২০২০ সালের এইচ এস সি পরীক্ষার্থীদের আগাম অভিনন্দন জানাচ্ছি। বৈশ্বিক মহামারীর কারণে অনেক অপেক্ষা করেও কোন বিকল্প সমাধান না পেয়ে পরীক্ষা না নিয়ে পূর্ববর্তী পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে পরীক্ষার্থীদের গ্রেড নির্ধারণ করার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সময়োপযোগী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।
জে এস সি ও এস এস সি’র ফলাফল বিবেচনায় বিভাগ পরিবর্তনকারী কিছু সংখ্যক পরীক্ষার্থী ছাড়া প্রায় সকলেই বুঝতে পারছে তাদের ফলাফলের গ্রেড কী আসবে। বাকীরাও শীঘ্রই বুঝতে পারবে বলে মনে করি।
এ সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু সংখ্যক পরীক্ষার্থীর মন স্বাভাবিক কারণেই খারাপ হওয়ার কথা। বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল সহ উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল একটা বড় ভূমিকা পালন করে, সেক্ষেত্রে যারা এস এস সি বা পূর্ববর্তী পরীক্ষায় ভালো করতে না পেরে উচ্চমাধ্যমিকে এসে নিজেদের অতীত ভুলভ্রান্তি ও সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে জীবনের বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে অধিকতর ভালো ফলাফল করার যোগ্যতা অর্জন করে, কিংবা ভালো ফলাফল করে তাদের একটু খারাপ লাগারই কথা। কিন্তু, তাদেরকেও বুঝতে হবে বাস্তবতার কথা, প্রকৃতির উপর কারোরই হাত নেই, সে কথা।
এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখিও হচ্ছে গত দু’দিন ধরে, বিভিন্ন হিসাব নিকাশ করে অনেকেই পরীক্ষার্থীদের লাভ ক্ষতির খতিয়ান দেখাচ্ছেন। আবার, কেউ কেউ রাজনীতির ফ্লেভার লাগিয়ে একটু উস্কানিমূলক কথাবার্তাও বলছেন।
একজন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে বলতে শুনলাম, তাহলে এপ্রিল মাসে এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হলোনা কেন? সাম্প্রতিক কালে জাতীয় সংসদের কয়েক শূণ্য আসনে উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি এও বলেছেন, তাহলে ঐ আসনগুলোতে আগে যে দলের সাংসদ ছিলেন ঐ দলের মনোনীত ব্যক্তিকে সাংসদ ঘোষণা করলেই চলতো! নির্বাচনের কী দরকার ছিলো? এ ধরনের উপহাসমূলক কথা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির বিশেষ করে সাবেক একজন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর মুখে উচ্চারিত হয়,এর চেয়ে দূর্ভাগ্য আর কী হতে পারে? ভাবতে কষ্ট লাগে কিন্তু অবাক হইনা মোটেই। কারণ, এসব লোকেরাই একসময় দেশ শাসন করেছেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছেন,পাবলিক পরীক্ষার পূর্বে নকল প্রতিরোধের নামে হেলিকপ্টার চড়ে সারাদেশে মিলনমেলা করে দেশের কোটি কোটি টাকা অপচয় করেছেন। এঁদের কাছ থেকে এরচেয়ে বেশি আশা করা ঠিক নয়। তাদেরকে সম্মানের সাথে বলি,কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এসব নোংরামি ছাড়ুন। সময়ই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ বিচারক। অপেক্ষা করুন, সময়কে সঠিকভাবে চলতে দিন। সময়ই বলে দেবে কোনটা সঠিক, কোনটা বেঠিক!
বৈশ্বিক মহামারীর শিকার এবারের উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বলবো, এসব কথায় কান দেওয়ার দরকার নেই, নিজেদের হীন ভাবার কোন সুযোগ নেই,অনুশোচনারও প্রয়োজন নেই এবং উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে ভালো প্রস্তুতি গ্রহণের বিকল্প নেই।
আমরা জানি , “শেষ ভালো যার, সব ভালো তার।” কাজেই অপেক্ষা না করে এখনই ঝাঁপিয়ে পড়ো। একটু নড়ে চড়ে বসো। প্রচন্ড মনোবল ও আত্মশক্তি নিয়ে বিগত ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে সফল বড়ভাই, বোনদের পরামর্শ নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার একটা ভালো প্রস্তুতি নাও, টেক্সট্ বইগুলো পড়ে ধূনো ধূনো করে ফেলো। দেখিয়ে দাও, তুমিই যোগ্য তা যেভাবেই হোক, যে কোন পরিস্থিতিতেই হোক।
যারা তোমাদের ফলাফল নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কথাবার্তা বলছে, তোমরা তোমাদের পছন্দসই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মনমতো বিষয়ে ভর্তি হয়ে তাদের জবাব দাও।
কথা কম, কাজ বেশি। শরীর রক্ষা ও কঠিন কাজের মাধ্যমেই নিজেকে যোগ্য থেকে যোগ্যতর করে তুলো। নিশ্চয়ই মহান সৃষ্টিকর্তা তোমাদের সাহায্য করবেন। তোমাদের মনোবাসনা পূর্ণ হবে, তোমাদের যোগ্যতার জয় হবেই হবে।
একটা হিত কথা দিয়ে শেষ করি –
“যোগ্য যার ভাগ্য তার কখনও না টুটে
ডুবিলেও তরী তার পূনর্ভাসি উঠে।”
সকলের কল্যাণ হোক।