বকশীগঞ্জে খালাতো বোন ও স্ত্রীকে সহোদর বোন বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকুরী

আবু সায়েম মোহাম্মদ সা’-আদাত উল করীমঃ

জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার রবিয়ারচর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা বাবার সনদ দেখিয়ে এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তার খালাতো বোন ও স্ত্রীকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরী নিয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্রে জানা যায় জন্ম সনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্র জাল করে তিনি তার খালাতো বোন ও স্ত্রীকে সহোদর বোন বানিয়ে এই চাকুরী বাগিয়ে নিয়েছেন। পাঁচ বছর ধরে তার খালাতো বোন ও স্ত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরী করছেন। বকশীগঞ্জ উপজেলার রবিয়ারচর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শহিদুর রহমানের সন্তান আশরাফুল আলম বিপ্লব তার খালাতো বোন ও তার স্ত্রীকে সহোদর বোন বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরী বাগিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও তাদের দুজনের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জাল করে চাকরি নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। খালাতো বোন ও স্ত্রীকে সহোদর বোন বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বাবার সনদে চাকুরি নেওয়ার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে গোপন ছিল।
তবে সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে এলাকায় তোলপাড় চলছে। ফলে আশরাফুল আলমসহ পরিবারের সবাই ঘর-বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় পালিয়ে গেছেন। একই সঙ্গে আশরাফুল আলমেরও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরী হয়। তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জাল বলেও অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে মোঃ আশরাফুল আলম বিল্পব ও তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার ও খালাতো বোন শাপলা আক্তার একই সঙ্গে চাকুরীতে যোগদান করেন। মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সহিদুর রহমানের তিন সন্তান হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তাদের চাকুরী হয়।
কিন্তু নাসরিন আক্তার ও শাপলা আক্তার তারা সেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নয়। নাসরিন আক্তার ঐ মুক্তিযোদ্ধার পুত্রবধূ ও শাপলা আক্তার ভাগনী। তিনি জন্ম সনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্র জাল-জালিয়াতি করে তাদের দুজনকে চাকুরী নিয়ে দেন। বর্তমানে আশরাফুল আলম উপজেলার মাদারেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, শাপলা আক্তার খেয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও নাসরিন আক্তার টুপকার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আশরাফুল আলম উপজেলার বিভিন্ন লোককে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৮০লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়েও অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। মোঃ আশরাফুল আলমের বাড়ি উপজেলার রবিয়ারচর গ্রামে। কিন্তু বাড়িতে তার পরিবারের কেউ থাকে না।
প্রতিবেশীরা জানায়, আশরাফুল আলম পলাতক রয়েছেন। তার স্ত্রী নাসরীন আক্তারসহ অন্যান্য সদস্যরা ঢাকায় থাকেন। বাড়িতে শাপলা আক্তার থাকেন।
খেয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাপলা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সহিদুর রহমান আমার খালু। আশরাফুল আলম আমার খালাতো ভাই। আমার বাবার নাম বেলাল মিয়া ও মা মনোয়ারা বেগম। আমার বাবা একজন কৃষক ছিলেন। কোন কোটায় তার চাকুরি হয়েছে বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে চাকুরী পেতে তার খালাতো ভাই আশরাফুল প্রায় ১০লাখ টাকা নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে আশরাফুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ.স.ম.জামশেদ খোন্দকার সাংবাদিকদের জানান, এই বিষয়ে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। বিষয়টি জানতে পারলাম। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিও) আব্দুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে জানান, এদের চাকুরী মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হয়েছে। জাল সনদের বিষয়ে বেশ কিছু দিন আগে একটি তদন্ত হয়েছে। সেই তদন্তের রিপোর্ট উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। তবে তদন্ত রিপোর্ট পাঠানোর পর কি হয়েছে এ বিষয়টি আমি আর জানি না।
শেয়ার করুন