বিলুপ্তির পথে সিলেটের ঐতিহ্য চুঙ্গাপিঠা ও ঢলুবাঁশ

প্রতিবেদন,সোলেমান আহমেদ মানিক:
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী চুঙ্গা পিঠা। বিশেষ প্রজাতির বাঁশের চুঙ্গার ভেতরে বিন্নি চাল, দুধ, চিনি, নারিকেল ও চালের গুঁড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করা হতো পিঠা। ঢলুবাঁশ ছাড়া চুঙ্গাপিঠা তৈরি করা যায় না। কারণ ঢলুবাঁশে এক ধরনের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে পুড়িয়ে ফেলে না। ঢলুবাঁশে অত্যধিক রস থাকায় আগুনে না পুড়ে ভেতরের পিঠা তাপে সিদ্ধ হয়। পিঠা তৈরি হয়ে গেলে মোমবাতির মতো চুঙ্গা থেকে পিঠা আলাদা হয়ে যায়। ঢলু বাঁশের চুঙ্গা দিয়ে তৈরি এ পিঠা চুঙ্গাপুড়া পিঠা নামে বিখ্যাত। এলাকার অন্যতম ঐতিহ্য এ পিঠা । সিলেট অঞ্চলে পৌষ সংক্রান্তির সময় বাজারে মাছের মেলা বসে। মেলা উপলক্ষে মৎস্য ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন। এটা যেন এই অঞ্চলের সার্বজনীন উৎসব। মাছের মেলা থেকে মাছ কিনে কিংবা হাওর-নদী থেকে বড় বড় রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, পাবদা, কই, মাগুর মাছ ধরে হালকা মশলা দিয়ে ভেজে (স্থানীয় ভাষায় মাছ বিরান) দিয়ে চুঙ্গাপুড়া পিঠা খাওয়া ছিল সিলেটবাসীর একটি রেওয়াজ।

আগের মতো মাছের মেলা বসলেও এখন আর গ্রামীণ এলাকায় বাড়িতে চুঙ্গাপিঠার আয়োজন চোখে পড়ে না। শীতের রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে সারারাত চুঙ্গাপুড়ার দৃশ্যও তাই দেখা যায় না।

ঊাড়িতে মেহমান বা বিশেষ করে নতুন জামাইকে শেষ পাতে চুঙ্গাপুড়া পিঠা, মাছ বিরান, রিসা (নারিকেল পিঠা) না খাওয়ালে যেন মান-সম্মান থাকে না। এখন আর সেই দিন নেই। চুঙ্গাপিঠার ঐতিহ্য প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এর মূল কারণ চুঙ্গাপিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ ঢলুবাঁশ ও বিন্নি ধানের চাল উৎপাদন কমে গেছে। এখন আর আগের মতো চাষাবাদও হয় না।

মৌলভীবাজারের পাহাড়ি এলাকায় ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা চা-বাগানের টিলায় প্রচুর ঢলুবাঁশ পাওয়া যেত। বনদস্যু, ভূমিদস্যু ও পাহাড়খেকোদের কারণে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়া হারিয়ে যাচ্ছে ঢলুবাঁশ। তবে জেলার কিছু কিছু টিলায় এখনও কিছু ঢলুবাঁশ পাওয়া যায় যা চাহিদার তুলনায় অতি নগন্য।

স্থানীয়রা জানান, বাঁশটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। ঢলুবাঁশ তেমন একটা পাওয়া যায়না বলে বাজারে এর দামও এখন বেশ চড়া। পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে এগুলো খুব কম বাজারে উঠে। ১০-১৫ বছর আগেও এসব বাঁশ প্রচুর দেখা যেত। এখন সংরক্ষণ আর সঠিক পরিচর্যার অভাবে ঢলুবাঁশের পাশাপাশি চুঙ্গা পিঠাও হারিয়ে যেতে বসেছে।

শেয়ার করুন