“প্রেস বিজ্ঞপ্তি”
ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তর এবং কার্যক্রম
১৫ মার্চ, ২০২২ খ্রি.
ভোক্তা -অধিকার সুরক্ষা ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে ‘ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯’ প্রণীত হয়েছে। এ আইনের উদ্দেশ্য হলো মূলত ভোক্তা -অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধ, ভোক্তা-অধিকার লঙ্ঘনজনিত বিরোধ নিষ্পত্তি, নিরাপদ পণ্য ও সঠিক সেবা নিশ্চিতকরণ, ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা, পণ্য ও সেবা ক্রয়ে প্রতারণা রোধ এবং গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। ইতোমধ্যে প্রান্তিক পর্যায়ের ভোক্তারাও যাতে সহজে অভিযোগ করতে পারে সেজন্য চালু করা হয়েছে ‘ভোক্তা-বাতায়ন’ শীর্ষক হটলাইন সার্ভিস যার নম্বর ১৬১২১। এ হটলাইন ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে একটি যুগান্তকারী প্রয়াস যা ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ হটলাইনের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভোক্তারাও ঘরে বসেই ভোক্তা-অধিকার সম্পর্কে জানতে পারে, অধিকার ক্ষুণ্ন হলে প্রতিকার চাইতে পারে এবং ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণের সুফল ও ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্যের কুফল সম্পর্কেও সম্যক ধারণা অর্জন করতে পারে । এর ফলে গ্রাম অর্থাৎ তৃণমূল পর্যায়ের ভোক্তারাও অভিযোগ দায়েরের সুযোগ পাবে। এছাড়াও পূর্বে ভোক্তার দায়েরকৃত অভিযোগ আমলযোগ্য হলে এবং তদন্তে প্রমাণিত হলে আরোপিত জরিমানার ২৫% অভিযোগকারীকে অফিসে এসে গ্রহণ করতে হতো। ফলে অভিযোগকারীর সেবা গ্রহণে সময় ও অর্থের অপচয় হওয়ার সাথে সাথে ভোক্তার নিরাপদ পণ্য/সেবা পেতেও বিলম্ব হতো। আর এরই সমাধান হিসেবে অধিদপ্তর বিদ্যমান পদ্ধতিকে পরিবর্তন করে প্রণোদনার অর্থ প্রদানে কার্যকর ডিজিটাল/ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা হিসেবে ই-প্রণোদনা সেবা চালু করে।
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ১৫ মার্চ পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব ভোক্তা-অধিকার দিবস-২০২২’। সেই লক্ষে মৌলভীবাজার জেলায় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আজ ১৫ মার্চ দিবসটি উদযাপন হচ্ছে। মহান স্বাধীনতার মাস রক্তঝরা মার্চ । বাঙ্গালি জাতি স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করেছে এবং সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করেছে। বিশ্ব ভোক্তা-অধিকার দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থায় ন্যায্যতা’। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি স্বাধীন সার্বভৌম সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রগতিশীল নেতৃত্বে ডিজিটাল সেবায় বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল মাধ্যমে আর্থিক সেবা প্রদান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অপরদিকে করোনা ভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এর অতিমারিতে বাংলাদেশসহ সকল দেশেই ডিজিটাল প্লাটফর্মে বিনিয়োগ, ব্যাংকিং, পেমেন্ট, ঋণ, বীমা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, কেনা-বেচা ইত্যাদি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রযুক্তির সহায়তায় ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে এই নতুন সম্প্রসারণের সুযোগ নিয়ে কিছু সংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ী ভোক্তা-সাধারণকে প্রতারিত করছে। ভোক্তার স্বার্থ সুরক্ষা ও প্রতিশ্রুত সেবা প্রাপ্তিতে যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে তা নিরসনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ প্রয়োগের মাধ্যমে ভোক্তা-অধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে এরূপ সম্ভাব্য ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধের লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিতভাবে বাজার, শিল্প-কারখানা, হোটেল-রেঁস্তোরাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তদারকি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাচ্ছে। সরকারের কঠোর ব্যবস্থাপনার ফলে ভোক্তা-সাধারণকে মানসম্মত পণ্য ও নিরাপদ খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তৎপরতার ফলে ভোক্তাগণের দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে এসেছে এবং পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় এ অধিদপ্তরের প্রতি জনসাধারণের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্ব ভোক্তা-অধিকার দিবস যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের মাধ্যমে ভোক্তাদের সচেতন করার লক্ষ্যে একযোগে কেন্দ্রীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নিম্নোক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে:
১। বর্ণাঢ্য র্যালি
২। আলোচনা সভা (জেলা ও উপজেলা পর্যায়সহ)
৩। ক্রোড়পত্র প্রকাশ
৪। স্মরণিকা প্রকাশ
৫। প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন
৬। টকশো/গোলটেবিল বৈঠক
৭। মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে ভোক্তাদের নিকট খুদে বার্তা প্রেরণ
৮। ঢাকাসহ দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রচারণামূলক কার্যক্রম যেমন : প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, ট্রাক-শো, অনলাইন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচার
৯। প্রচারণামূলক ব্যানার, ফেস্টুন, ডিজিটাল বোর্ড ইত্যাদি স্থাপন
সর্বোপরি অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এ অধিদপ্তর সীমিত সংখ্যক জনবল দ্বারা দেশব্যাপী ভোক্তা-অধিকারকে সুরক্ষিত রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে সকল মহলে প্রশংসিত হচ্ছে। অধিদপ্তরের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিঃশর্ত ও নিস্বার্থ কাজের কারণে পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় এ অধিদপ্তরের উপর মানুষের আস্থা ও প্রত্যাশা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসম্পৃক্ততা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে পারলে আইনের সুফল প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বাস্তবায়নে অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থার তথ্য:
(অর্থবছর ২০০৯-২০১০ থেকে ২০২১-২০২২ (ফেব্রুয়ারি/২২)
১। মোট বাজার অভিযানের সংখ্যা ৪৯,৯৬৮ (ঊনপঞ্চাশ হাজার নয়শত আটষট্টি) টি।
২। মোট বাজার অভিযানের মাধ্যমে দন্ডিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১,২০,১০২ (এক লক্ষ বিশ হাজার একশত দুই)
টি।
৩। মোট বাজার অভিযানের মাধ্যমে আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ ৮২,৪৫,৬৭,০৪২/-(বিরাশি কোটি
পঁয়তাল্লিশ লক্ষ সাতষট্টি হাজার বিয়াল্লিশ) টাকা ।
৪। ভোক্তাদের নিকট থেকে মোট লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির সংখ্যা ৫৬,১২৪ (ছাপ্পান্ন হাজার একশত চব্বিশ)
টি।
৫। মোট অভিযোগ নিষ্পত্তির সংখ্যা ৫১,৭৫৯ (একান্ন হাজার সাতশত ঊনষাট)টি।
৬। মোট অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে দন্ডিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭,২৮১ (সাত হাজার দুইশত একাশি) টি।
৭। মোট অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ ৫,০৯,৪৩,২০৮/- (পাঁচ কোটি নয় লক্ষ
তেতাল্লিশ হাজার দুইশত আট) টাকা ।
৮। মোট জরিমানার পরিমাণ ৮৭,৫৫,১০,২৫০/-(সাতাশি কোটি পঞ্চান্ন লক্ষ দশ হাজার দুইশত পঞ্চাশ) টাকা
(বাজার অভিযান ও লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে)।
৯। অভিযোগকারীকে প্রদত্ত টাকার পরিমাণ ১,২৫,৪৭,৯২৭/-(এক কোটি পঁচিশ লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার নয়শত
সাতাশ) টাকা।
১০। ২৫% হিসেবে পেয়েছেন ৭,১৮৫ জন।