শ্রীমঙ্গলে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর পাচারকৃত চাল বস্তা উদ্ধার,আটক ১


  • মৌলভীবাজার প্রতিনিধি.
    মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের ভৈরবগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পাচার হওয়া বিপুল চালের বস্তা উদ্ধার করেছে র‌্যাব-৯। এসময় চাল পাচারের সাথে জড়িত থাকায় নপুর কান্তি নামে একজন মুদি ব্যবসায়ীকে আটক করেছে র‌্যাব।
    বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বিকালের দিকে উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
    আটক নপুর কান্তি রায়ের বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের রাঙ্গুরিয়া  গ্রামের মৃত গুনু রায়ের ছেলে।  
    প্রত্যক্ষদর্শী ও র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৯ সিপিসি ২, শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের অধিনায়ক সহকারী পুলিশ সুপার মো.আনোয়ার হোসেন (শামীম আনোয়ার) নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি বিশেষ টিম উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের ভৈরবগঞ্জবাজার শাহাজালাল মার্কেটে মুদি ব্যবসায়ী নূপুর কান্তির বাসা থেকে বিপুল পরিমানে ১০ টাকা কেজি দরের চাল ও চালের বস্তা ও বস্তা পুড়ানো ছাই উদ্ধার করেছে র‌্যাবে। পরে তার বাড়ি পাশ^বর্তী মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের রাঙ্গুরিয়া গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে পাচার হওয়া চাল ডামে ভর্তিবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
    এবিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাব ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মো.আনোয়ার হোসেন বলেন, আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বিস্তারিত পরে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে জানানো হবে।

    প্রসঙ্গত. গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) গভীররাতে এলাকাবাসীর তথ্যের ভিত্তিতে সরকারী চাল পাচারে জড়িত আশিককে আটক করা হয়।
    প্রসঙ্গদ.বুধবার (১৫এপ্রিল) রাতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভৈরববাজার এলাকা থেকে আশিক মিয়া আটক করা হয়। তারতথ্যের ভিত্তিতে পরে ইসলাম মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে তার তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৫বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়।
    আটককৃত আশিক ওই  ইউনিয়নের ভৈরববাজার সংলগ্ন হুদারপাহাড় গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই এলাকার দাদন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।
    স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আশিকের বাড়িতে ১০টাকা কেজি সরকারি চাল মজুদ করে রাখা ছিল। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টার সময় আশিকের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
    অনুসন্ধানে জানা যায়, আশিককে আটকের পর তাকে উদ্ধার এবং চালের বস্তা চুরি সংক্রান্ত বিষয়টি ধামাচাপা দেবার চেষ্টা চালায় একটি প্রভাবশালী মহল। বুধবার বিকালে একাংশের  গণমাধ্যমকর্মীরা বিষয়টি জেনে গেলে তাদের এমন উদ্দেশ্য ভেস্তে যায়।
    পাচারকৃত চাল ভৈরব বাজারের কলা ব্যবসায়ী হেকিম খা, সিএনজি চালক শান্ত রঞ্জন দাশ ও গ্রেফতারকৃত আশিক মিয়ার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।
    এঘটনায় পুলিশ ভৈরবগঞ্জ বাজারে অবস্থিত শাহজালাল ম্যানশনের বেশ কয়েকটি বন্ধ দোকানের তালা খুলে অভিযান চালালে সেখানের একটি দোকান থেকে খাদ্যসহায়তার বেশ কয়েকটি খালি বস্তা উদ্ধার করলেও কোন চাল পাওয়া যায়নি বলে দ্বায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
    স্থাণীয় এলাকার বাসিন্দা হেকিম খা জানান, পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া আশিক মিয়ার কাছ থেকে  মঙ্গলবার দুপুরের দিকে ১৫০০ টাকা দামে দুই বস্তা ৩০ কেজি ওজনের ৬০ কেজি চাল ক্রয় করেন।’
    এদিকে,পুলিশের উপস্থিতি ও পুলিশের অভিযান হবে এমন তথ্য আগেভাগেই জানতে পেরে আশিকের সংশ্লিষ্টরা ২২ বস্তা চাল সরিয়ে নেয়। আশিককে আটক করে থানায় নেয়ার পরপর চালগুলো সরিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে ৫ বস্তা ১০ টাকার মূল্যের সরকারি চাল পুলিশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
    উপজেলার কালাপুরের এলাকাবাসী তুহিন চৌধুরী ও মো. জাকারিয়া (বক্তব্য রের্কড) বলেন, ঘটনাটি শুনে আমিও গিয়েছিলাম ভৈরববাজারে। আসলে কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছে না। তারপরও যা জানতে পারলাম তা হলো, সিএনজি অটোরিক্সা করে ১০ টাকা দামের সরকারি ত্রাণের চাল বাজারে নিয়ে যাবার সময় সিএনজি থেকে পড়ে যায়। তখন  উৎসুক লোকজন সিএনজি চালককে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে এগুলো কালাপুরের আশিক মিয়া এবং ইসলাম মিয়ার চাল। তারা আরও জানান,এই দু,জনেই ইউপি চেয়ারম্যানের ঘনিষ্টভাজন।’
    ‘কালাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মজুল বলেন,চাল পাচার ঘটনা আমার জানা নেই। যদিও ইউনিয়নের পরিষদ অথবা ডিলারের মাধ্যমে পাচার সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আপনি বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। নইলে  মামলা দিয়ে দিব।’
    শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুছ ছালেক বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের চাল অবৈধভাবে মজুদ রাখার অপরাধে ইতোমধ্যে আশিক ও ইসলাম গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের কাছ থেকে ৫ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার করা হয়। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে,মূল আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ’

শেয়ার করুন