ডিআইজি মিজান ও দুদকের পরিচালক এনামুলের বিরুদ্ধে চার্জশিট

 

বিশেষ প্রতিবেদক..

৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান ও দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (১২ জানুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশন থেকে ওই চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দুদকের জনসংযোগ দপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যলয়-১ এ দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান দলের নেতা শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছিলেন।

তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, খন্দকার এনামুল বাছির সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কমিশনের দায়িত্ব হতে অর্পিত দায়িত্ব পালনকালে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতা অপব্যবহারের মাধ্যমে ডিআইজি মিজানুর রহমানকে অবৈধ সুযোগ প্রদানের হীন উদ্দেশ্যে অবৈধ পন্থায় অর্জিত অপরাধলব্ধ ৪০ লাখ টাকা উৎকোচ বা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করে উক্ত টাকার অবস্থান গোপন করেন।

অন্যদিকে ডিআইজি মিজান সম্পর্কে বলা হয়, ‘তিনি সরকারি কর্মকর্তা হয়ে নিজের বিরুদ্ধে আনীত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আশায় অর্থাৎ অনুসন্ধানের ফলাফল নিজের পক্ষে নেওয়ার উদ্দেশ্যে খন্দকার এনামুল বাছিরকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে অবৈধ পন্থায় ৪০ লাখ টাকা ঘুষ প্রদান করেন।’

এসব অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৬১/১৬৫(ক)/১০৯ ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৮৭ এর ৫(২) এবং মানিলন্ডারিং আইনের ৪(২) ও (৩) ধারায় মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

অনুসন্ধানকালে বিশেষজ্ঞ মতামত, প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের বক্তব্য, অডিও রেকর্ডে উভয়ের কথোপকথন ও পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে প্রমাণিত হয় যে, নিজে অভিযোগের দায় থেকে বাঁচার জন্য ডিআইজি মিজানুর অসৎ উদ্দেশ্যে উৎকোচ/ঘুষ প্রদান করে খন্দকার এনামুল বাছিরকে প্রভাবিত করেন।

ঘুষ লেনদেনের চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিআইজি মিজান গত ১৫ জানুয়ারি একটি বাজারের ব্যাগে করে কিছু বইসহ ২৫ লাখ টাকা এনামুল বাছিরকে দেওয়ার জন্য রমনা পার্কে উভয় আলাপ আলোচনা করেন। এরপর তারা রমনা পার্ক থেকে একত্রে বের হয়ে ঢাকার শাহজাহানপুর এলাকায় খন্দকার এনামুল বাছিরের কাছে ২৫ লাখ টাকার ব্যাগসহ হস্তান্তর করেন। এরপর ব্যাগটি নিয়ে এনামুল বাছির তার বাসায় চলে যান।

এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি একইভাবে মিজান একটি শপিং ব্যাগে করে ১৫ লাখ টাকা এনামুল বাছিরকে দেওয়ার জন্য রমনা পার্কে আসেন উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, ‘তারা রমনা পার্কে আলোচনা শেষ করে উভয়ে পার্ক থেকে একত্রে বের হয়ে শান্তিনগর এলাকায় মিজানুর ১৫ লাখ টাকাসহ ব্যাগটি এনামুল বাছিরের কাছে হস্তান্তর করলে বাছির ব্যাগটি নিয়ে চলে যান।’

অনুসন্ধান পর্যায়ে ডিআইজি মিজান, তার দেহরক্ষী হৃদয় হাসান, গাড়িচালক সাদ্দাম হোসেনকে ৭ জুলাই এবং তার অফিস আর্ডালি সুমনকে ২৬ জুন জিজ্ঞাসাবাদ করে সংস্থাটির টিম।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মুখে থাকা ডিআইজি মিজানুর রহমান দুদকের তৎকালীন অনুসন্ধান কর্মকর্তা পরিচালক এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার বিষয়টি মিডিয়ায় ফাঁস হওয়ার পরপর এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। যদিও পরিচালক এনামুল বারবার দাবি করেন রেকর্ডকৃত বক্তব্যগুলো কণ্ঠ নকল করে বানানো।

এরপর ঘুষের বিষয়টি অনুসন্ধান করার জন্য দুদকের তিন সদস্যের একটি টিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ঘুষ লেনদেদেনর অডিও কণ্ঠ মিজান আর বাছিরেই বলে প্রমাণ হয়।

এছাড়া তিন কোটি সাত লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং তিন কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধ সম্পদের অভিযোগ স্ত্রী, ভাই ও ভাগ্নেসহ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানসহ পরিবারের চার জনের বিরুদ্ধে গত ২৪ জুন মামলা করে দুদক। ডিআইজি মিজান ও এনামুল বাছির বর্তমানে কারাগারে আছেন।

শেয়ার করুন