‘মুক্তি মেডিকেয়ার’ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় গৃহকর্মীতে। তার অর্থের অভাবে ভালভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে ১ডিসেম্বর রবিবার বিকাল তিনটার দিকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি চলে যায়।
মুক্তি মেডিকেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে হাসপাতালের সেবক পংকজ তালুকদার বলেন, ওই হাসপাতালের চিকিৎসক সাধন চন্দ্র ঘোষ ও প্রধান সেবিকা দীপ্তি দেব ওই চিকিৎসা দিয়েছেন। সে হাসপাতালে ভর্তির সময় মানসিক অবস্থায় ছিল।
তবে হাসপাতালের চিকিৎসক সাধন চন্দ্র ঘোষ ও প্রধান সেবিকা দীপ্তি দেব জানান,মহিলার যৌনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পোড়া ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ক্ষতগুলো সারতে একটু সময় লাগবে। ওই মহিলা শারীরিক নির্যাতনের কারণে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে কিছুটা মানসিক চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন।’
নির্যাতিত মহিলার স্বামী ফুল মিয়া জানান, সরকারের সহায়তায় গত ২৬ নভেম্বর দেশে ফিরে এসেছে। বাড়ি ফেরার পর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর তাকে মুক্তি মেডিকেয়ারে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে বিদেশে মৃত্যুর মূখ থেকে আধমরা হয়ে ফিরেছে। টাকা রোজগারের আশায় গেল, একটি টাকাও দেশে পাঠাতে পারেনি।’
ফুল মিয়া জানান, আমার বিয়ের ৭/৮ মাসের দিকে স্থানীয় দালাল মোস্তফা কামাল এর প্রলোভনে চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল সৌদি আরবে পাড়ি দেয়। নেয়ার সে বলে ছিল সেখানে গৃহকর্মীর কাজের ভিসা। ভিসার পাওয়ার পর সৌদি আরবের দাম্মামে পৌঁছানোর পর এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন, ৩/৪ লাখ টাকায় তাকে যৌনকমী হিসাবে বিক্রি করা হয়েছে। যৌনকাজে লিপ্ত না হলে তার ওপর চালানো হয় নানাভাবে নির্যাতন। তাকে একটি কক্ষ রেখে প্রতিদিন কয়েকজন যুবক তাকে যৌন কাজ করতো। যৌনকাজে জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে বুক, স্পর্শকাতর জায়গা ওরা ছেঁকা দিয়েছে। পিটিয়ে হাত-পা ও উরুতে জখম করেছে। প্রতিদিন দলবেঁধে ৪/৫ জন মিলে যৌন নির্যাতন করত, তখন সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতো। পরে এক পর্যায়ে সৌদি আরবের পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
ফুল মিয়া আরো বলেন, ‘আদম ব্যবসায়ী’ মোস্তফাকে জানালে সে মিথ্যা কথা বলে উড়িয়ে দেয়। এক পর্যায়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার পর ৬ মাস ২৬ দিন পর দেশে ফেরেন আমার স্ত্রী।
ফুল মিয়া জানান, আমি বাঁশের কাজ করে অভাব অনটনে সংসার চলছিল। দালাল মোস্তফা তখন আমার স্ত্রীকে বিদেশ পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে প্রথমে রাজি না হলে পরে অন্যান্য দালাল দিয়ে বহু টাকা আয়ের লোভ দেখানো হয়। - দালাল মোস্তফা তাকে জানায়, মোস্তফা নিজের মেয়ে পরিচয়ে বিদেশে পাঠাবে, সেখানে সে যতেœ থাকবে, পাসপোর্ট-ভিসা সব করে দেওয়া হবে, কোনো টাকা লাগবে না। এসব প্রলোভনে রাজি হয়ে যাই। বিদেশ যাওয়ার পরপরই প্রথম কয়েকদিন যোগাযোগ করলেও পরে আর তার স্ত্রী যোগাযোগ করতে পারেননি।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে স্থানীয় গণমাধ্যম দালাল মোস্তফা কামালের বাড়িতে গেলে সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে জানানো হয়, মোস্তফা ‘বাড়িতে নেই’। - রুবিনার বাবা সিদ্দেক আলী জানান, বারবার দালাল মোস্তফা কামালের কাছে রুবিনার খবর নিতে গিয়েছি। দালাল মোস্তফা বলেছে, সে সৌদির কারাগারে আছে।’
- কমলগঞ্জের উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, মহিলার চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং মামলা করার পরিকল্পনা চলছে।’
সৌদি ফেরত গৃহকর্মী রুবিনা যৌন নির্যাতনে মানসিক বিকারগ্রস্থ
শেয়ার করুন