পহেলা বৈশাখ ১৪২৭

  •  পহেলা বৈশাখ ১৪২৭। বাংলা সনের প্রথম দিন। বাঙ্গালির সবচেয়ে বড় উৎসব। ধর্ম-বর্ণ- জাতিগোষ্ঠী নির্বিশেষে সবাই মিলিত হন এ মিলনমেলায়। কিন্তু এ বছর করোনাভাইরাস মহাবিপর্যয়ের ফলে পহেলা বৈশাখ বঞ্চিত হয়েছে রং ছড়ানো থেকে।
  • বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাংলা নববর্ষের সকল অনুষ্ঠানে জনসমাগম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। ঘরে বসে ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে’ পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য বলা হয়েছে সরকারের তরফ থেকে।
  • এমন অবস্থায় পহেলা বৈশাখকে ঘিরে প্রতিবছর যে রকম জমজমাট প্রস্তুতি থাকে, এবারে সে চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন।
  • পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ৩/৪ মাস আগে থেকে তৎপর থাকতেন সংস্কৃতি কর্মিরা। রিহার্সেল, মহড়াসহ নানাবিদ কাজে ব্যস্ত সময় পার করতেন। কিন্তু এ বছর বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমনের ফলে বাইরে ঝাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের পরিবর্তে, সরকারি নির্দেশমনা অনুস্মরণ করে ঘরে বসে ডিজিটাল পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে যতটুকু সম্ভব ততটুকু বৈশাখ উদযাপন করবেন বলে জানিয়েছন মৌলভীবাজারের সংস্কৃতি কর্মিরা।
  • রবিরশ্মি পরিচালক মমিতা সিনহা বলেন- এবছর বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে নতুন বঙ্গাব্দকে বরণ করতে ‘রবিরশ্মি’ কোনো আনুষ্ঠানিকতা করছেনা। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় রবিরশ্মির পেজ থেকে সবাইকে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে। নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তা সোশ্যাল মিডিয়াতেই জানানো হবে।
    এ জীবনযুদ্ধে প্রত্যেকের মনোবল অটুট রাখা অনিবার্য। নিরাপদে থেকে আশেপাশের অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাড়াঁতে সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।
  • রবিরশ্মির সদস্যরা বিশ্বাস করে, সকলের সম্মিলিত সচেতনতা ও সহমর্মিতায় পৃথিবী আবার ঘুরে দাঁড়াবে; আবার সবাই মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে সামিল হবে।
  • জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, মৌলভীবাজারের সাধারণ সম্পাদক অরুন দাশ বলেন- বাঙালির আপন সত্তার অহংকার, আমাদের পহেলা বৈশাখ, আমাদের নববর্ষকে ডিজিটালি স্বাগত জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর এই আহবান নিঃসন্দেহে প্রতিকূলতাকে জয় করারই অঙ্গীকার। নিজেদের মতো ঘরে বসে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবো এবং যার-‍যার সাধ্যমতো অসহায়দের সাহায্য করবো এটাই হোক এই নববর্ষের আহবান। অপ্রত্যাশিত এই দূর্যোগকে পরাজিত করে মানুষের জয় হোক নববর্ষে এটাই হোক আমাদের প্রার্থনা।
  • পহেলা বৈশাখ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মীর ইউসুফ বলেন- এবারের বৈশাখ অগ্নিস্নানে ধরাকে শুচি শুদ্ধ করে প্রকৃতি আপন মহিমায় বেড়ে ওঠুক। এ যাবত প্রকৃতির অনেক ক্ষতি করেছি মানবজাতিকে ঘরে পাঠিয়ে প্রকৃতি মানবজাতির জন্যই নিজেকে গুছিয়ে নিক সেই সময় এবং সুযোগটুকো দেওয়া উচিৎ তাই দেব হয়তো। পহেলা বৈশাখে যার-যার ঘরে থেকে গান গাইবো আবৃত্তি করবো। সকাল ১০টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় উদীচীর পেইজ থেকে লাইভ হবে উপভোগ করব। বাসায় থেকে সারাদিন গান আর সব বন্ধু বান্ধবের সাথে অনলাইনে/ ফোনে আড্ডা দেব আর দিনশেষে মহাপ্রকৃতির কাছে রোদন করবো এ বন্দিদশা যেন কেটে যাই মুক্তির আলোয় আলোয়।
  • নতুন বছর মানেই অতীতের সকল ব্যর্থতা, জ্বরাজীর্ণতা পেছনে ফেলে নতুন উদ্দীপনা ও উৎসাহে সুন্দর সমৃদ্ধ আগামী বিনির্মাণে এগিয়ে যাওয়া। বর্তমান দুঃসময়, মহামারি ও নৈরাজ্যের অভিঘাত সত্ত্বেও আমাদের শান্তি, স্বস্তি, সুস্থতা ও ফিরিয়ে আনা জরুরী। এবারের নববর্ষের উৎসব বিমর্ষ ও বেদনার। সারা দুনিয়াজুড়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে জনজীবনে যে বিয়োগাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা মোকাবেলা কঠিন। অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটছে, আক্রান্ত হচ্ছেন অগণিত মানুষ।এবারের বাংলা নববর্ষের উৎসব ঐতিহ্যের ধারা বেয়ে পালন করা হচ্ছে না। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সবাইকে সবসময় সতর্ক থাকাটা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি।
শেয়ার করুন