চা বাগানে লাগাতার ধর্মঘটের তারণে উদ্ভুত বর্তমান পরিস্থিতিতে করনীয় বিষয়ে চা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ।


রিপোর্ট,এম.মুসলিম চৌধুরী:
গত ১৫ দিনের চা শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতির কারণে চা বাগানগুলোতে চলমান কার্যক্রম স্থবির বিশেষ করে পাতা চয়ন বন্ধ থাকার কারণে চা বাগানগুলিতে সবছেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। একদিকে যেমন যেমন ফেক্টরি বন্ধ থাকায় কোনো চা উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে সময়মত পাতা চয়ন করতে না পারার করণে পাতার গুনগতমান খারাপ হওয়ার পাশাপাশি বর্তমান মৌসুমে চা গাছের উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। চা শিল্পের বর্তমান অবস্থা নিয়ে শ্রীমঙ্গলস্থ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের চা বিশেষজ্ঞরা চা শিল্পের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট এর
ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মো: ইসমাইল হোসেন, মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কৃষিতত্ব) ডা. তৈৗফিক আহম্মদ, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কৃষিতত্ব) ডা. মোহাম্মদ মাসুদ রানা চা বাগানের শ্রমিকদের লাগাতার ধর্মঘটে ক্ষতিগ্রস্ত চা শিল্পকে উত্তোরনে যৌথভাবে পরামর্শ দিয়েছেন।
চা বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে বলেন, চা বাগানগুলিতে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়কালে সাধারণত ৭-৮ দিনের রাউন্ডেই পাতা চয়ন করা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্র চয়নযোগ্য ডড়াগুলি নরম থাকে। এবং একটি ডগা চয়ন করার পর গুড়ায় থেকে যাওয়া সুপ্ত কুড়িগুলি থেকে দ্রæত নতুন কুড়ি বেরিয়ে আসে। রাউন্ড দীর্ঘ হলে একদিকে যেমন ডগাগুরির গুনগতমান খারাপ হয়ে যায়। ডগার গোড়া শক্ত হয়ে যাওয়ায় সেগুলি প্লাকিং করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এবং পসেসিং করার সময় ফেক্টরীর মেশিনারিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে প্লাসিং করার পর নতুন কুঁড়ি বেরিয়ে আসতেও বিলম্ব হয়। এর ফলে উৎপাদনও হ্রাস পায়। সবেমাত্র শেষ হওয়া ১৫দিনের শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে চা বাগানগুলির সেকশসগুলোতে প্লাকিং রাউন্ড অনুমানিক (১৫+১)+১৬ থেকে সর্বোচ্চ (৭+১৫+৭)=২৯ দিন পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় ফেক্টরির ক্যাপাসিটি অনুযায়ি যতবেশি সম্ভব পাতা ফিল্ড থেকে চয়ন করে নিয়ে আসতে হবে। রাউন্ড বেশি দীর্ঘ হয়ে থাকলে সে ক্ষেত্রে প্লাকারদের ছুরি-কাচি ব্যবহারে বাধাঁ না দেওয়াই উত্তম হবে। কেননা এক্ষেত্রে ছুরি-কাঁচি ব্যবহারে গাছের উপর কম স্ট্রেস পড়বে। প্লাকাররা দ্রæত পাতা চয়ন করে নিয়ে াাসতে পারবে। এবং প্লাকিং টেবিল সমতল রাখা সম্ভব হবে। তবে উল্লেখ্য যে, সেক্ষেত্রে পাতা চয়নের পরপরই সিস্টেমিক কোনো ছত্রাকনাশক নির্ধারিত মাত্রায় যেমন পড়সঢ়ধহরড়হ হড়াধ, ঃঁৎনড় ইত্যাদি ১৫০গ্রাম-২০০লিটার হারে স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আর বিশেষ কারণে কোনো বাগানের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্লাকিং রাউন্ড উল্লেখিত সময়ের চাইতে বেশি হয়েছে এবং ডগাগুলি মাত্রাতিরিক্ত বড় হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে এল,ও এস করে দেওয়াই উত্তম হবে। এক্ষেত্রে কাঙ্খিত ডগাগুলিকে চয়ন করে সেওয়ার পর সর্বশেষ প্লাকিং মার্ক বরাবর স্কিফ করে দিতে হবে। যেহেতু এ সময়ে তাপমাত্রা ও আদ্রতা অনুতুলে আছে তাই স্কিফ করার ১৫-২০ দিনের মধ্যেই সেকশনটিকে আবার রাউন্ডের মধ্যে আনা যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। দীর্ঘ প্লাকিং রাউন্ডের করনে প্লাকিং এর সময় স্বভাবতই প্লাকিং টেবিলের ছেড়ে আসার দেড় পাতা এক পাতা ও এক কুঁিড় এর সংখ্য খুবই কম থাকবে। কিন্তু এর পরও ছুরি-কাচিঁ ব্যবহার করলে সেক্ষেত্রে ঐ অল্প সংখ্যাক দেড় পাতা যেনো প্লাকাররা কেটে নিয়ে না আসেন। সে বিষয়ে প্লাকারদের নির্দেশনা দিতে হবে। এভাবে একরাউন্ড পাতা চয়ন করার পর পরবর্তী রাউন্ড পাতা আসতে একটু বিলম্ব হতে পাওে এবং এটাই স্বাভাবিক। কাজেই এই পাতা চয়নের চাপ কম থাকার সময়কালে শ্রমিকদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সিকলিং, ইনফিলিং ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি জোর দিয়ে চালিয়ে নেওয়ার জন্য এখনই পূর্বপরিকল্পনা করে রাখা যেতে পারে। উদ্ভুত এ পরিস্থিতি আমরা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উত্তোরন করতে সমর্থ হবো।

 

শেয়ার করুন