ওসমানীনগর প্রতিনিধি:
সম্পদ ও সম্ভ্রম না দেয়ায় একঘরে করা হয়েছে একটি অসহায় পরিবারকে। সন্তানদের মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ রাস্তাঘাটে চলাচল না করতেও পঞ্চায়েতের প্রভাবশালী কতিপয় নেতারা নির্দেশ দিয়েছেন অসহায় এই পরিবারকে। নিজের বসতভিটা সৎ দেবর শাহাবুদ্দিন ও শফিকদের না দেয়ার কারণে নানা নির্যাতনের পর গ্রাম্য মাতব্বরদের নিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে নির্যাতিতা গৃহবধূ মনোয়ারা বেগমের পরিবারের সাথে। বর্তমানে ৪ সন্তান নিয়ে গৃহবন্দী হিসেবে দিন যাপন করছে এই পরিবারটি। শুধু তাই নয় নিজের সম্ভ্রম ও সম্পদ রক্ষা করতে আদালতে মামলা করায় চরম বিপাকে পড়েছেন গৃহবধূ মনোয়ারা।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা অনলাইন প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন তাজপুর ইউনিয়নের আইলাকান্দি গ্রামের আমির উদ্দিনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো জানান, তার স্বামী গত ৭ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে বৈধ ভিসা না থাকায় দেশে আসতে পারছেন না। এ সুযোগে একমাত্র সম্পদ বসত ভিটা দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সৎ দেবররা। এছাড়া তাদের কু প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় দেবর শাহাবুদ্দিন মনোয়ারা বেগমের ছেলে রেদুয়ান হোসেন রনিকে মারপিট করে।
এছাড়া সৎ দেবর শাহাব উদ্দিন গত ১৯ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে মনোয়ারার ঘরের দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে মনোয়ারার সাথে অনৈতিক আচরণ ও মারপিট করে। এ সময় তার ঘর থেকে নগদ ৩০ হাজার টাকা ও আধা ভরি স্বর্ণ নিয়ে যায়।
এ বিয়য়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সিলেট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন মনোয়ারা। এর পর থেকে আরো মরিয়া হয়ে উঠে শাহাবুদ্দিন। ১৩ মার্চ ডিবি পুলিশ মামলা তদন্ত হওয়ার পর গ্রাম পাঞ্চায়েতের কিছু লোকজন সমস্যা মিমাংসার জন্য রাত ১০ টার দিকে মনোয়ারাকে ডাকলে তিনি উপস্থিত হন। গ্রাম্য সালিশ ডেকে সৎ দেবর শাহাবুদ্দিন, শফিক মিয়া ও গ্রামের প্রভাবশালী লিম্বর মিয়া, আব্দুল আহাদ, ছমির মিয়া, লিটন মিয়া, আব্দুল আজিজ, হান্নান মিয়া, সমুজ মিয়ারা ৫০ হাজার টাকা অগ্রীম জমা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন মনোয়ারাকে। এতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করলে তারা তাকে একঘরে (সমাজচ্যুত) করে রাখে বলে অভিযোগ করেন তিনি। থানা পুলিশের দারস্থ হওয়ায় বর্তমানে মনোয়ারা বেগমের পরিবার শাহাব উদ্দিন গংদের ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন। তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তার চার সন্তান, রেদওয়ান হোসেন রনি (১৩), রকিব হোসেন (৬), শাখাওয়াত হোসেন রাব্বি (১০) ও সোনিয়া আক্তার মুন্নি (১৭)।
আইলাকান্দি জামে মসজিদের সাবেক মোতাওয়াল্লি হান্নান মিয়া বলেন, আমরা মনোয়ারা বেগমকে একঘরে করিনি। তিনি পঞ্চায়েতের বিচারের ফি দিতে অস্বীকার করায় এবং বিচার না মানায় আমরা পঞ্চায়েতের লোকজন মনোয়ারার কোনো বিষয়ে যাবনা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গত শুক্রবার মসজিদে দেয়া মনোয়ারা বেগমের শিরনি ফেরত দেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, পঞ্চায়েতের অনেকে তার শিরনি খাবেনা বলায় তিনি রাগ করে অন্য মসজিদে শিরনি নিয়ে গেছেন।
মনোয়ারা বেগমের সৎ দেবর শাহাবুদ্দিনের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলেও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মনোয়ারা বেগমের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট ডিবি পুলিশের এসআই নিরঞ্জন বলেন, মনোয়ারা বেগমকে পুনরায় তার দেবররা নির্যাতন করছে বলে আমার নিকট অভিযোগ করেছেন। এর প্রেক্ষিতে গত সোমবার আমি আইলাকান্দি গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করেছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।