জামালপুরে এক সপ্তাহে বিজিবি ও পুলিশের প্রশিক্ষণ গুলিতে আহত ২ আতঙ্কিত জেলাবাসী

আবু সায়েম মোহাম্মদ সা’-আদাত উল করীমঃ
গত ২৮ নভেম্বর জামালপুর শহরের বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন গ্রাম পাথালিয়া জ্যোতি ( ৮) নামে একটি শিশু ঘরে থাকা অবস্থায় গুলি বিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। বিজিবি’র প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে ছুড়ে আসা গুলি থেকেই ‌শিশু জ্যোতি আহত হলে বিজিবি তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করেছিল। তার রেশ কাটতে না কাটতে ৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার জামালপুরে পুলিশের প্রশিক্ষণে ছোড়া গুলিতে এক বৃদ্ধ আহত হয়েছেন। তবে তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা শহরের পাথালিয়া গুয়াবাড়িয়ায় নিজ বাড়িতে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
আহত আব্দুর রহিম (৬৫)তিনি ওই গ্রামের মৃত সাহা মাহমুদের ছেলে। তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও বিজিবি সংবাদ মাধ্যমকে জানায়, আব্দুর রহিমের বাড়ির দুই কিলোমিটার দূরে চন্দ্রায় বিজিবি ক্যাম্পে পুলিশের শীতকালীন মহড়া চলছিল। সেখান থেকে একটি গুলি এসে ঘরের টিনের বেড়া ভেদ করে রহিমের পায়ে লাগে।
আব্দুর রহিমের মেয়ে কোহিনুর বেগম বলেন, তার বাবা জোহরের নামাজ পড়ে খাটের উপর শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। বেলা ৩টার দিকে হঠাৎ একটি গুলি এসে ঘরের টিনের বেড়া ভেদ করে তার পায়ে লাগলে তিনি চিৎকার দিয়ে ওঠেন।
পরে পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান বলে কোহিনুর জানান।
এই ঘটনায় জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাছির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বিজিবি ক্যাম্পে পুলিশের পাঁচ দিনব্যাপী শীতকালীন মহড়া চলছিল। এ ঘটনা কীভাবে ঘটল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
“গুলিবিদ্ধ আব্দুর রহিমের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। ঘটনার পর থেকে পুলিশের ফায়ারিং প্রশিক্ষণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।”
জামালপুর সদর থানার ওসি মো. সালেমুজ্জামান সংবাদ মাধ্যমে জানান, রোগীর স্বজনেরা একটি গুলি থানায় জমা দিয়েছেন।
গতকাল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বাছির উদ্দিনসহ পুলিশের একটি দল হাসপাতালে গিয়ে আহত আব্দুর রহিমকে দেখতে ও তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে হাসপাতালে যান।
জামালপুর বিজিবির ৩৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএম আজাদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বিজিবি ক্যাম্পের ফায়ারিং স্পটে পুলিশের প্রশিক্ষণ চলছিল। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক গাজী মো. রফিকুল হক বলেন, “বাম পায়ের এক দিকে গুলি ঢুকে পা ফুড়ে অপরদিকে বেরিয়ে গেছে। ক্ষতস্থান দেখে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। তিনি বর্তমানে সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। তবে এখন শঙ্কামুক্ত।”
এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পর পর বিজিবি ও পুলিশের প্রশিক্ষণ ফায়ার থেকে এভাবে একই এলাকার প্রতিবেশী শিশু ও বৃদ্ধ হওয়ায় জেলা জুড়ে সকল মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকাবাসী বলেন এই ঘটনার ফলে তাদের মৃত্যুও হতে পারতো।  মানুষ ও প্রাণির জান মাল নিছিদ্র নিরাপত্তার বলয় তৈরী না করে ফায়ারিং প্রশিক্ষণ চলতে পারে না।
এদিকে ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার জামালপুর -৩ আসনের মেলান্দহ মাদারগঞ্জ থেকে ৬ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মির্জা আজম এমপি এই প্রতিবেদকে মোবাইল ফোনে তার মতামত ব্যক্ত করে বলেন বিজিবি ও পুলিশের উচিত জরুরী ভিত্তিতে আহতদের ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া। সেই সাথে তিনি আরো জানান আমি অবিলম্বে তাদের কে নির্দেশ প্রদান করছি ফায়ারিং সাইটটি শ‌‌তভাগ নিরাপত্তার সুনিশ্চিত করা। অপর দিকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব ডা মুরাদ হাসান এমপি ফোনে তার  মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তিনি আরও বলেন আমি অনতিবিলম্বে কতৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করছি সম্পূর্ন নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কেউ ফায়ারিং প্রশিক্ষণ করতে পারবে না। এছাড়া স্থানীয় এলাকাবাসী দায়িত্ব অবহেলাকারি পুলিশ ও বিজিবি’রকর্মকর্তার অপসারণ দাবি জানান। এদিকে জামালপুর সদর -৫ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব মো মোজাফফর হোসেন বলেন ঘটনাটি বেদনাদায়ক আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলবো ভবিষ্যতে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য। অপরদিকে জামালপুর পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন বিপিএম( বার) পিপিএম  তিনি বলেন ঘটনাটি সত্যিই অনাকাঙ্ক্ষিত ও খুবই দুঃখজনক। এর আগেও বিজিবি’র  একই স্পট থেকে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে । প্রকৃত পক্ষে সেই স্থানটি আমার কাছে মনে হচ্ছে তা বৈজ্ঞানিক ভাবে উপযুক্ত নয়। নতুন করে চিন্তা করে প্রশিক্ষণের স্থান নির্ধারণ করা জরুরি। আল্লাহর অশেষ রহমতে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে তিনি হেফাজত করেছেন। আমরা কখনোই ঘটনা কামনা করি না। এমন দুর্ঘটনা আর যাতে না ঘটে এমনটি আশা করি। আমরা আহত ব্যক্তির চিকিৎসার ও তার পরিবারের খোঁজ খবর নিচ্ছি।
শেয়ার করুন