কানাডায় করোনা পরিস্থিতিতে ইন্টারনেশনাল স্টুডেন্টস্

মাসুম চৌধুরী, কানাডাঃ 

বিশ্বব্যাপী চরম একটা দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। আমাদের মধ্যে অনেকের এখনো চাকরি আছে, অনেকেই ইতোমধ্যে লে-অফ হয়ে গেছি। কেস-টু-কেস বেসিসে আমাদের মধ্যে কেউ হয়তো Employment Insurance (EI) পাবো তো কেউ Canada Emergency Response Benefit (CERB)। ছোট-বড় সকল ব্যবসায়ীর জন্যও কিছু না কিছু থাকছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জন্য নেই কিছুই।

আদতে সরকারের তেমন কোন মাথাব্যথা নেই ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের নিয়ে কারণ প্রতিটি স্টুডেন্ট তার ভিসা এপ্লিকেশনে ফাইনান্সিয়াল সলভেন্সি প্রুফ করেই এখানে আসে। বেশিরভাগ স্টুডেন্ট তাদের টিউশন ফিসের টাকা দেশ থেকে আনলেও লিভিং এক্সপেন্সের টাকা এখানে কাজ করেই ম্যানেজ করে। যেহেতু সপ্তাহে মাত্র ২০ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি আছে তাই ফ্লেক্সিবিটি এবং সহজলভ্যতার কথা চিন্তা করে বেশিরভাগ স্টুডেন্টই বিভিন্ন অড-জব করে জীবিকা নির্বাহ করে কানাডার বিভিন্ন শহরে। এবং লে-অফ করার সময় এই পার্ট-টাইম এমপ্লয়িরাই সবার আগে লে-অফ হয়। এদের কেউ কেউ Employment Insurance (EI) পেলেও, বেশিরভাগ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টই কোন স্যোসাল বেনিফিট পায়না।

কানাডায় প্রায় ৮৫০০ বাংলাদেশি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট আছে যার অর্ধেকের বেশি অন্টারিওর কোন স্কুল বা কলেজে অধ্যয়নরত। প্রতিষ্ঠানভেদে এখানকার লোকাল স্টুডেন্টদের থেকে দিগুণ থেকে চারগুণ টিউশন ফিস দেয়া এই স্টুডেন্টগুলোর পরিবারের উপর বাড়তি লিভিং এক্সপেন্সের টাকা চাওয়ার এবং দেয়ার মত পরিস্থিতি হয়তো অনেকেরই নেই। দেশে ফেরত যাওয়াটাও সেইফ না এমদম। কিন্তু তাই বলে না খেয়ে তো থাকা যাবে না। তাই আপনাদের সকলের কাছে কিছু অনুরোধঃ

 আপনার পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের একটু খোঁজ নিন। কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করুন। বেশিরভাগ স্টুদেন্টদেরই এখানে আপন কেউ নেই।
 আপনার ভাড়াটিয়া যদি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হয়, ভাড়া দেয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে দিন। এরা এমনিতেই অনেক স্ট্রেসের মধ্যে আছে। পারলে স্ট্রেস কমানোর ব্যবস্থা করুন। মেন্টাল সাপোর্ট দিন।
 যদি আপনার সামর্থ্যে কুলায় ক্যাশ বা কিছু গ্রোসারী কিনে দিন। বেশিরভাগ স্টুডেন্টদের গাড়ি নেই। অনেকের কোন ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংক ওভারড্রাফটও নেই।
 যদি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ দেয়ার সামর্থ্য থাকে তাদের কাজ দিন। মাছ কিনে দেয়ার চেয়ে মাছ ধরতে শিখানো বেশি ইফেক্টিভ।
 আপনার যদি পলিটিকাল ক্যাপাসিটি থাকে এদের জন্য কিছু করার তাহলে এখনি সময়। মনে রাখবেন এদের সিংহভাগই ভবিষ্যৎ ক্যানেডিয়ান। আজ সাহায্য করলে কাল আর ভোট চাইতে হবে না। তারাই আপনাকে ব্যালট পেপারে খুঁজে ভোট দিবে।

কানাডাতে প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশির বসবাস। প্রতিটি পরিবার যদি একজন স্টুডেন্টের দায়িত্ব নেন তাহলে কোন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টেই কষ্টে থাকবে না ইনশাল্লাহ।
Canadian Bangladeshi Community (CBC) এর উদ্যোগে আমরা কয়েকজন গত দুইদিনে বেশ কিছু স্টুডেন্টকে সহায়তার হাত বাড়িয়েছি এবং এটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা রাখছি। কিন্তু একা কতদূর যেতে পারবো জানিনা।

সময় নিয়ে পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

মাসুম চৌধুরী,
একজন সাবেক ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট।

শেয়ার করুন