বিশেষ প্রতিনিধি, কুলাউড়া, মৌলভীবাজারঃ
চলতি বছরের ২ এপ্রিল মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৌলভীবাজার জেলাধীন কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের প্রবাসীদের সমন্বয়ে “১০ নং হাজীপুর ইউনিয়ন প্রবাসী পরিষদ” গঠিত হয়।
১ম ধাপেই বিগত রমজানের পূর্ব মূহুর্তে বিশ্ব যখন কোভিড-১৯ মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে ঠিক তখনই হাজীপুর ইউনিয়নের হতদরীদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে সূচনা হয় এই সংগঠনের। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই একটি হোয়াটস্আপ গ্রুপের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত হাজীপুর ইউনিয়নবাসীর আর্থিক সহযোগিতায় সমস্থ ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের দুঃস্থদের মধ্যে নগদ অর্থ বিতরণ করে এই সংগঠনটি। তাছাড়া ভুইগাঁও গ্রামের অসুস্থ ব্যবসায়ী জহুর আলীর চিকিৎসা সহ হাজীপুর ইউনিয়নের বরেণ্য দুই সম্মানিত ব্যক্তির পরিবারকে গুপনে নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করে এই সংগঠনটি। আর এর মাধ্যমেই দেশ বিদেশে বসবাসরত সকল হাজীপুরবাসীর মন জয় করে নেয় নবগঠিত এই সংগঠনটি।
২য় ধাপে গত কোরবানীর ঈদে সংগঠনের পরিচালনা কমিটির সুযোগ্য নেতৃত্বে এবং সকল প্রবাসী হাজীপুরবাসীদের সহযোগীতায় হাজীপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি মাদ্রাসার ৭০ জন এতিম ও হতদরীদ্র ছাত্রদের মধ্যে উপহার স্বরুপ ঈদের নতুন জামা প্রদান করা হয়। কোমলমতি বাচ্চাদের মুখে ঈদ উপহার গ্রহণের পর যে আনন্দ পরিলক্ষিত হয় তা বলে কিংবা লিখে বুঝানো সম্ভব নয়।
৩য় ধাপে সংগঠনটি ২টি সাধারন কর্মসূচী এবং একটি বিশেষ কর্মসূচী হাতে নেয় যার মধ্যে, ১. ওমানে দূর্ঘটনায় আহত সংগঠনের সদস্য দেশে ফেরত ভুইগাও গ্রামের তাওহীদ আলীকে রাজধানীর সিআরপি হাসপাতালে ভর্তিসহ আর্থিক সাহায্যের হাত প্রসারিত করা। খুব শীঘ্রই এই কর্মসূচীটি বাস্তবায়িত হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি কুয়েত প্রবাসী গাজী ফয়ছল আহমদ। ২. বিশ্ব মহামারি কোভিড-১৯ এর কারনে বাংলাদেশে আটকে পড়া প্রবাসী পরিষদের যে সকল সদস্যরা বিভিন্নভাবে আর্থিক, মানষিক, শারিরীক ও প্রবাসে ফেরত আসা সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন পরিষদের মাধ্যমে তাদের সর্বাত্বক সাহায্য করা। এই কর্মসূচীটিও প্রায় বাস্তবায়নের পথে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারন সম্পাদক ইউকে প্রবাসী এএসএম রায়হান বক্স এবং ৩. বিশেষ কর্মসূচী হিসেবে আমিরাতে দীর্ঘ ৮/৯ বছর ধরে অবৈধ/ইল্লিগেল হয়ে পড়া ৮নং ওয়ার্ডের হাজীপুর গ্রামের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। সংগঠনের সাংগঠনিত সম্পাদক কাউছার আলীর আপ্রাণ প্রচেষ্টায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর এই ভাইকে দেশে পাঠানো সম্ভব হয়। আমিরাতে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের সহযোগীতায় এগিয়ে এসেছিলেন সংগঠনের ২ সদস্য কটারকুনার বাসিন্দা জনাব আবুল কালাম আজাদ এবং পীরেরবাজারের বাসিন্দা জনাব সাইফ উদ্দিন। দুই সপ্তাহেরও অধিক সময় আমিরাতের বিভিন্ন অফিসে যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ বাবত নিজ পকেট হতে সংগঠনের পক্ষ থেকে আমিরাতের দুই সহশ্রাধিক অর্থ, শ্রম ও সময় ব্যায় করে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক কাউছার আলী এই অসম্ভব প্রায় কর্মসূচীটি সম্ভব করে তুলেছেন। তাছাড়া, জাহাঙ্গীর আলমের দেশে ফেরতের সম্পূর্ণ টিকেটেরও খরচও কাউছার আলীর মাধ্যমে এক প্রবাসী বাংলাদেশী বোন সংগঠনকে উপহার স্মরুপ প্রদান করেন।
শীঘ্রই সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করা সহ আরও কিছু কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি কানাডা প্রবাসী রুহুল কুদ্দুছ চৌধুরী। সভাপতি গাজী ফয়ছল আহমেদ এবং সাধারন সম্পাদক এএসএম রায়হান বক্স জালালাবাদ বার্তাকে বলেন তাদের এই কার্যক্রমগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে সার্বিক সহযোগীতা করেছেন সিনিয়র সহ-সাধারন সম্পাদক আমিরাত প্রবাসী ইছমত আলী, সহ-সাধারন সম্পাদক ওমান প্রবাসী লুৎফুর রহমান, প্রচার সম্পাদক আমিরাত প্রবাসী আবুল কাশেম খান খোকন, অর্থ সম্পাদক কাতার প্রবাসী রফিক আহমেদ সামাদসহ কার্যকরি পরিষদের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং এই সফলতার জন্য নেতৃবৃন্দরা পরিষদের সকল প্রবাসী সদস্যদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রতিষ্ঠার মাত্র ছয় মাসের মাথায় “১০ নং হাজীপুর ইউনিয়ন প্রবাসী পরিষদ” সফলতার সহিত এতোগুলো কর্মসূচীর সঠিক বাস্তবায়ন করায় এবং অদূর ভবিষ্যতে আরও কিছু কর্মসূচীর উদ্যোগ নেওয়ায় কেবলমাত্র হাজীপুর ইউনিয়নবাসীই নয়, কুলাউড়া উপজেলায় একটি সফল প্রবাসী পরিষদ হিসেবে সুনাম অর্জন করতে পেরেছে।