-
নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
-
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে জনজীবন প্রায় স্থবির। জনসমাগম এড়িয়ে চলছেন নগরবাসী। ফলে রাস্তাঘাটে সাধারণ যাত্রী নেই বললেই চলে। ঈদের ছুটিতেও এতটা ফাঁকা ঢাকা দেখেননি বলে দাবি করছেন নগরবাসী, কিন্তু এর মধ্যেই থেমে নেই সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিকদের ভাড়ার টাকা জমা নেওয়া। পরিবহনটির চালকরা যাত্রী সংকটে থাকলেও নিয়মিত মালিকদের দৈনিক ভাড়া জমা দিতে হচ্ছে।
-
সিএনজি চালকরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস আতঙ্কে নাগরিকদের কেউ এখন একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। ফলে স্বাভাবিক সময়ে তারা যেখানে দৈনিক তিন থেকে চার হাজার টাকার মতো ভাড়া পেতেন সেখানে এখন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকাও পাচ্ছেন না। কিন্তু এর মধ্যেও মালিকদের নিয়মিত ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে কোনও কোনও সিএনজি মালিক একজন চালকের কাছ থেকে দুই শিফটে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ কোথাও কোথাও দুই হাজার টাকা আদায় করছেন।
-
সোমবার সকালে খিলগাঁও রেলগেটে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক আরিফুল ইসলাম জানান, সিএনজি চালিয়েই ৫ সদস্যের পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করেন তিনি। প্রতিদিনন ১২ ঘণ্টার জন্য মালিককে ৯০০ টাকা পরিশোধ করে থাকেন। স্বাভাবিক সময়ে অন্তত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার মতো আয় হতো। এখন রাস্তায় লোক চলাচল কমে যাওয়ার ফলে চারশ থেকে পাঁচশ টাকাও আয় হয়না। এসময়ও মালিকদের পুরো টাকা জমা দিতে হচ্ছে।
-
তিনি আরও জানান, টাকা জমা দিতে না পারলে সিএনজি নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছেন মালিকরা। এমনিতে চালকের তুলনায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা কম থাকায় স্বাভাবিক একটি সংকট রয়েছে। এর সঙ্গে সিএনজি মালিক নিয়ে গেলে চালানোর জন্য আরেকটি পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে বলে দাবি করেন আরিফুল।
কয়েকজন মালিক বাকির খাতায় চালকদের জমার টাকা লিখে রাখছেন। এখন পরিশোধ না করলেও পরে পরিশোধের জন্য সময় দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
এই দুর্যোগকালীন সময়ে ভাড়ার টাকা জমা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি ও ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়েনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ (খোকন) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে রাস্তাঘাটে কোনও যাত্রী নেই, ফলে চালকদের অবস্থাও খারাপ। এসময় ভাড়ার পুরো টাকা নেওয়াটা অমানবিক। অনেকে জমা দেওয়ার মতো আয়ও করতে পারছেন না, জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়ছে। চালকরা পরিবারসহ অনাহারে অর্ধাহরে জীবন যাপন করছেন। এই আপদকালীন সময়ে মালিক কর্তৃক দৈনিক ভাড়া ৩০০ টাকা করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি সরকারের কাছে একই দাবি জানান।
-
সিএনজি অটোরিকশা সার্ভিস নীতিমালা অনুযায়ী মালিকের দৈনিক ভাড়া ৯০০ টাকা। কিন্তু মালিকরা ২৪ ঘণ্টাকে দুই শিফটে ভাগ করে ভাড়া দিয়ে থাকেন। এতে একজন শ্রমিকের কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টার স্থলে ১০ বা ১২ ঘণ্টা হয়। যেখানে দৈনিক ৯০০ টাকা ভাড়া নেওয়ার বিধান রয়েছে সেখানে তারা প্রতি শিফটে ৮০০-৯০০ টাকা আদায় করছেন। এতে দৈনিক তাদের আদায় হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। যাত্রী বা ভাড়া না পেলেও একজন চালককে এখনও সেই পরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।
-
এ প্রসঙ্গে থ্রি হুইলার অটোরিকশা মালিক গ্রুপের সভাপতি লায়ন মির্জা হামিদুল ইকবাল মিরাজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চালক-মালিক সবাই বিপদে রয়েছে। চালকরা যেমন যাত্রী পাচ্ছেন না মালিকরাও ভাড়ার টাকা পাচ্ছেন না। একটি সিএনজির পেছনে একজন মালিকের অনেক মেইনটেনেন্স খরচ রয়েছে, সেটিও ভাবতে হবে।
তবে আগের মতো এখনও দৈনিক জমার টাকা চালকদের থেকে আদায় করা হয় এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, চালকরাতো আয়ই করতে পারছেন না। তাহলে তারা জমার টাকা কীভাবে দিচ্ছে্ন? তিনি বলেন, কোথাও পুরো টাকা আদায় করা হচ্ছে না। বেশিরভাগ চালকই পরিস্থিতি দেখে গাড়ি রেখে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।
-
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ভাড়ার টাকা আদায়ে সবাইকে মানবিক বিষয়গুলো বিবেচনার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে ইতোমধ্যে অনেক বাড়ির মালিক তাদের ভাড়াটিয়াদের জন্য বাড়িভাড়া মওকুফ করে দিয়েছেন। সিএনজি মালিকরাও তাদের চালকদের দৈনিক ভাড়া মওকুফ করে দিতে পারেন।
বাংলা ট্রিবিউন