অজন্তা চৌধুরী, টরন্টো, কানাডাঃ
জানুয়ারির ৩০ তারিখে বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা WHO পৃথিবীর সকল দেশকে আসন্ন COVID-19 মোকাবেলায় প্রস্তুত হবার জন্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলো। তখন এর ভয়াবহতা যে এতটা প্রকট হতে পারে তা কেউ হয়তো ভাবেনি। এরপর ২৫ জানুয়ারি উহান থেকে আসা একজনের শরীরে এই ভাইরাসটি কানাডাতে প্রথম ধরা পড়ে। মার্চের ২ তারিখে সেটির সংখ্যা হয় ২৪, মার্চের ১৫ তারিখে হয় ২৫৭। এভাবে যখন COVID-19 এ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে ঠিক তখনি টরোন্টোতে চার জন নিস্বার্থ স্বেচ্ছাসেবী এগিয়ে আসেন এই সংকট
নিরসনে সাহায্যের দীপ্ত প্রত্যয় নিয়ে। মার্চের ১৪ তারিখে গঠন করেন Coronavirus Community Support & Services (CCSS)। চার জন আত্মনিবেদিত মানুষ সবিতা সোমানি, নওশের আলি, রেজাউল ইসলাম ও নয়ন হাফিজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় একটি গ্রুপ গঠন করেন (https://www.facebook.com/groups/235075344343851/?ref=share) এবং তাঁদের কাজকে ত্বরান্বিত করতে ভলান্টিয়ার এর জন্য আবেদন জানান। তাদের এই ডাকে সাড়া দেন টরন্টো সহ আশে পাশের সব শহরের বহু মানুষ, তারা স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এগিয়ে যেতে থাকে CCSS এর কার্যক্রম।
শুরুতে মার্চ break এর ছুটিতে কানাডার বাইরে থেকে আসা মানুষগুলো যখন নিজ শহরে ফিরে ১৪ দিনের জন্য বাসায় থাকেন আইসোলেশনে, তাদের বাজার, ঔষুধ এবং খাবার সরবরাহ করে আসছিলো CCSS । পরবর্তীতে CCSS টিম কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশনে থাকা মানুষদের গ্রোসারী এবং ওষুধপত্র পৌঁছে দেওয়া ছাড়াও বয়োবৃদ্ধ পরিবার, অসুস্থ মানুষ, গর্ভবতী মা এবং ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জন্য বিনামুল্যে ওষুধ এবং গ্রোসারীর ব্যবস্থা করেছে । CCSS এর একজন সদস্য সবিতা সোমানীর সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের এই উদ্যোগকে সামনের দিকে যাঁরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা হলেন টরন্টো সহ আসে পাশের শহরের বেশ কিছু ভলান্টিয়ার। সবাই যেভাবে এই কঠিন দুর্যোগে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন তাতে তাঁদের কাজ করার স্পৃহা শতগুনে বেড়ে গেছে। কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশনে থাকা মানুষদের দোরগোড়ায় আত্মনিবেদিত ভলান্টিয়াররা ছুটে গেছেন তাদের প্রয়োজনীয় খাবার, ঔষধ বা গ্রোসারি নিয়ে। CCSS এর অন্য একজন সদস্য নওশের আলী বলেন “কয়েকদিন আগেও কি ভেবেছিলাম এমন কঠিন ও দুর্যোগময় মুহূর্তে মানবতার সেবায় এভাবে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে? CCSS ভলান্টিয়াররা মুখিয়ে আছে যেন মানবতার সেবায় যার যার অবস্থান থেকে একটি চিহ্ন রাখতে পারে । ” অতি ক্ষুদ্র একটি ভাইরাস এর সাথে মানুষের এই যুদ্ধকে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ হিসাবে যেখানে আখ্যা দেয়া হচ্ছে সেই সংকটপূর্ণ সময়ে এমন একটি মহতী উদ্যোগ সত্যি আশার আলো দেখায়। CCSS এর সদস্য রেজাউল ইসলাম বলেন “আসুন আমরা আর্তমানবতার সেবায় যে যার সামর্থ অনুযায়ী এগিয়ে আসি। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই মহা দুর্যোগ আশা করি কেটে যাবে। মনে রাখতে হবে, ‘একতাই শক্তি’।” “একতাই শক্তি”র অংশ হিসাবে CCSS এর নেতৃত্বে ৭০ জন ভলান্টিয়ার গত দুই সপ্তাহে শতাধিক মানুষকে সাহায্য করেছেন। চরম সংকটকালে ভলান্টিয়ারদের এই সেবা এবং সেবা গ্রহণকারীদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন প্রতিনিয়ত CCSS এর সদস্যদের আবেগপ্রবণ, গর্বিত ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে -জানান CCSS এর সদস্য নয়ন হাফিজ। টরোন্টোর বাংলাদেশ কমিউনিটি তথা বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই CCSS এর এই মহতী উদ্যোগকে অভিনন্দন জানানো হয়। টরোন্টোর তিনটি উল্লেখযোগ্য টেলিভিশন চ্যানেল NRB, নন্দন এবং দেশে বিদেশে সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এমন একটি মহতী উদ্যোগ টরন্টোর বাংলাদেশী কমিউনিটিতে উদাহরণ হিসাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ইতিমধ্যেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে CCSS এর এই গ্রুপটিতে (https://www.facebook.com/groups/235075344343851/?ref=share) করোনা ভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন সতর্কতাবানী ও প্রয়োজনীয় তথ্যাবলীও জানানো হয়। CCSS এর পক্ষ থেকে কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় COVID-19 সম্পর্কিত এসকল প্রয়োজনী তথ্য, সতর্কতাবানী বা অনলাইন কেনাকাটায় সাহায্য চেয়ে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে নিম্নক্ত ফোন নাম্বারে।
সবিতা সোমানিঃ 4164500913, নওশের আলিঃ 4166600009, রেজাউল ইসলামঃ 6476770231, নয়ন হাফিজঃ 4166600857