করোনাভাইরাস আতঙ্কে— মৌলভীবাজার জেলায় হাসপাতালগুলোতে রোগি নেই !

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি.
করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের আশঙ্কায় রোগি শূন্য হয়ে পড়েছে মৌলভীবাজার জেলাসদরসহ বিভিন্ন হাসপাতাল গুলোতে। হাসপাতালের জরুরী বিভাগ ও বহির্বিভাগে প্রাথমিক ১৫-২০জন প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন। যেখানে বহির্বিভাগে কয়েকশ রোগি চিকিৎসা নিতো প্রতিদিন,সেই বহির্বিভাগে এখন ফাঁকা। হাসপাতালে রোগি একেবারেই নেই বললে চলে।
তবে স্থাণীয় মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য হটলাইন চালু করেছে সদর হাসপাতালসহ অন্যন্য হাসপাতালগুলো। সব ধরণের রোগিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা প্রদানে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন মো. তৌহিদ আহমদ।
মৌলভীবাজার জেলাসদরসহ কুলাউড়া,কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল সরকারী হাসপাতালগুলোতে এসবচিত্র দেখা গেছে।
কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এক মহিলা রোগী শরীরে রক্তশূন্যতার কারণে হাসপাতালে ১৮ মার্চ ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের দিখলকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া অলি উদ্দিন (৩) এক শিশু ছেলে ঠান্ডাজনিত রোগ (নিউমোনিয়ায়) আক্রান্ত হয়ে গত (২০ মার্চ )হাসপাতালে ভর্তি হয়। সে উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা মসু মিয়ার ছেলে। শিশু ছেলেকে বুকে আগলে রেগে বাবা হাসপাতালের ওয়ার্ডে হাঁটাহাঁটি করছেন।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুটির বাবা মসু মিয়া বলেন, করোনাভাইরাসের আতঙ্কে আত্মীয় স্বজন কেউই তার শিশু ছেলেকে হাসপাতালে দেখতে আসেনি। রোগীশূন্য হাসপাতালে একমাত্র শিশুপুত্রকে নিয়ে অনেকটা ভয়ে আছেন। শিশুটি কিছুটা সুস্থ হলেই হাসপাতাল থেকে চলে যাবেন তিনি।
উপজেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিয়ত যেখানে হাসপাতালের বিভিন্ন ধরনের রোগীদের জায়গা দিতে হিমশিম খেতে হয়। বর্তমানে করোনাভাইরাস আতঙ্কে প্রায় সপ্তাহ খানেক সময় ধরেই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের খবর শোনার পর জনমনে আতঙ্ক বেড়ে গেছে অনেকটা। সেক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউই হাসপাতালে আসতে চান না। দিনে আউটডোরে ২০-২৫ রোগী চিকিৎসকদের পরামর্শ নিলেও অনেকে ভয়ে ভর্তি হতে হচ্ছেন না। স্বাভাবিকভাবে জ্বর, সর্দি ও কাশি রোগীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছেন ।
কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুল হক বলেন, মানুষ দেরিতে হলেও এখন কিছুটা সচেতন হচ্ছে। করোনা আতঙ্কের ভয়ে বাড়ি থেকে কেউ বের হতে না পারলেও আমাদের স্থানীয় ডাক্তারদের মাধ্যমে তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন। বর্তমানে হাসপাতালে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে এটা সত্য যে, এখন করোনা আতঙ্কে রোগীশূন্য রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

রোগীশূন্য কমলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্স

অপরদিকে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একই চিত্র। গেল সোমবার মাত্র ৬জন রোগী ভর্তি হলেও মঙ্গলবার সেখানে ভর্তি ছিল মাত্র মাইসা আক্তার (৭মাস) নামের ১ শিশু রোগী। সে উপজেলা আলীনগর ইউপির চিৎলীয়া গ্রামের লালাই মিয়ার মেয়ে। ওইদিন বিকালে সাড়ে ৫ টায় মাইসা আক্তার নামের অসুস্থ্য শিশু রোগীকে নিয়ে শিশুটির মা মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চলে যান।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুটির মা বলেন, করোনা ভাইরাসের ভয়ে আত্মীয়স্বজন কেউই তাকে দেখতে হাসপাতালে আসেননি। এ সময় ওই ওয়ার্ডে পৌছে তাদের ছবি তুলতে চাইলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শিশুটির মা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে হাসপাতাল রোগি শূণ্য । বৃহস্পতিবার দুপুরে সরজমিনে হাসপাতালে পরিদর্শনে গেলে দেখা যায় পুরুষ ওয়ার্ডে একজন বৃদ্ধ মকলুছ মিয়া (৭০) ৩-৫দিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন। তিনি শ^াসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন। মহিলা ওয়ার্ডে দেখা যায় রাকিব মিয়া (৫), তাবাসুম (২) ও মিরাজ মিয়া (৪) তারা সবাই নিউমোনিয়ায় দুইদিন আবার কেউ তিনধরে ধরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এরা প্রত্যেকেই শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাসিন্দা।
হাসপাতালের ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স হোসনা বেগম জানান,করোনা ভাইরাসের কারণে হাসপাতালে রোগি নাই। দুইজন আয়া,একজন ডাক্তার, একজন ক্লিনার ও দুজন নার্স নিয়োজিত আছি। মুখে শুধু পরেই তারা চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম ভ‚ঁইয়া ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো.সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এখন হটলাইন চিকিৎসাসেবা চালু রয়েছে,যার ফলে মানুষ হাসপাতালে খুবই কম আসে। তারা আরও জানান, মানুষ আতঙ্কিত না হবার জন্য আমরা পরামর্শ দিলেও গ্রামের মানুষজন অনেকটা ভয়ে রয়েছেন। তাই তারা হাসপাাতলে আসতে অনিচ্ছুক। বর্তমানে রোগীশূন্য রয়েছে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।’
মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন মো.তৌহিদ আহমদ বলেন, প্রথমতো মানুষ ভয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে না,এর কারণ কোনভাবে করোনা ভাইরাস ছড়ায় কিনা। দ্বিতীয়তো গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দূরদূরান্ত সাধারণ রোগিরা আসতে পারছে না। রোগির সংখ্যা একেবারেই কম বললে চলে।
তিনি আরও বলেন,আমরা হাসপাতালে চিকিৎসার পাশাপাশি হটলাইন সেবা চালু রেখেছি। যেকেউ মোবাইলে চিকিৎসা নিতে পারবেন।’
পিপিইর চাহিদা ৫হাজার,বরাদ্দ ১০০
এদিকে মৌলভীবাজার জেলায় ৫০০০ হাজার পিপিইর মধ্যে ১০০ পিপিইর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা খুব্ই নগণ্য।এই ১০০ পিপিইর মধ্যে মৌলভীবাজার ২৫০শয্যা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের ২০টি, সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৫টি, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ টি, জেলা সদরে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ৫টি এবং বাকি ৬টি উপজেলায় ১০টি করে পিপিই দেয়া হয়েছে। তবে এই ১০০ পিপিই শুধু ডাক্তারদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। করোনা রোগীসহ অন্যদের সার্বক্ষণিক দেখবালের দায়িত্বে থাকা হাসপাতালের নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয়সহ টেকনিশিয়ানরা এখনো কোনো নিরাপত্তা পোশাক পাননি।’
এব্যাপারে জানতে চাইলে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন তৌহিদ আহমদ জানান, জেলায় কতগুলে পিপিই লাগবে তা নির্ভর করবে রোগীর চাপ কেমন হবে তার ওপর। প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার পিপিইর চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি তা প্রয়োজনের তুলনার খুবই নগণ্য।’

 

শেয়ার করুন