চাউতলী বিটের অবাধে গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি.
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সংরক্ষিত বনের চাউতলী বিটে সামাজিক বনায়নের নামে অবাধে গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলন।
১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে শ্রীমঙ্গল চোমুহনা চত্বরে লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলন-এর ব্যানারে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্টিত হয়।
সংগঠনের সভাপতি জলি পাল এর সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে রাখেন সাংবাদিক ও কলামিষ্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি মহসিন পারভেজ, লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলন-এর যুগ্ম আহবায়ক কাজী শামসুল ইসলাম, জাভেদ ভূঁইয়া, বন্যপ্রাণীপ্রেমী সোহেল শ্যাম। দেশের প্রাকৃতিক বন ও সংরক্ষিত বনভূমি যেভাবে দিনে দিনে ধ্বংস হচ্ছে তা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। তাই বনভূমিগুলো রক্ষা করার দিকে সরকার মনোযোগ দিতে হবে।প্রতি বছর বন বৃদ্ধির চাইতে বেড়ে চলেছে বন উজাড়ের হিসাব।
‘বন বাঁচলে পরিবেশ-প্রতিবেশ ও প্রকৃতি এবং মানুষ বাঁচবে, বাংলাদেশ বাঁচবে। লাউয়াছড়া বনের ভিতরে কোনরুপ সামাজিক বনায়ন চলবে না। পরে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।’
প্রসঙ্গত: মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যানের পার্শ্ববর্তী বন বিট চাউতলী। এ বিটের ফলের বাগানের আয়তন ৩২ হেক্টর। এখানে ৯০ শতাংশ প্রাকৃতিক ফলের গাছে পরিপূর্ণ। যে গাছগুলোর বয়স প্রায় ৫০ থেকে একশ বছর এবং এ গাছগুলোই বন্যপ্রাণীদের দৈনিক খাবারের জোগান দিয়ে থাকে।
এখানে রয়েছে চাপালিশ, বহেরা, ডুমুর, হরিতকি, আমলকি, জারুল, রিঠা, ডেউয়া, লটকন, কাঠ বাদাম, লুকলুকি, কাউফল, বন উরি, কাটা জামসহ অর্ধশতাধিক ফল গাছ। যা থেকে ফল আহরণ করেই বেঁচে আছে বণ্যপ্রাণীরা।
৩২ হেক্টরের এ ফলের বাগানে মাত্র ১০ শতাংশে রয়েছে উপকারভোগীদের লাগানো একাশিয়া এবং বেলজিয়া গাছ। কিছুদিন আগে সেই একাশিয়া (আকাশমনি) এবং বেলজিয়া গাছগুলো পাশাপাশি প্রায় সব ফলের গাছ ‘লাল নম্বরযুক্ত’ করে কেটে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ উঠেছে মৌলভীবাজারের বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘সংরক্ষিত বনে সামাজিক বানায়নের নামে একাশিয়া আর বেলজিয়াম গাছ লাগানোর পক্ষে ছিলাম না। এগুলো করাই হয়েছে দূরভিসন্ধিমূলকভাবে। সামাজিক বনায়নের নাম করে বনের শতবর্ষী প্রাকৃতিক ফলের গাছপালা ধ্বংস করার পাঁয়তারা চলছে। অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।’
এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল খান বলেন, ‘ফলের গাছের ওপরই বন্যপ্রাণীরা সরাসরি নির্ভরশীল। বনের গাছগুলো যত কমবে ততই কিন্তু বণ্যপ্রাণীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।’
জানতে চাইলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আ ন ম আবদুল ওয়াদুদ বলেন, আগের তালিকা আর গ্রহণ করা হবে না। চাউতলী বিটে চাপালিশ, হরিকতি, বহেলা, ডুমুর, জারুল, লোহাকাঠসহ প্রাকৃতিক ফলের গাছগুলো বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সামাজিক বনায়নের আওতায় লাগানো আকাশমণি-বেলজিয়াম গাছগুলোকে পুনরায় মার্কিং (শনাক্ত) করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শেয়ার করুন