-
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি.
মোবাইল ফোনে খবর আসে হাজেরা বিবি ওরফে কুঠিল (৪৮) মা নিখোঁজ হয়েছেন। সারাদেশে কঠোর লকডাউনে সরাসরি গণপরিবহণসহ সব ধরণের পরিবহণও বন্ধ। তিনি কোন উপায় না পেয়ে লকডাইনের মধ্যে ঢাকা থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে ২৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় নিজ বাড়ি পৌঁছান ছেলে সোহেল আহমেদ (২৮)।
শনিবার সন্ধ্যায় ১৪ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলার লগুরপাড় গ্রামের বাড়িতে রবিবার ভোরে পৌঁছান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের লগুরপাড় গ্রমের মানিক মিয়ার স্ত্রী ও মাধবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আসিদ আলির ছোট বোন হাজেরা বিবি ওরফে কুঠিল (৪৮)।
গত বুধবার রাতে একই গ্রামে অবস্থিত বড় ভাই আসিদ আলির বাড়ি থেকে রাতের খাবার খেয়ে হাজেরা বিবি প্রতিবেশী রকিব মিয়ার বাড়িতে রাত্রিযাপন করেন।
বৃহস্পতিবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে রকিব মিয়ার স্ত্রীকে চা বানানো কথা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। রকিব মিয়ার স্ত্রী চা তৈরি করলেও হাজেরা বিবি আর ঘরে ফেরেননি।
এদিকে সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়িয়ে গেলেও হাজেরা বিবি বাড়িতে না ফেরায় হাজেরার ছেলের ঘরের নাতিন শাম্মী (১০) বাড়ির পাশেই দাদা আসিদ আলির বাড়িতে গিয়ে দাদির খোঁজ খবর করেন।
সোহেলের খালাতো ভাই ভানুগাছ চৌমুহনীর সিএনজিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়া জানান, প্রায় ২০-২৫ বছর আগেও একইভাবে তার খালু সোহেলের বাবা মানিক মিয়াও নিখোঁজ হয়েছিলেন। যার সন্ধান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আসিদ আলি বলেন, নাতিনের মুখ থেকে দাদি বাড়ি ফিরেনি এমন সংবাদ শুনে নাতিনকে সঙ্গে নিয়ে বোনের বাড়িতে গিয়ে দেখি দরজা তালাবদ্ধ, বাহিরের বাতি জ্বলছে। অন্য ঘরে গাভীগুলোও ডাকাডাকি করছে।
তখন তিনি আশপাশে এলাকায় বাড়িঘরে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে প্রতিবেশী রকিব মিয়ার স্ত্রী তাকে জানান, রাতে হাজেরা বিবি তাদের বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন, ভোরে চা বানিয়ে রাখতে বলে ঘর থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি।
পরে সম্ভাব্য সব আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও কোনো সন্ধান না পেয়ে গত শুক্রবার বিকালে কমলগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন আসিদ আলি, যার নং-১৩৬৮।
শনিবার মোবাইল ফোনে ঘটনাটি ঢাকায় অবস্থানকারী আসিদ আলী তার ভাগিনা (হাজেরার ছেলে) সোহেল আহমেদকে জানান। সোহেল মায়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে করোনার কারণে লকডাউনে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় নিজেই বাইসাইকেল চালিয়ে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে ১৪ ঘণ্টা পর কমলগঞ্জের লগুর পাড়স্থ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান। সোহেল বাড়ি পৌঁছেই লোকজন নিয়ে রবিবার সারাদিন আশপাশের ৮ কিলোমিটার এলাকার ঝোঁপঝাড়, খাল, ডোবা,পুকুর সব আত্মীয়স্বজনের বাড়িঘরে খোঁজ খবর করেও মা হাজেরা বিবির কোনো সন্ধান পায়নি।আজ সোমবার সন্ধ্যায় মোবাইল কমলগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত সোহেল রানা জানান, থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। ৫দিন অতিবাহিত হয়েছে গৃহবধুর কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনও বন্ধ । তবে নিখোঁজ গৃহবধুর খোঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
মা নিখোঁজের খবর পেয়ে ২৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নিজ বাড়ি মৌলভীবাজারে পৌঁছান ছেলে সোহেল
শেয়ার করুন