শ্রীমঙ্গলে নিপীড়ন বিরোধী এই সময়ের কবিতা অনুষ্ঠিত

  • মৌলভীবাজার প্রতিনিধি.
    মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিরাজনগর এলাকায় নিপীড়ন বিরোধী এই সময়ের কবিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
    ১৭ জানুয়ারী শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার সিরাজনগর গ্রামের “ভূঁইয়া” বাড়িতে নিপীড়ন বিরোধী এই সময়ের কবিতা পাঠ অনুষ্টানে গীতিকার হাসান ফকরীর সভাপতিতে প্রথম পর্ব অনুষ্ঠান উদ্ধোধন করেন বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা কমরেড আব্দুল মালিক ।
    উপস্থিত ছিলেন প্রগতি লেখক সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এ কে শেরাম,সিলেট জেলা উদীচী সভাপতি এনায়েত হাসান মানিক। কবিতা পাঠ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজন সম্মানিত। বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সহসাধারণ সম্পাদক মাধব রায়। অনুষ্টান পরিচালনা করেন জাবেদ ভূঁইয়া ও হাসান জামিল।
    বিকাল তিনটার দিকে দ্বিতীয় পর্বে আলোচনাসভা অনুষ্টিত হয়। সেখানে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম এর সভাপতিত্বে দোলন প্রভার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কথা সাহিত্যিক জাকির তালুকদার,মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সালেহ এলাহী কুটি,মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ্যাড.মিজানুর রহমান টিপু, নারায়ণগঞ্জ জেলার সমাজ অনুশীলন কেন্দ্র এর সংগঠক রঘু অভিজিৎ রায়,বিবৃতি পাঠ করেন খনন সম্পাদক বাদল শাহ আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাড পংকজ সরকার। তৃতীয় পর্ব অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীর জয়েসের সভাপতিত্বে ও জলি পালের সঞ্চালনায় কবিতা পাঠের সূচনা করেন চিনু কবির,কবি সরকার আজিজ। চতুর্থপর্ব অনুষ্ঠানে শাহেরীন আরফাত এর সভপতিত্বে ও সজল আকাশ এর সঞ্চলনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পঞ্চম পর্বে বিল্পবী আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আতিফ অনিক এর সভাপতিত্বে রাজনৈতিক ঘোষণাপত্র করেন বিজন সম্মানিত ও অনুপ সাদি।
  • নিপীড়ন বিরোধী এই সময়ের কবিতা অনুষ্ঠানে বিবৃতি বলেছেন, বাংলাদেশ বর্তমানে এক ফ্যাসিবাদী শাসন মোকাবেলা করছে। ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বরের অন্ধকার নির্বাচনের ভেতর দিয়ে এই ফ্যাসিবাদ নতুন মাত্রায় প্রবেশ করেছে। ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের সরকার সকল প্রকার ভিন্ন মতের উপর তীব্র দমন নীতি গ্রহণ করেছে, সকল বিরুদ্ধ মতের প্রতি আগ্রাসী হয়েছে। তাদের বুর্জোয়া প্রতিপক্ষ বিএনপি ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন বিরোধী প্রোগ্রামে সিপিবি, গণসংহতির মত দলের লোকেদের ওপরেও চড়াও হয়েছে। রাস্তায় জুনায়েদ সাকিকে বেধড়ক প্রহার করতে দেখা গেছে। চট্রগ্রামে নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার ৫ নেতা কর্মীকে প্রহারপূর্বক আটক করেছে পোস্টার লাগানোর দায়ে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
    এই ফ্যাসিস্ট সরকার ভারতের কাছে এতই নতজানু যে সম্প্রতি অসম শর্তে ফেনী নদীর পানি দেয়াসহ সাতটি দেশ বিরোধী চুক্তি করে এসেছে। ভারতের সাথে অসম ও অসম্মানজনক এসব চুক্তি নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ায় সরকারের পেটুয়া বাহিনীর হাতে নির্দয়ভাবে খুন হতে হয়েছে আবরারকে। আমরা আবরারসহ সরকারের হাতে শাহাদাত বরণ করা সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং এসব হত্যার সঠিক তদন্ত ও বিচারের দাবী জানাই। একই সাথে সকল চুক্তি বাতিলের দাবী জানাচ্ছি।
    সাম্প্রতিক সময়ে বিচারহীন দেশে ধর্ষণের মচ্ছব দেখা যাচ্ছে। সরকার নারীদের নিরাপরত্তা দিতে ব্যর্থ তো বটেই, তাদের মদদেই কোনো না কোনোভাবে এসব হচ্ছে। শ্রমিক কৃষকসহ প্রান্তিক জনগণ তো বটেই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রিও এই তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে না। সম্প্রতি এই শ্রীমঙ্গলেও দুটি ধর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। আমরা ধর্ষণের দ্রুততম সময়ে বিচার দাবী করি, একই সাথে ভিকটিম যেন হয়রানির শিকার না হন সেই দিকেও দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
    তথাকথিক উধার বামদের সাথে যে জোট করে হাসিনা ক্ষমতায় এসেছিল, এখন তাদের সরিয়ে প্রতিক্রিয়াশীলদের সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছে। তাদের মদদে কালা কানুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গায়ক শরিয়ত সরকারকে সম্প্রতি গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়েছে! আমরা নিপীড়ন বিরোধী এই সময়ের কবিতা এর নিন্দা জানাই এবং দ্রুত শরিয়ত সরকারের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
    অপরদিকে ভারতেও প্রতিক্রিয়াশীল হিন্দুত্ববাদী সরকার জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) নামে লাখ লাখ মানুষকে রাষ্ট্রহীন করার ষড়যন্ত্র করছে। তাদের জন্য হিটলারের জার্মানির আদলে বানানো হচ্ছে কনসান্ট্রেশন ক্যাম্প! আমরা এই এনআরসির নামে ফ্যাসিস্ট হিন্দুত্ববাদী না-নাগরিক করার ষড়যন্ত্রের নিন্দা জানাচ্ছি। একই সাথে এনআরসি বিরোধী মুভমেন্টে যারা শরিক হয়েছেন, বিশেষ করে নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া ইসলামিয়া, দিল্লি, যাদবপুরসহ সকল সকল ছাত্র বুদ্ধিজীবী ও প্রতিবাদীদের সাথে নিপীড়ন বিরোধী এই সময়ের কবিতা সংহতি জানাচ্ছে।
    নিপীড়ন বিরোধী এই সময়ের কবিতা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামের কালাকানুনের বিরোধিতা করে আসছি। আমরা জানি ফ্যাসিস্টদের কাছে দাবী জানানো অরন্যে রোদনের শামিল। তবু আমরা আবার বলছি, দ্রুত এই আইন বাতিল করুন।
    শ্রমিক কৃষকের বৃহত্তর ঐক্যই পারে এই জালিমদের পতন ঘটাতে। আমরা তার পক্ষ শক্তি হিসাবে লড়ে যাবো। দুনিয়ার সকল নিপীড়িতের পক্ষে নিপীড়ন বিরোধী এই সময়ের কবিতার অবস্থান।
    ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক। আমলা-মুৎসুদ্দী পুঁজিবাদ-সামন্তবাদ-সা¤্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদ-পুরুষতন্ত্র নিপাত যাক। মানুষের জয় অনিবার্য।
  • অনুষ্ঠানে আয়োজক কবি জাবেদ ভুঁইয়া বলেন,যুগের অনিবার্য আহবান এবং মানিবক প্রেরণা থেকে আপনিও আসুন কবিতা পাঠ ওসংহতি জানাতে এই আয়োজন।’
শেয়ার করুন