নিউজ ডেস্ক :: গত ২ মে দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার অনলাইন ভার্সনসসহ একাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টালে ‘মাতাল উপজেলা চেয়ারম্যানের তাণ্ডব’ সহ বিভিন্ন শিরোনামে আমাকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয় যা সম্পূর্ণ মিথ্যা. বানোয়াট, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও মানহানিকর। প্রকৃত অর্থে আমার এলাকার নির্বাচনী পরাজিত প্রতিপক্ষরা ভুল তথ্য দিয়ে সাংবাদিকদের দিয়ে একপেশে সংবাদগুলো করিয়েছেন। আমার এবং আমার পরিবারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে একটি কুচক্রি মহল উঠেপড়ে লেগেছে।
পরিবেশিত সংবাদগুলোতে আমার বিরুদ্ধে এমনভাবে তথ্য উপস্থাপন হয়েছে যা প্রতিবেদকের মনগড়া ও ভিত্তিহীন তথ্যে ভরপুর। সংবাদের শিরোনামেই আমাকে ‘মাতাল’ উল্লেখ করা হয়েছে। একদিকে করোনা ভাইরাস নিয়ে দেশব্যাপী লকডাউন চলছে অন্যদিকে পবিত্র রমজান মাস। দোকানপাঠ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গাড়ি চলাচল সব কিছু বন্ধ। আমার জানামতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে দেশের সকল ধরণের অপরাধ কর্মকাÐ এসময় জিরো টলারেন্সে আছে। লকডাউনের কারণে দেশের সকল বৈধ কিংবা অবৈধ মদ্যপ জাতীয় দোকানপাঠ বন্ধ রয়েছে। আমি মদ্যপ কিংবা এজাতীয় পণ্য কোথায় পাবো? তাছাড়া রমজান মাসের তারাবীর নামাজ আদায় করে কেউ কি মদ খেয়ে মাতলামি করতে যাবে? কোন বিবেকবান মানুষ এধরণের সস্তা কথায় বিশ্বাস করবে তা আমার ধারণা ছিলো না। মূলত আমি নামাজ পড়ে আমার উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ধান কাটার হারভেস্টার মেশিন দেখতে গিয়েছিলাম। কারও কোথায় প্রভাবান্বিত হয়ে এমন মানহানিকর শব্দ লেখার ক্ষেত্রে প্রতিবেদকের যথেষ্ট সচেতন হওয়ার দরকার ছিলো।
সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে আমার নেতৃত্বে জুড়ি উপজেলার দীনবন্ধু সেনের মালিকানাধীন ফার্মে হামলা করা হয়েছে। অথচ ওই মারামারির ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। এমনকি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমি নিজে পুলিশকে ডাকি। যেহেতু পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না তাই হামলার প্রশ্নই আসে না। এছাড়াও সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, দীনবন্ধুর বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেই। যা মিথ্যা ও বানোয়াট। প্রকৃত সত্য হলো, আমার কাছে কোন অস্ত্র ছিলো না। আমি আগে ধুমপান করতাম। বর্তমানে ধুমপান ছাড়তে বিকল্প হিসেবে ‘এন্টি স্মোক’ ও লাইটার সাথে রাখি। এন্টি স্মোক দেখতে একটু ভারি বস্তুর মতো মনে হয়। ঘটনার সময় বস্তুটি আমার হাতে ছিলো। আমার প্রতিপক্ষ এন্টি স্মোক বস্তুকে অস্ত্র হিসেবে উপস্থাপন করে প্রতিবেদক দিয়ে সংবাদ পরিবেশণা করায়। এরকম স্পর্শকতার একটি বিষয়কে কোনরূপ যাচাই না করে সংবাদে ‘অস্ত্র’ লিখাটা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
সংবাদে যেভাবে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা একজন ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত মানহানিকর। প্রকৃত ঘটনাটি হলো গত শুক্রবার (১ মে) রাতে তারাবির নামাজ শেষে জুড়ীর আমতৈল গ্রামে অবস্থিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার স্বরূপ দেয়া ধান কাটার হারভেষ্টার মেশিন পরিদর্শনে যাই আমি। ওই মেশিনের পাশে অবস্থিত স্থানীয় দীনবন্ধু সেন মালিকানাধীন ‘বন্ধু পোলট্রি ফার্ম’ নামে একটি মোরগের ফার্ম। ফার্মটির বিষয়ে স্থানীয় অনেকের অভিযোগ আছে। এবং ফার্মকে কেন্দ্র করে দীনবন্ধু সেন ও আব্দুল মতিন দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা মোকাদ্দমা পর্যন্ত করেছেন। যা আদালতে চলমান।
আমার উপস্থিতির খবর শোনে স্থানীয় কিছু মানুষ এবিষয়ে কথা বলতে এগিয়ে এলে দীনবন্ধু ও তার সহযোগীরা সেখানে উপস্থিত হয়। এসময় স্থানীয়দের সাথে ফার্মের মালিক দীনবন্ধু ও তার সহযোগীদের সাথে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে দীনবন্ধুর পক্ষের একজন স্থানীয় এক বাসিন্দাকে আঘাত করলে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি চেয়ারম্যানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। এসময় উত্তেজিতরা খামারটি ভাঙচুর করে। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
ঘটনার কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই জানতে পারি পরদিন এ ঘটনায় ফার্মের মালিক দীনবন্ধু সেন জুড়ী থানায় আমাকে ১ নং আসামী করে এবং স্থানীয় আরও ১১ জনের নামোল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার আপেক্ষিকতা এতোই তড়িৎ গতিতে হয়েছে যা আমার বোধগম্যতার বাইরে। ঘটনা পরিক্রমায় আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে আমাকে সামাজিকভাবে হেনস্তা করা জন্য একটি পক্ষ এ নাটক সাজিয়েছে।
মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলার মাটি ও মানুষের সাথে আমার পরিবারের আত্মার সম্পর্ক। আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামের আগে থেকেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামে সম্মুখ সারিতে ছিলাম। মহান মুক্তিযুদ্ধে আমার পরিবারের সবাই ঝাপিয়ে পড়েছিলাম। রণাঙ্গণে স্বশরীরে যুদ্ধ করে আমরা দেশ স্বাধীনে ভ’মিকা রেখেছিলাম। আমার বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মুহিত আশুক ছিলেন মাটি ও মানুষের নেতা। জুড়ি উপজেলার জন্মলগ্ন থেকে আমার ভাই ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। উনাকে দেশসেরা উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে পুরষ্কৃত করেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। ভাইয়ের মৃত্যুর পর আমার ভাবী ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। গত নির্বাচনে আমি নিজে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই।
মানুষ আমাকে পছন্দ করে তাদের উপজেলার অভিভাবক নির্বাচিত করেছে। নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মাথায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় জুড়ি উপজেলায় সকল ধরণের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেণ্ডারবাজি, দূর্ণীতি, ঘুষ বানিজ্য, মাদক এর বন্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি। অনেকে আমার কাছে বাÐিল বাÐিল টাকা এনে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছেন। আমি ওসবে পাত্তা দেই নি বরঞ্চ দরজা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। এতে অনেক সুবিধাবাদি ব্যক্তি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ঘুষখোর, মাদক ব্যবসায়ী আমার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়। মূলত এরা আমার নির্বাচনি পরাজিত প্রতিপক্ষদের সাথে হাত মিলিয়ে আমাকে বিভিন্নভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করে আসছে। এরই ধারাবাহিক একটি অপচেষ্টা ওই ঘটনা এবং আমার বিরুদ্ধে মামলা।
যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রবাসে গিয়েছি। দীর্ঘ ২১ বছর নেদারল্যাÐ আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। দেশে এসে জনগনের সেবক হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছি। তা যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করছি। জীবনে কখনো কোন অপশক্তির কাছে মাথানত করিনি। ভবিষ্যতেও করবো না। নোংরা রাজনীতির মারপ্যাঁচে পড়ে কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছি। যদিও তা ছিলো প্রতিপক্ষের পূর্ব পরিকল্পিত এবং ষড়যন্ত্র। তবে দিনশেষে সত্যের জয় হবে আমি বিশ্বাস করি।
সরেজমিনে না এসে আমার নির্বাচনী প্রতিপক্ষের প্ররোচনায় পড়ে কোন সত্যতা যাচাই না করে আমাকে ‘মাতাল’ ও ‘অস্ত্রধারী’ উল্লেখ করে সংবাদ পরিবেশনা করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একজন গণমাধ্যমকর্মী সমাজের বিবেক। সমাজের আয়না বলা হয় গণমাধ্যমকে। তাই সরেজমিন এসে তথ্য যাচাই বাচাই করে প্রকৃত ঘটনা বের করে সংবাদ পরিবেশণের জন্য সকল সাংবাদিক বন্ধুদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
-বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মোঈদ ফারুক, চেয়ারম্যান, জুড়ী উপজেলা পরিষদ।
জালালাবাদবার্তাডটকম/৬ মে ২০২০/প্রেবি