ইলিয়াছ খান, টরন্টো, কানাডাঃ
সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বেসিক ব্যাংকের শত শত কোটি টাকা জালিয়াতি এবং তা কানাডাতে পাচারের সাথে টরোন্টোর একজন ব্যবসায়ীর নাম জড়িত সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হলে সেটা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে পুরো জিটিএ তে। ক্ষোভ আর তীব্র প্রতিক্রিয়ায় ফেটে পড়েন এখানকার সর্বস্তরের প্রবাসীরা। সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুক হয়ে উঠে উত্তপ্ত, বইতে থাকে প্রতিবাদের ঝড়। এরই সূত্রধরে স্থানীয় “বাংলা পাড়া” অধ্যুষিত এলাকা ডানফোর্থ-এ ডাক দেয়া হয় একটি প্রতিবাদী মানববন্ধনের। প্রবাসীরা ঐদিন বিকেলে অত্যন্ত বিরূপ আবহাওয়া থাকা সত্ত্বেও প্রতিবাদ জানাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেন এই প্রতিবাদ সভায়। কানাডাকে কালো টাকা মুক্ত করতে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যানার আর প্লেকার্ড নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে মানববন্ধন করেন সমাজের বিভিন্ন পেশার সচেতন নাগরিকরা। খোলা আকাশের নিচে হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডার মধ্যে বরফের উপর দাঁড়িয়ে প্রায় দেড় ঘন্টা যাবৎ চলে এই প্রতিবাদ এবং প্রতিক্রিয়া।
বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক মামলার কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এদের নিয়ে বিস্তারিত খবর বের হয়। এসব খবরে বলা হয় যে এরা মূলত ইনভেস্টর ক্যাটাগরিতে আবেদন করে এদেশে পাড়ি দেন এবং বিগত কয়েক বছর থেকে বেআইনিভাবে বিভিন্ন পন্থায় বিশেষ করে হুন্ডির মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে শত শত কোটি কালো টাকা কানাডাতে পাচার করে আসছেন। তাদের এই টাকার প্রধান উৎস হিসেবে বলা হয় যে বিভিন্ন নামে-বেনামে, ঘোষ, জালিয়াতি এবং দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রাইভেট ব্যাঙ্ক থেকে ঋন করা টাকা সহ বিভিন্ন সংগঠনের একাউন্ট থেকে লুট করা ফান্ড। এসব টাকাকে এখানে সাদা বানানোর জন্য তারা ধাপে ধাপে বিভিন্ন পন্থা অবম্বন করে থাকেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বিভিন্ন নামের কর্পোরেশনের মাধ্যমে যেগুলোর আসল কোনো অস্তিত্বই নেই, আছে শুধু কাগজে কলমে। এইসব কর্পোরেশনের অধীনে কিনা হয় কিছু কিছু নামে মাত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং এইসব প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় হিসেবেই পাচার করে আনা নগদ টাকা জমা হতে থাকে তাদের ব্যাঙ্ক একাউন্ট-এ। এছাড়াও তারা বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট সংক্রান্ত ব্যবসাতে পাচারকৃত এসব টাকার একটা বড় অংশ বিনিয়োগ করেন কোনো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে।
মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব দুর্নীতিবাজ এবং অসৎ ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে টরোন্টোর একটি বিশাল চক্র। এই চক্রের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন কিছু হুন্ডি ব্যবসায়ী, প্রথম সারির কিছু রিয়েল এস্টেট সেলস এজেন্ট এবং বিল্ডার, আছেন কিছু তথাকথিত সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন। রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়া অর্থাৎ কপাল খুলে যাওয়া এই চক্রের সদস্যরা কানাডাতে তাদের জীবন এবং জীবিকা শুরু করেছিলেন বাকি আট-দশজন প্রবাসীদের মতই। তাদের কেউ কেউ সামান্য বেতনে চাকরি করতেন বিভিন্ন কফি শপ এবং রেস্তোরাঁতে, চালাতেন ট্যাক্সি ক্যাব, কেউ কেউ আবার ছিলেন ইন্টারনেট বা টেলিফোন কোম্পানির সেলস এজেন্ট। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য টাকার বিনিময়ে তারা বিক্রি করে দেন তাদের মনুষ্যবোধটাকে। দুর্নীতিবাজদের পক্ষে সাফাই গাওয়া আর তোষামোদ করা হয়ে উঠে তাদের নিত্যদিনের কর্ম। তারা লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে অবিরাম পকেট ভরতে থাকেন সাধারণ জনগনের কাছ থেকে লুটকরা এসব অর্থ।
এই সমস্ত দুর্নীতিবাজ অসৎ ব্যবসায়ীরা তাদের এই কালো টাকার দাপট অহংকারের সাথে জাহিল করার চেষ্টা করেন স্থানীয় সমাজের সাধারণ মানুষদের উপর যারা কিনা অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে সততার সাথে উপার্জন করে আসছেন তাদের জীবিকা। বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তারা বড় আকারের আর্থিক অনুদান দিয়ে কিনে নেন প্রধান অতিথির আসন। শুধু এখানেই থেমে থাকেননা তারা, তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীদেরকেও দেশীয় স্টাইলে হেনস্থা করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ নেই তাদের।
এই সমস্ত দুর্নীতিবাজ এবং তাদের মদদ-দাতাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সভায় উপস্থিত থেকে প্রতিক্রিয়া জানানা আয়োজক রাজিবুর রহমান এবং এমরুল ইসলাম ইমরুল,বিটিবির সাবেক সংবাদ পাঠিকা আসমা আহমেদ মাসুদ, আহমেদ হোসেন, সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর, আজকাল সম্পাদক মাহবুব চৌধুরী রনি, ড. সুরভী সাঈদ, জোটন তরফদার, মাসুদ আলি লিটন, আবুল বাশার, আব্দুল হাই সুমন, আসাদ আহাদ, ইলিয়াছ খান, রাসেল রহমান, মকবুল হোসেন মন্জু, আহমেদ জয়, দেলোয়ার হোসেন দুলাল, আকরামুল ইসলাম, বিপ্লব, জিয়াউল আহসান চৌধুরী, মোরশেদ আহমেদ মুক্তা, ঝুটন তরফদার, জসীম উদ্দিন, আব্দুস সালাম, ওবায়দুর রহমান, শাকিল আহমেদ, মোঃ হামিদ, রিফফাত নূয়েরীন, আশিক ভূঁইয়া, শরীফ আলী, খালেদ সাইফুল্লাহসহ আরো অনেকেই যাদের সঠিক নাম না জানার কারনে সংযুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
অংশগ্রহণকারী প্রায় সবাই তাদের নিজস্ব প্রতিক্রিয়ায় জানান এই প্রতিবাদ কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয় বরং সমস্ত দুর্নীতিবাজ এবং তাদের মদদ-দাতাদের বিরুদ্ধে। বক্তারা এবিষয়য়ে কানাডা এবং বাংলাদেশ উভয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
এই আন্দলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আগামী ২৪শে জানুয়ারি সন্ধ্যায় স্থানীয় মিজান কমপ্লেক্স-এ আরো একটি প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়ে ঐদিনের সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।