মৌলভীবাজার জেলায় শীত জেঁকে বসেছে-সকাল থেকে সূর্যের দেখা মিলছে না

সাইফুল ইসলাম,
শীত জেঁকে বসেছে মৌলভীবাজার জেলায়। বইছে মৃদু বাতাস। মৃদু বাতাসের কারনে মৌলভীবাজার জেলায় আজ বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। আজ শনিবার শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ সারাদিন মৌলভীবাজার জেলায় সুর্যের দেখা মেলেনি। আবহাওয়া ছিল হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন। তবে ভোরে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল সারা জেলা। সকাল থেকে সুর্যের দেখা না মিলায় শীতের তীব্রতা বাড়ছে। এতে চা বাগানে আগুন জ¦ালিয়ে শীত নিবারণ করছেন চা শ্রমিকরা।
এদিকে চা অঞ্চলখ্যাত শ্রীমঙ্গলে উপজেলায় শীতের তীব্রতা একটু বেশি অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নি¤œ আয়ের মানুষ ফুটপাতের ভিড় করছেন।
ফুটপাতে শীতের কাপড় বিক্রেতা কখন মিয়া ও ফুলের গাছ বিক্রেতা আবুল হোসেন ও জুতা ব্যবসায়ী মোমিন মিয়া বলেন,কয়েকদিন ধরে শীত বাড়ছে শ্রীমঙ্গলে।বিক্রি ভাল হচ্ছে। ক্রেতাও বেশি। ব্যবসা বাণিজ্য ভাল হচ্ছে।
ফুটপাতে ক্রেতা সঞ্জয় দাস ও রুপা বেগম,সোনিয়া বেগমসহ অনেকে বলেন,বড় মার্কেটে শীতের কাপড় ক্রয় করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আমাদের সামর্থ নাই বড় মার্কেটে গিয়ে শীতবস্ত্র কেনার।’
ভূরভুরিয়া চা বাগানে চা শ্রমিক সোনালি কাহার ও উমা বাউরী বলেন,সরকার থেকে কোন শীতের কম্বল পাইনি। ’
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের আবহাওয়া সহকারী জাহিদুল ইসলাম মাসুম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১১.১ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি বলেন, আজ সুর্যের মুখ দেখা না যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। তিনি আরো জানান, কয়েকদিনের মধ্যে শীত আরও বাড়বে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রæয়ারি শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ২.৮ ডিগ্রি এবং ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে ১৯৯৫ সালের ৪ জানুয়ারি, ২০০৭ সালের ১৭ জানুয়ারি, ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত ডা. আবু নাহিদ  বলেন, এপর্যন্ত ২৭৯জন রোগি চিকিৎসা নিয়েছেন। বিশেষ করে হাঁপানি,জ্বর, সর্দি ও কাশি ও বুকে ঠান্ডা জনিত কারণে আক্রান্ত রোগিরা চিকিৎসা নিয়েছেন। বেশির রোগির মধ্যে শিশু ও বিদ্ধ মানুষ রয়েছেন।’
মৌলভীবাজার জেলার দূর্যোগ ত্রান ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা মো. আশরাফ আলী  বলেন, ইতোমধ্যে জেলার সাতটি উপজেলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রান ভান্ডার থেকে পাওয়া ৪১ হাজার ২০০ কম্বল (শীতবস্ত্র) শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন,বরাদ্দ আরও চাওয়া হয়েছে। আসলেই বিতরণ করা হবে।’
অপরদিকে, বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.শামীম আল ইমরান রাতে আধারে চা বাগানের পল্লীতে বসবাসরত চা শ্রমিকদের মাঝে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। চা বাগানে লোকজন সারাদিনের কাজের ক্লান্তির পর মাটির ছাপড়া ঘরে কোনো মতে ঘুমিয়ে পড়েছেন চা শ্রমিক পরিবারগুলো।
প্রচন্ড শীতের প্রকোপ থেকে আত্মরক্ষার জন্য তাদের নেই ন্যুনতম শীতবস্ত্র। চা বাগানে চা শ্রমিকদের বস্তিতে গভীর রাতের নিস্তব্ধতা। এমন সময় হঠাৎ চা শ্রমিকদের দরজায় কড়া নাড়িয়ে একজন বললেন ইউএনও স্যার আপনাদের জন্য কম্বল নিয়ে এসেছেন।
কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বুধবার দিবাগত রাতে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় চা শ্রমিকদের কষ্ট নিজের চোখে দেখতে বের হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান। এসময় তিনি বড়লেখা উপজেলার বাহাদুরপুর ও অহিদাবাদ চা বাগানের ১৬০ পরিবারে কম্বল বিতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে এই কম্বলগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দিবাগত গভীর রাতে বাহাদুরপুর ও অহিদাবাদ চা বাগানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন ইউএনও। রাত আনুমানিক ১২টায় পৌঁছান অহিদাবাদ চা বাগানে। বাগানের শ্রমিক পরিবারের লোকজন তখন ঘুমিয়ে। এমন সময় চা বাগানের দক্ষিণ লাইনের রাম রিকমনের ঘরের দরজায় কড়া নাড়লেন ইউএনও। ঘুম ঘুম চোখে ঘরের দরজা খুলেন চা শ্রমিক রাম রিকমন। তখন পরম মমতায় রামকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে ধরেন ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান। রাম রিকমনের মতো এই বাগান ও বাহাদুরপুর চা বাগনের ১৬০ পরিবার পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের বরাদ্দকৃত কম্বল। গভীর রাত পর্যন্ত দুটি চা বাগানে কখনো গাড়িতে, কখনো হেঁটে তিনি কম্বল বিতরণ করেন। এসময় শ্রমিক পরিবারের লোকজনের সাথে তিনি কথাও বলেন।
কম্বল পাওয়া অহিদাবাদ চা বাগানের রাম রিকমন বলেন, ‘হঠাৎ দরজার সামনে লোকজন ডাকছে। দরজা খুলে দেখি ইউএনও স্যার আমাদের জন্য কম্বল নিয়ে এসেছেন। উনি আমাগো দুখের কতা চিন্তা করে কম্বল নিয়ে আইছে।’
এসময় ইউএনও’র সাথে ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উবায়েদ উল্লাহ খান, উত্তর শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আহমদ জুবায়ের লিটন, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার শাখাওয়াত হোসেন, অহিদাবাদ চা বাগানের ব্যবস্থাপক কাজল চন্দ্র তালুকদার প্রমুখ।
বড়লেখা উপজেলার ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান  বলেন, ‘বড়লেখায় প্রচন্ড শীত পড়েছে। বাগানের গরিব চা শ্রমিকদের শীত-কষ্ট নিজের চোঁখে দেখার জন্যই তাদের ঘরে ঘরে কম্বল নিয়ে যাই। তবে আমাদের শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত থাকবে।’
শেয়ার করুন