প্রতিবেদন,এম.মুসলিম চৌধুরী:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় প্রকিবেশীর উপর খুনের দায় চাপাতে নিজের ১২ বছরের প্রতিবন্ধী কন্যা সন্তান পপি সরকারকে গলায় ওড়না পেছিয়ে হত্যা করে মেয়েটির পিতা দিগিন্দ নম। এ ঘটনায় মৌলভীবাজার আদালতে ফৌজদারি দন্ডবিধি ১৬৪ ধারায় মেয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয় ঘাতক পিতা দিগিন্দ নম।
রোববার ২ অক্টোবর দুপুরে কুলাউড়া থানা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেসব্রিফিং করে জানানো হয়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে জনৈক কামাল মাস্টারের বাড়ীর ভাড়াটি দিগিন্দ নম তার প্রতিবন্ধী মেয়ে পপি সরকার (১২) এর মৃতদেহ দিগিন্দ নম এর ঘরের পাশে গাছ বাগানে গলায় ওড়না দিয়ে গিট দেওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনার খবর পেয়ে কুলাউড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবন্ধী পপি সরকারের মৃতদেহের সুরতকাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরে এ ঘটনায় মৃত পপি সরকারের পিতা নিজেই বাদী হয়ে একই গ্রামের প্রতিবেশী সুরমান মিয়া ও কাজল মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো: আমিনুল ইসলাম এর নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো: হারুনুর রশিদসহ কুলাউড়া থানা পুলিশের একটি টিম মামলার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে। মামলাটি তদন্তকালে একপর্যায়ে মৃত পপি সরকারের ঘরের দক্ষিণ পাশে জানালার সামনে বারান্দায় ঝুলানো ‘মঞ্জিল মায়া সল্ট’ নামক একটি বিস্কুটের প্যাকেট উদ্ধার করে তদন্তকারী দল। পরে বিস্কুট প্যাকেটের সূত্র ধরে পুলিশ সরেজমিনে অনুসন্ধানে পার্শ্ববর্তী একটি মুদি দোকানে গিয়ে হুবুহু কয়েকটি বিস্কুটের প্যাকেট পায়। ওই দোকানের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায়, ঘটনার আগের দিন মৃত পপি সরকারের পিতা দিগিন্দ নম তার মুদি দোকান থেকে ১০ টাকা মূল্যের একটি মঞ্জিল মায়া সল্ট বিস্কুটসহ ১০ টাকার মিনিট কার্ড ও কয়েকটি সিগারেট কিনে নিয়ে যায়। এসব তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ প্রাথমিকভাবে পপি সরকার হত্যার ঘটনায় তার বাবা গিরিন্দ নমকে সন্দেহের তালিকায় নিয়ে আসে। পরে এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা দিগিন্দ নমকে আটক করে পুলিশ। পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে বিস্কুট ক্রয় করার কথা স্বীকার করে দিগিন্দি নম। পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে দিগিন্দি নম প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করে জানায়. ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ৪টার দিকে তার মেয়ে পপি সরকার মৃগী রোগে আক্রান্ত হলে নিজেই তার মেয়ের গলায় ওড়না পেছিয়ে শ্বাসসরোধ করে হত্যা করে। পরে লাশ তার ঘরের দক্ষিণ পাশে গাছ বাগানের নীচে ফেলে আসে। ঘটনার পর দিগিন্দ নম পুনরায় তার ঘরে এসে শুয়ে পড়ে। পরদিন পূর্ব বিরোধের জেরে প্রতিবেশী সুরমান মিয়া ও কাজল আলীকে হত্যার দায়ে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে হত্যার ঘটনা সাজিয়ে সকালে তার মেয়ে পপি সরকারের লাশ গাছ বাগানে পাওয়া গেছে বলে তার বাড়ীর মালিক কামাল মাস্টার ও স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ আশপাশের লোকজনদের জানায়।