সিলেটের মাদরাসা ছাত্র সামিউল যাদের সহায়তায় ফিরলো আপন আশ্রয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সাংবাদিক, পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য ও সিসিক’র এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সহায়তায় শিশু সামিউল ফিরলো তার মামার আশ্রয়ে। সামিউল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আজমপুরের একটি হাফিজিয়া মাদরাসায় পড়তো। গতকাল রবিবার সবার অগোচরে সে মাদরাসা থেকে বেরিয়ে ট্রেনযোগে রাত ১০টার দিকে সিলেট নগরীতে এসে পৌঁছে। জানা গেছে, মো. সামিউল ইসলাম সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার উপরগ্রামের মোঃ খলিল মিয়ার ছেলে। তার বয়স ৭ বছর। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আজমপুরস্থ মেরাসানি হাফিজিয়া মাদরাসার হিফজ বিভাগে অধ্যয়নরত।

রোববার বিকেলে হঠাৎ মা ও বাড়ির কথা মনে পড়ায় কাউকে কিছু না বলে মাদরাসা থেকে বেরিয়ে যায়। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন থেকে সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে উঠে পড়লে রাত ১০টার দিকে সিলেট রেলস্টেশনে এসে নামে। মাদরাসা থেকে নিখোঁজের পর সামিউলের শিক্ষক তার মামা গোয়াইনঘাটের উপর গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল মিয়ার কাছে ফোন করে বিষয়টি জানালে সামিউলের মামাও তাকে হন্য হয়ে খুঁজতে থাকেন।

এদিকে, সামিউল ট্রেন থেকে নেমে তার মামার বাড়ি খুঁজতে খুঁজতে ক্বিনব্রিজ পার হয়ে রাত দেড়টার দিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সামনে চলে আসে। এসময় সামিউলকে এদিক-সেদিক ঘুরোঘুরি এবং কান্নাকাটি করতে দেখে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা টিমের সুপারভাইজার সুমন চক্রবর্তী তাকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসেন। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক ইনকিলাবের সিলেট অফিস ও সিলেটভিউ২৪ডকটম’র স্টাফ ফটো সাংবাদিক মো. আনোয়ার হোসেন।

তখন সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন, বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবর হোসেন ভূঁইয়া, পুলিশ কনস্টেবল মোঃ সৈয়দ মিয়া সামিউলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে শুধু তার মামার মোবাইল ফোন নাম্বার ছাড়া কিছুই বলতে পারেনি। এসময় সামিউলের মামার মোবাইল নাম্বারে কল দিয়ে সামিউলের অবস্থা জানানো হয় এবং বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে সামিউলের খাবারের ব্যবস্থা করা হয় ও তাকে রাতে আশ্রয় দেয়া হয়। পরে সোমবার ভোরে সামিউলকে তার মামার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এদিকে, সোমবার সামিউলকে ফিরে পাওয়ার পর পুলিশ ফাঁড়িতে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ইসমাইল মিয়া এ সময় কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, সামিউলের মা জীবন-জীবিকার তাগিতে সুদূর সৌদিআরবে শ্রমিকের কাজ করেন। তার বাবা আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। সামিউলের কোনো খোঁজখবর নেন না। সামিউলকে যদি ফিরে পাওয়া না যেতো তবে তার মা’র সামনে আমি দাঁড়াতে পারতাম না। এ সময় সামিউলের মামা ইসমাইল সাংবাদিক, পুলিশ ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

শেয়ার করুন