বর্ণাঢ্য অনুষ্টানের মধ্য দিয়ে কুলাউড়া উদীচীর সুবর্ণজয়ন্তী উৎযাপন

  • মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
  • ১৯৬৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী জন্ম নেয় প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কুলাউড়া শাখা। নির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসে কুলাউড়া উদীচী পালন করছে এ উপলক্ষে দুইদিন ব্যাপী সুবর্ণজয়ন্তী।
  • বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সংগঠনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কুলাউড়ার স্বাধীনতা সৌধ চত্বরে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্টানের আয়োজন করে কুলাউড়া উদীচীর সুবর্ণজয়ন্তী উৎযাপন কমিটি।
    দুপুর ২ টার দিকে অনুষ্টানের শুরুতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এবং স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় জাতীয় ও দলীয় সংগীত পরিবেশনা করা হয়।
    উদীচীর সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্টান উদ্বোধন করেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ আব্দুল মালিক। পরে স্বাধীনতা সৌধ বেদীতে এক ভ্রতচারী নৃত্য ডিসপ্লে উপস্থাপনা করে ডানকান ক্যামেলিয়া স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এরপর এক বর্ণাঢ্য র‌্যালী শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্বাধীনতা সৌধ প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।
  • এই পঞ্চাশ বছরেও কুলাউড়া উদীচী বুড়িয়ে যায়নি, ফুরিয়ে যায়নি। এখনো তাদের দীপ্ত পথচলা। এরই যেন প্রমাণ দিতে আয়োজনে ছিলো নানা চমক। আয়োজনটি যদিও জৌলুশ বা আড়ম্বরপূর্ণ ছিল না তবে তা ছিল নিখোদ ভালোবাসায় পরিপূর্ণ।
    অনুষ্টানে উপস্থিত ছিলেন তরুণ কিশোরেরা ছাড়াও যুগ যুগ ধরে যাঁরা উদীচীর দর্শণকে ধারণ করছেন সেই সকল প্রবীণ ব্যক্তিত্ব। অনুষ্টানের প্রারম্ভে এক আলোচনা সভায় বক্তারা উদীচী গঠনের উদ্দেশ্য ও তা বাস্তবায়নের নানা বিষয় তুলে ধরেন। শ্রমজীবি, মেহনতি মানুষের অধিকার রক্ষায়, মৌলবাদি অপশক্তির বিরুদ্ধে উদীচীর কর্মযশ তুলে ধরা হয় বক্তব্যে।
  • বিকালের দিকে কুলাউড়া উদীচীর সুবর্ণজয়ন্তী উৎযাপন কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে কুলাউড়া উদীচীর সাধারণ সম্পাদক নির্মাল্য মিত্র সুমনের সঞ্চালনায় আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন উদীচীর সুবর্ণজয়ন্তী উৎযাপন কমিটির সদস্য সচিব অমলেন্দু চক্রবর্তি বিপুল।
    এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় উদীচীর সাবেক সহ সভাপতি, বিশিষ্ট নাট্যকার শংকর সাওজাল। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় উদীচীর সহ সভাপতি প্রবীর সর্দার, কেন্দ্রিয় উদীচীর সহ সভাপতি অ্যাড. মকবুল হোসেন, মৌলভীবাজার জেলা উদীচীর সভাপতি অ্যাড. মিজানুর রহমান, কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনু, কুলাউড়া উদীচীর সভাপতি ফজলুল হক, কুলাউড়া খেলাঘরের সভাপতি খন্দকার কামাল প্রমুখ।
  • তাদের সবার বক্তব্য একটা বিষয়ই কোরাস হয় যে, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নানা পর্বের দুর্যোগে, সংকটে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জনসাধারণের দাবি আদায়ের সংগ্রামে উদীচী যুগে যুগে রাজপথে থেকেছে। মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে উদীচী আগামী দিনেও মানুষের পাশে থাকবে বলে প্রত্যাশা করেন তাঁরা।
  • অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। কুলাউড়া উদীচীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নান্টু দাসের সঞ্চালনায় এ পর্বে ছিল দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড জলের গান, উদীচী মৌলভীবাজার শাখা শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীদের সমবেত পরিবেশনা। গান পরিবেশনায় ছিল দেশমাতৃকার অনুরাগের কথা, কখনো প্রতিরোধ-প্রতিবাদের দীপ্ত উচ্চারণ আবার কখনো ছিল আনন্দ, উৎসব মাখা গান।
  • ১৯৬৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী কুলাউড়া উদীচী প্রতিষ্ঠা লাভ করে। চলতি বছরের ১১ ফ্রেবুয়ারী ছিলো সংগঠনটির ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং ৫১তম বছরে পদার্পণ। কুলাউড়া উদীচীর সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বছর জুড়ে ছিলো নানা কর্মসূচি। এরমধ্যে গান, নাচ, কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগীতা ছাড়াও ছিলো কুলাউড়া উদীচীর ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ম্যাগাজিন প্রকাশের আয়োজন।
শেয়ার করুন