রিটোর্ট,এম.মুসলিম চৌধুরী:
৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চা শ্রমিকরা সড়ক পথ, রেলপথ বন্ধ করে এবং বাগানগুলোতে নিয়মিত মিছিল সমাবেশ করে মজুরি বৃদ্ধিও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চা শ্রমিকরা।
বুধবার আন্দোলনের দ্বাদশ দিনে বিকেল ৩টায় ১০টি চা বাগানের শ্রমিকরা শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও লছনা এলাকায় ঢাকা মৌলভীবাজার আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা মিছিল দিতে থাকে। এসময় তারা শেখ হাসিনা সরকার ৩০০টাকা মজুরি দরকার, শেখ হাসিনা আমাদের মা, শেখ হাসিনার সরকার বার বার দরকার এ ধরণের ¯েøাগানে সড়ক পথ অবরোধ করে রাখেন। এদিকে চা শ্রমিকদের মজুরির দাবিতে সড়ক পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। যানবাহগুলো আটকে থাকায় গরমে যাত্রীরা চরম দূর্ভোগে পড়েন। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন এর আশ^াসে চা শ্রমিকরা সড়ক পথ অবরোধ তোলে নেয়। গতকাল মঙ্গলবার কুলাউড়া রেলস্টেশনের অদূরে সিলেট গামী পাহাড়িা এক্্রপ্রেস ট্রেন আটকিয়ে রেলপথ অবরোধ করেন চা শ্রমিকরা। পরে দেড় ঘন্টা পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে রেলপথ ও সড়কপথ থেকে তারা অবরোধ তোলে নেয়। বুধবার সকালে বাগাগুলো ঘুরে দেখা যায়, ভুরভুড়িয়া চা বাগানের শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে নাটমন্দিরে বসে আছেন। কাজে যোগ দেননি ভাড়াউড়া, ককিয়াছড়া, কালিঘাট, ফুলছড়া, খেজুরিছড়া, বালিশিরা চা বাগানের শ্রমিকরাও। এদিকে সকাল থেকে মির্জাপুর, বৌলাছড়া চা বাগানের শ্রমিকরা মিছিল নিয়ে এসে লছনা চৌমুহনায় এসে জড়ো হন। এখানে আশপাশের আরো ৮ থেকে ১০টি চা বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শ্রমিকরা।
এদিকে আন্দোলনরত শ্রমিকদের কাজে ফেরাতে গতকাল মঙ্গলবার বাগানে বাগানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া। তারা উপজেলার ভাড়াউড়া, জেরিন, কালিঘাট ও ফুলছড়া চা বাগানে গিয়ে শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থা রেখে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেয়ার জন্য বলছিলেন। ওই দিন তাদের কথায় ভাড়াউড়া ও জেরিন চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলেও আজ উপজেলার অন্য বাগানগুলোর মতো এই দুই বাগানের শ্রমিকরাও কাজ বন্ধ রেখেছে। এর আগে দেশের চা বাগানগুলোতে উদ্ভূত শ্রম অসন্তোষ নিরসনে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা বাস্তাবায়নে গত রবিবার রাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের সাথে জেলা প্রশাসকের এক বৈঠক হয়। জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে আসন্ন দুর্গা পূজার আগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের ভিডিও কনফারেন্সে সংসুক্ত হওয়ার শর্তে আপাতত পূর্বের মজুরি ১২০ টাকা রেখেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে যোগদানে সম্মত হন। এ সংক্রান্ত একটি যৌথ বিবৃতিতে জেলা প্রশাসন ও শ্রমিক নেতারা সাক্ষর করেন। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছিল, শ্রমিকরা তাদের অন্যান্য দাবিসমূহ লিখিত আকারে জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিল করবেন। জেলা প্রশাসক তাদের দাবিদাওয়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবেন। এছাড়া ধর্মঘটকালীন শ্রমিকদের মজুরি বাগান মালিকগণ বাগানের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী পরিশোধ করবেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্তটিও প্রত্যাখান করেন সাধারণ শ্রমিক ও ছাত্র যুবকরা।চা শ্রমিক সন্তান ছাত্র ও যুব নেতা মোহন রবি দাস বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ৩০০ টাকা মজুরি দাবি আদায় হচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। কোনো হুমকি, ধমকি বা যতই ষড়যন্ত্র করা হোক আমরা আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে যাবো না। বাংলাদেশ চা কন্যা নারি সংঘটনের সভাপতি খাইরুন আক্তর বলেন, লস্করপুর ভ্যাালি ২৩টি বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি ও ছাত্র-যুবকদের নিয়ে আমাদের সভা হয়েছে। ওই সভায় যতদিন ৩০০ টাকা মজুরি আদায় না হয়, ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কালিঘাট চা বানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি অবান তাাঁতি বলেন, শুধু কালিঘাট চা বাগান নয়, বালিশিরা ভ্যালির সবগুলো চা বাগানে কাজ বন্ধ রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৩ আগষ্ট থেকে চা শ্রমিকরা এই আন্দোলন শুরু করেছিল।