হাওরের শতভাগ ধান কাটা শেষ : ধানের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে কৃষকদের সংশয়

  • প্রতিবছর মৌলভীবাজারের হাওরের ধান তোলা নিয়ে চিন্তিত থাকেন কৃষকরা। কখন ভারতের উজান ঢল নেমে হাওরেরে ধান প্লাবিত করবে। চলতি বোরো মৌসুমে প্রকৃতি ছিল অনুকূলে। বন্যা, পাহাড়ী ঢল, শীলা বৃষ্টি ও অতিবৃষ্টি কিছুই ছিলনা। নতুন করে চলমান করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ প্রাদুভাবে শুধু ছিল শ্রমিক সংকট। তবে সর্ব স্থরের মানুষের প্রচেষ্ঠায় হাওরের নিম্নাঞ্চলের শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। তবে কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন।
  • জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ৫শত ৩০ হেক্টর জমিতে। বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৪ হাজার ৪শত ৮৫ মেট্রিক টন।
  • পাশাপাশি চলতি আউস মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৭শত ৯৭হেক্টর জমি। আউসের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ২শত ৪০ মেট্রিক টন।
  • গত বছর আমন আবাদ হয় ১ লক্ষ ১শত ৫০ হেক্টর জমিতে। যা উৎপাদন হয়েছিল ২ লক্ষ ৭০ হাজার ২শত ৫ মেট্রিক টন। আসছে আমন মৌসুমে ধানের আবাদ ও উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে।
  • প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও পুকা-মাকড়ের আক্রমন না থাকলে জেলায় ৩টি ফসল বোরো,আউস ও আমন মিলে ৬ লক্ষ ২৩ হাজার ১শত ৩০ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হবে।
  • মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, জেলার হাওরগুলোর নিম্নাঞ্চলের শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। হাওরের বাহিরের ৭০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে ৮৫ ভাগ ধান ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। উঁচু জমিতে আস্তে আস্তে ধান কাটলে সমস্যা নাই। এক কথায় এখন আর ধান উত্তোলনে ঝুঁকি নেই। অবশিষ্ট ১৫ ভাগ ধান কয়েক দিনের মধ্যে কাটা শেষ হবে। শ্রমিকের পাশাপাশি ধান কেটেছে ৩৯টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ১২১ রিপার মেশিন।
  • ইতোমধ্যে জেলার ৭ উপজেলায় সরকারি ভাবে বোরো ধান সংগ্রহের প্রস্তুুতি চলছে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় কৃষকদের মোবাইল এ্যাপস মাধ্যমে আবেদন নেয়া হচ্ছে। পরে তা লটারী করা হবে। অপরদিকে ৬টি উপজেলা রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের তালিকা তৈরী করা হয়েছে। এগুলো যাছাই বাছাই শেষে লটারী করা হবে।
  • মৌলভীবাজার সদর উপজেলা থেকে কৃষক পর্যায়ে সরকারি ভাবে ১২০৫ মেট্রিক টন, রাজনগর উপজেলায় ১৬৭৪ মেট্রিক টন, কুলাউড়া উপজেলায় ৮৪৭মেট্রিক টন, জুড়ী উপজেলায় ৬৮২ মেট্রিক টন, বড়লেখা উপজেলায় ৫৫৭ মেট্রিক টন, কমলগঞ্জ উপজেলায় ৫০৫ মেট্রিক টন ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ১১৪৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে।
  • জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসার বিপ্লব কুমার দাস জানান, পৃথক ভাবে জেলা থেকে সিদ্ধ ও আতপ মিলে জেলার ৪৫টি মিল থেকে মোট ৭ হাজার ৪ শত ৩৫ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত রুসনী অটো রাইস মিল, রাজনগরে রুজিনা ও রহিমা অটো রাইস মিলকে চাল সংগ্রহে বেশী বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে।
  • রাজনগর উপজেলার মনু প্রকল্পের ভেতর মেদিনী মহল এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম ও শেখ আহমদ বলেন, আমাদের প্রায় ১৩ বিঘা জমির ধান সবার আগে কাটতে পেরেছি। কিন্তু ১ জন শ্রমিকের মজুরি দিতে হয়েছে ৫০০ টাকা। তার পর নিজের শ্রম সহ রয়েছে সার, বীজ, কিটনাসকের মূল্য। সব মিলিয়ে লাভবান হওয়া যায়না। বেকার বসে থাকতে হয়, তাই প্রতি বছর কৃষি কাজে নামি।
  • হাকালুকি হাওরের ভুকশিমইল গ্রামের রুমের আহমদ, বাদে ভুকশিমইল মোঃ এলাইছ মিয়া ও জাব্দা গ্রামের কৃষক মিন্টু মিয়া বলেন আগাম বন্যা হতে পারে এমন চিন্তায় রাত হইলে ঘুম হতো না। তবে এখনো আর সমস্যা নাই। বন্যা, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢল না থাকায় মাঠের ফসল নিরাপদে ঘরে তোলতে পেরেছি।
  • ধানের মূল্য সম্পর্কে হাওর পাড়ের ওই ৩জন কৃষক বলেন গাজী-১৪ জাতের ধান ৭৫০টাকা মনে বিক্রি করেছেন। ব্রি-২৮ ও ২৯ ধান ৮৪০ টাকা থেকে ৮৬০ টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধান উৎপাদন কম হয়েছে, যে কারনে ক্রয়-বিক্রয় কম হচ্ছে। গত বছরের অবিক্রিত ধান চলতি মৌসুমে বিক্রি হচ্ছে প্রতি মন ১০৫০ টাকা মূলে।
  • স্থানীয় কৃষকরা দাবী করছেন তারা যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পান। পাশাপাশি আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ও উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহ সহ কিটনাসকের মূল্য সহ কৃষি ঋন সহজ শর্তে নাম মাত্র সুদে পাওয়ার দাবী করেন।
শেয়ার করুন

Leave A Reply