কুলাউড়ায় মসজিদ কমিটির দ্বন্ধে পাল্টাপাল্টি হামলা, থানায় অভিযোগ

কুলাউড়া প্রতিনিধি
কুলাউড়ায় মসজিদ কমিটির নিয়ে বিরোধের জেরে এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে হামলা ও পাল্টা হামলার অভিযোগ দেয় থানায়। পাল্টা হামলার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলে সেই মামলাটি এফআইআর হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনাটি তদন্ত চলছে বলে থানার তদন্তকারী কর্মকমর্তারা জানান।
রবিবার (২১ জুন) ঘটনার তদন্ত করতে উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের উত্তর রাজনগর এলাকায় যান কুলাউড়া থানার এসআই মাসুদ আলম ভূঁইয়া।
জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজনগর জামে মসজিদের কমিটি নিয়ে দ্বন্ধে হামলার শিকার হয়ে একই এলাকার বয়োজ্যোষ্ঠ আকরম আলী (৫০) নামে এক ব্যক্তি সস্ত্রীক গুরুতর আহত হন। পরে তারা কুলাউড়া সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এ ঘটনায় গত ৪ জুন আকরম আলীর ছেলে মোশাহিদ বাদি হয়ে এনাম, সালাম, কামাল, মালেক ও জব্বারকে বিবাদি করে কুলাউড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে ওই মসজিদের কমিটিতে নতুন করে পদ পেতে দৌড়ঝাপ শুরু করেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান খলিল। উনার প্রবাস ফেরত ছেলে কামরুল হাসান কামাল স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে এনিয়ে দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েন। আকরম আলীর ওপর হামলার এক সপ্তাহ পর গত ১১ জুন রাতে পৃথিমপাশা সড়কের মুখে খলিলের সমর্থক আব্দুস সালামের ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা করে। ওই ঘটনায় সালামের ছেলে লুৎফুর বাদি হয়ে আকরম আলী ও তার ছেলেদের বিবাদি করে থানায় মামলা করেন।
মসজিদ কমিটির দ্বন্ধে আহত আকরম আলীর মামলা তদন্তে রেখে বিপরীত পক্ষ সালামের মামলাটি এফআইআর হয়ে যায়। এতে স্থানীয়দের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
যদিও সালামের ওপর হামলার বিষয়ে আকরম আলী কিছুই জানেন না বলে প্রতিবেদককে বলেন। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
জানা যায়, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের উত্তর রাজনগর জামে মসজিদটির কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছে। প্রায় ১০ বছর আগে মসজিদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় আব্দুর রহমান খলিল। ওই সময় নানা অনিয়ম ও কেলেঙ্কারীর কারণে খলিলকে মসজিদ কমিটির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পরে সেই দায়িত্ব পান স্থানীয় আজমল হোসেন চৌধুরী বাতেন। তবে উভয় ক্ষেত্রে মসজিদের মোতাওয়াল্লীর দায়িত্বে ছিলেন আব্দুল মুহাইমিন।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক খলিলের ছেলে সদ্য প্রবাস ফেরত কামরুল হাসান কামাল মসজিদের মোতাওয়াল্লী আব্দুল মোহাইমিনদের সাথে কমিটি ও আনুসাঙ্গিক বিষয় নিয়ে দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকে নিষ্পত্তির চেষ্টা হয়। এর জেরে উত্তর রাজনগর এলাকায় মোতাওয়াল্লীর সমর্থিত স্থানীয় বৃদ্ধ আকরম আলী (৫০) ও তার স্ত্রীর ওপর হামলা হয়। এর এক সপ্তাহ পর সালামের ওপরও হামলা করে দুর্বৃত্তরা। উভয় ঘটনায় থানায় অভিযোগ হলেও সালাম পক্ষের মামলাটি এফআইআর হয়। উল্টো মামলায় জর্জরিত হয়ে আকরম আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা এখন ঘর ছাড়া।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী আকরম আলী বলেন, আমার ও আমার পরিবারের ওপর হামলা হলো সেই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেই। অভিযোগটি এফআইআর না হয়ে উল্টো আমার ওপর একটি মামলা এফআইআর হয়ে গেলো। আমি সুবিচার চাই।
রাজনগর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে মামলার বাদি লুৎফুর বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ স্থানীয় মসজিদের কমিটি নিয়ে আকরম আলী গং আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা আমার বাবার ওপর থানায় অভিযোগ দেয়। অভিযোগ দিয়ে কিছু করতে না পেরে পরে আকরম আলীর ছেলেরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গত ১১ জুন রাতে আমার বাবার ওপর হামলা করে।
মসজিদের মোতাওয়াল্লী আব্দুল মোহাইমিন বলেন, মসজিদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খলিলের ছেলে কামাল নাকি প্রশাসনের কোন এক কর্মকর্তার বন্ধু। সে এলাকার অনেক মানুষকে প্রশাসন দিয়ে হয়রাণী করার হুমকি দিচ্ছে। অনেকে এসে আমাকে বলছেন। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করছি।
স্থানীয় মুরুব্বি নবাব আলী নকী খান বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে মানসিকভাবে দীর্ঘদিন অমিল। আকরম আলী থানায় একটি করেছেন। পরে সালামের ওপরও হামলা হয়েছে। যদিও এলাকার অনেকেই বলছেন সালামের ওপর তৃতীয়পক্ষ হামলা করেছেন। আমরা বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করছি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার এসআই মাসুদ আলম ভূঁইয়া বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জালালাবাদবার্তাডটকম/২২জুন২০২০/শাকির
শেয়ার করুন