মৌলভীবাজার প্রতিনিধি.
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে আবারও ডিম দিয়েছে একটি জলজ পাখি বেগুনি কালিম। গত পাঁচ দিনে একে একে ৫টি ডিম পেড়েছে ওই পাখিটি। শরীরের লোমের ফাঁক দিয়ে একটি ডিমের প্রায় পুরোটাই দেখা যায়। ডিমগুলোর রং সাদা। রাজহাঁসের ডিমের মতো এর আকৃতি।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব জানান, গত শনিবার থেকে কালিম পাখিটি ডিম দেওয়া শুরু করে।ওই পাখিটি এ পর্যন্ত ৫টি ডিম দিয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের জুন মাসে ওই পাখিটি ডিম দিয়েছিল।পাখিটিকে একটি বাঁশের টুকরিতে খড়-পাতা দিয়ে রাখা হয়েছে।
জলাভূমির পাখি কালিম। জল-ডাঙায় বিচরণের জন্য দুঃসাহসী, লড়াকু ও মারকুটে স্বভাবের। ওই পাখির আরও এক বৈশিষ্ট্য আছে। পোষ মানলে আর উড়ে যায় না। এরা আমাদের দেশীয় জলচর পাখি। স্বভাবে বুনো হলেও মোটামুটি পোষ মানে। মুক্ত অবস্থায় এরা দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। আবার একাকী বা জোড়ায় জোড়ায়ও বিচরণ করে। ওদের বিচরণক্ষেত্র জলাশয়ের জলদামের ওপর। আবার জলেও সাঁতার কাটে, তবে তুলনামূলকভাবে কম। জলকেলি ওদের ভীষণ পছন্দ। জলের ছোঁয়ায় রূপের ঝলক আরও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা বলেন, “পাখিটির পুরো নাম বেগুনী কালিম (চঁৎঢ়ষব ঝধিসঢ়যবহ)। তবে এটি কালেম, কায়িম বা কাম পাখি নামেও পরিচিত। পাখিটি হাওর, বিল বা জলাশয়ের পাখি। পদ্ম, শাপলা বা বড় খাসপূর্ণ জলাভূমিতে এরা বেশি থাকে। এরা খুবই সামাজিক পাখি, দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। পাখিটি খাবার হিসেবে ধান, গম, চাল, ঘাস, মাছ, শামুক ইত্যাদি খেলেও কচুরিপানা এদের প্রিয় খাদ্য। বছরে ৭ থেকে ১০টি ডিম দেয় এবং প্রাকৃতিকভাবেই বাচ্চা উৎপাদন করে পাখিটি।”
তিনি জানান, আইনগতভাবে কালিম পাখি খাঁচায় বা অন্য কোনোভাবে লালন-পালন দন্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে পোষাপাখি বিধিমালা নামে নতুন আইন হচ্ছে।
জোহরা মিলা বলেন, “পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই কালিমের দেখা পাওয়া যায়। বিগত কয়েকদশক ধরে সারা পৃথিবীতে কালিমের সংখ্যা কমে না গেলেও বাংলাদেশে জলাভূমি কমে যাওয়া এবং যত্রতত্র ফাঁদ পেতে শিকার করার ফলে পাখিটির হুমকির মুখে রয়েছে। যদিও আইইউসিএন এই প্রজাতিটিকে ন্যুনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইন-২০১২ অনুযায়ী পাখিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার বা এর কোনো ক্ষতি করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।”