চায়ের দেশে চা মিউজিয়ামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যবহৃত চেয়ার-টেবিল

সাইফুল ইসলাম.

প্রাকৃতিক পরিবেশ সমৃদ্ধ চা শিল্পের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধরে রাখার লক্ষ্যে টি মিউজিয়াম বা চা জাদুঘরে এ পর্যন্ত ব্রিটিশ আমলে চা-বাগানে ব্যবহৃত প্রায় শতাধিক আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতার আগে চা বোর্ডের দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যবহৃত চেয়ার-টেবিলও।
ছোট ছোট চারটি কক্ষ, দু’টি পাশাপাশি, দু’টি কয়েক গজ দূরে। তাতে একদিকে নির্যাতনের হাতিয়ার হাড়ের ছড়ি, অন্যদিকে শ্রমিকদের ব্যবহৃত নানান যন্ত্রপাতি।
সড়কের পাশ ঘেষাঁ টিলার ওপর ছড়িয়ে থাকা টিনশেড ঘরগুলোর মধ্যে প্রথমটিতে ঢুকতেই চোখে পড়লো বঙ্গবন্ধুর আপাদমস্তক প্রতিকৃতি। খালি চেয়ার-টেবিলের পেছনে সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা পরিহিত বঙ্গবন্ধু ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন।
বিশাল ছবিটা দেখে মুগ্ধতা ছুঁয়ে গেল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন (১৯৫৭-৫৮)। তখন এসেছিলেন শ্রীমঙ্গল নন্দরানী চা বাগানে। সে সময় তিনি যে চেয়ারে বসে মিটিং করেছিলেন সেই চেয়ার এটি। টেবিলও সেই মিটিংয়ের। আর সেই টেবিল-চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে এখনও যেন সব কিছু অবলোকন করছেন বঙ্গবন্ধু।
টেবিলে রাখা হয়েছে পরিদর্শন বই। তাতে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বঙ্গবন্ধু চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের তথ্য জেনে।
২০০৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে লাউয়াছড়া সড়কে চা মিউজিয়ামের উদ্বোধন করা হয়। চা সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিত্যক্ত ভবনে ছোট চারটি ঘরে চালু করা হয় এই মিউজিয়ামটি।
চা জাদুঘরে চা-গাছ ব্যবহার করেই আসবাব তৈরি করা হয়েছে। সেগুলোর ওপর প্রদর্শন করা হয়েছে এই কক্ষের সংগ্রহগুলো। চা-বাগানের আগাছা পরিষ্কার করার কাঁটা কোদাল, রিং কোদাল, তির-ধনুক, চা-গাছ ছাঁটাইকাজে ব্যবহৃত কলম দাসহ ব্রিটিশ আমলে শ্রমিকদের ব্যবহৃত বিভিন্ন হাতিয়ার, আছে লোহার পাপস, চা-শ্রমিকদের জন্য ব্যবহৃত বিশেষ রুপা ও তামার মুদ্রা। ব্রিটিশ সাহেবদের গুনতির কাজে ব্যবহৃত হাড়ের ছড়ি, লাঠি,শ্রমিকদের পূজা অর্চনায় ব্যবহৃত কষ্টিপাথরের পে¬ট, ব্যবস্থাপক বাংলোয় ব্যবহৃত প্রাচীন বেতারযন্ত্র, দেয়ালঘড়ি, চা-বাগানে চারা লাগানোর কাজে ব্যবহৃত বিশেষ যন্ত্র।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লাউয়াছড়া বনে বিধ্বস্ত হয় একটি যুদ্ধবিমান। সেই যুদ্ধবিমানের অংশ বিশেষও স্থান করে নিয়ে জাদুঘরটিতে। কাঠ দীর্ঘদিন মাটির নিচে থেকে পাথরে রূপান্তরিত চার খন্ড জীবাশ্ম ঠাঁই করে নিয়েছে কাচের ফ্রেমে।
রয়েছে নেপচুন চা বাগান থেকে সংগৃহীত কেরোসিনের কুপি দিয়ে চালিত মাঝারি ফ্রিজ, মাথিউড়া চা বাগান থেকে প্রাপ্ত হাতে ঘোরানো টেলিফোন সেটও। ব্রিটিশ আমলের টারবাইন পাম্প, সার্ভে চেইন, হস্তচালিত নলকূপ, লিফট পাম্প, সিরামিকের পানির ফিল্টার, সিরামিক জার, ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রাচীন বৈদ্যুতিক পাখা, পুরনো রেডিও টেলিফোন সেট, প্রনিং দা, টাইপ রাইটার, প্রাচীন পিএইচ মিটার ও চা প্রসেসিং যন্ত্রপাতি।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের (পিডিইউ) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. একে এম রফিকুল হক বলেন, দেশের বিভিন্ন চা-বাগান থেকে আমরা এই স্মারকগুলো সংগ্রহ করেছি। খুবই ছোট পরিসরে চলছে। চেষ্টা আছে জাদুঘরটি ধীরে ধীরে বড় করার।’

শেয়ার করুন