কুলাউড়ায় পাঁচ একর পান চাষের জমি দখলমুক্ত

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ইছাছড়াপুঞ্জিতে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী খাসিয়া সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির প্রায় পাঁচ একর আয়তনের পানের জুম (জমি) দখল করেছিলেন পার্শ্ববর্তী এলাকার এক বাসিন্দা। ভুক্তভোগী ব্যক্তি এ বিষয়ে প্রশাসন ও পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা আজ সোমবার অভিযান চালিয়ে ওই জমি উদ্ধার করে দেন।
উপজেলা প্রশাসন, পুঞ্জির বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের সূত্রে জানা গেছে, ইছাছড়াপুঞ্জির খাসিয়ারা পান চাষ ও তা বিক্রি করে জীবিকা চালান। সেখানে ৫২টি পরিবার থাকে। ওই পুঞ্জির বাসিন্দা জেসপার আমলেংরংয়ের প্রায় পাঁচ একর জায়গাজুড়ে একটি পানের খেত রয়েছে। পুঞ্জির পাশে জায়গাটি পড়েছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে কর্মধা ইউনিয়নের টাট্রিউলি গ্রামের বাসিন্দা দুবাইপ্রবাসী রফিক মিয়ার নেতৃত্বে ১৫-২০ জন লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জেসপারের জমিতে ঢোকেন। সেখানে পাহারার দায়িত্বে দুই ব্যক্তি ছিলেন। তাঁরা পাহারাদারদের তাড়িয়ে জুমটি দখল করে নেন। এ ব্যাপারে জেসপার আমলেংরং রফিক মিয়াসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযানকালে জুমে অবৈধভাবে নির্মিত দুটি কাঁচা ও টিনশেডের একটি আধা পাকা ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। রফিক মিয়ার পক্ষের কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞাপন
এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইউএনও এ টি এম ফরহাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি দল অভিযানে যায়। এ সময় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. তানভীর হোসেনসহ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-৯) শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প ও কুলাউড়া থানার পুলিশের একটি দল ছিল। অভিযানকালে জুমে অবৈধভাবে নির্মিত দুটি কাঁচা ও টিনশেডের একটি আধা পাকা ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। রফিক মিয়ার পক্ষের কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। জুমে নির্মিত অবৈধ ঘরে হোসনে আরা ও লতিফা বেগম নামের দুই নারীকে পাওয়া যায়।
ওই নারীরা জানান, মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতনে রফিক মিয়া তাঁদের পাহারাদার হিসেবে নিযুক্ত করেন। পরে তাঁদের আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযানের সময় আদিবাসী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক ফাদার জোসেফ গোমেজ, আদিবাসীদের স্থানীয় সংগঠন কুবরাজের সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং ও কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিলভেস্টার পাঠাং উপস্থিত ছিলেন।
ভুক্তভোগী মালিক জেসপার বলেন, অতীতে তাঁদের এলাকায় এ রকম জমি দখলের ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় পুঞ্জির লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। দখলের পর থেকে রফিক মিয়া একাধিকবার খেতের পান বিক্রি করেন। এতে তাঁর প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। জুম ফেরত পাওয়ায় তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
ইউএনও এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, দুষ্কৃতকারীরা অবৈধভাবে খাসিয়াদের পানের জুম দখল করেছিল। ওই জমি উদ্ধার করে দেওয়া হয়েছে। দখলকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে পানের জুমে প্রবেশ না করার বিষয়ে লিখিত মুচলেকা প্রদান করায় আটক করা দুই নারীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে রফিক মিয়ার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
শেয়ার করুন