নুরুজ্জামান বিশ্বাস এর ফেইসবুক পোস্ট
টরন্টো, কানাডাঃ বেশীর ভাগ প্রবাসী বাংলাদেশকে অনেক ভালবাসেন। দেশের মানুষ ভাল ও সুখে থাকলে আমরা প্রবাসীরা ভাল থাকি। দেশের মানুষ কষ্টে থাকলে আমরা সমব্যথিত ও মর্মাহত হই। প্রবাসে এক যুগ পার করে দিলেও দেশের কোন অসংগতি চোখে পড়লে খুব খারাপ লাগে।
গত কয়েকদিনের আলোচিত সমালোচিত অনেক ঘটনাই চোখে পড়েছে। যেমনঃ
বিশ হাজার টাকা কেজি জিলাপি’র জন্য দীর্ঘ লাইন। না পেয়ে হতাশা ও দুঃখ নিয়ে অনেকে ফিরে গেছেন।
আবার, টি সি বি’র ২০ টাকা কেজি চালের জন্য দীর্ঘ লাইন। না পেয়ে হতাশা ও দুঃখ নিয়ে অনেকে ফিরে গেছেন।
আছে, ১লা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বিদ্যানন্দ নিয়ে তর্ক – বিতর্ক।
বন্ধু মহলের একজন বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। জুম আড্ডায় একদিন খুব গর্বের সাথে বলল, বন্ধু মুহলের বা তাদের পরিচিত কেউ কোন কাজে আসলে সে খুব দ্রুততার সাথে কাজটি করে দেয়। আমি মুখ ফস্কে বলে ফেলি,” সেবা দেয়া তোদের কাজ। সে ক্ষেত্রে কে পরিচিত। আর কে অপরিচিত – এমন প্রশ্ন অবান্তর!”
ব্যস, শুরু হয়ে গেল বিতর্ক প্রতিযোগিতা। দেশের এই সংস্কৃতির সাথে আমরা সবাই কম বেশী পরিচিত।
শ্রেনী বৈষম্য ও বিভাজনের সাথে তাল মিলাতে না পেরে প্রবাসে বসবাসরত বেশীরভাগ প্রবাসী দেশ ছেড়েছেন।
আমরা যারা কানাডাতে প্রবাসী হয়ে এসেছি, তাদের বেশীর ভাগই উচ্চ শিক্ষিত। উচ্চ শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আমাদের সবারই বন্ধু তালিকায় নিজ ধর্মের বাইরেও অন্য ধর্মের অনেকে আছেন। বন্ধুত্বের সম্পর্ক এখানে কোন নিয়ম নীতিই দেয়াল হয়ে দাড়ায়নি।
বাংলাদেশে বসবাস করা কারো মনমানসিকতা আর কানাডায় বসবাস করা কারো মন মানসিকতার পার্থক্য পরিলক্ষিত না হলে বুঝতে হবে আমাদের মগজ এখনও দেশের নোংরা কালচারে ভরপুর। কানাডা মাল্টি কালচারাল দেশ। কারো অনুভূতিতে আগাত দেয়া থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।
মঙ্গল শোভাযাত্রার সাথে হিন্দুধর্মের কোন সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। হিন্দু সম্প্রদায় বৈশাখ মাসের ১ তারিখ পালন করেন ‘চৈত্র সংক্রান্তি’ ও পহেলা বৈশাখ পালনের মধ্য দিয়ে। চৈত্র সংক্রান্তিতে তারা নিরামিষ খান। যারা বর্তমানে ‘পহেলা বৈশাখ’ পালন করেন তারা আসলে মাছ মাংস খেয়ে দিনটি পালন করেন। পান্তা ইলিশ খেতে খুব কম লোককে দেখেছি। ১লা বৈশাখ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে যারা হিন্দু সম্প্রদায়কে বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন পাবলিক পোস্টে দোষারোপ করে আসছেন, তাদেরকে আর একটু বিদ্যার্জন করার অনুরোধ রইল।
আমরা যারা স্বাধীনতা পরবর্তীতে জন্মগ্রহন করেছি, ১লা বৈশাখের রুপের পরিবর্তন দেখে দেখে বর্তমান প্রজন্মের ১লা বৈশাখ উদযাপন দেখছি আর তাল মিলাতে ব্যর্থ হচ্ছি।
মঙ্গল শোভাযাত্রার যারা নেতৃত্বে দেন এবং যারা এতে অংশ নেন তাদের বেশির ভাগেরই ‘মুসলিম’ পরিবারে জন্ম । ধর্মীয় জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারনে তারা হয়ত এসব করছেন। এখানে আমাদের ব্যর্থতা আছে। এ প্রজন্মকে আমরা ইসলামের সঠিক পথ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছি বা দেখাতে পারিনি। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ- এ দায় এড়াতে পারে না।
গত এক দশক থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার বিশাল উদযাপন দেখে আসছি। দেশের মঙ্গল কতটুকু হয়েছে জানি না। তবে বিশ হাজার টাকা কেজি জিলাপি’র জন্য দীর্ঘ লাইনের সংখ্যা ও টি সি বি’র ২০ টাকা কেজি চালের জন্য দীর্ঘ লাইনের সংখ্যা সমানুপাতিক হারে বাড়ছে।
অনিয়ম, সুদ, ঘুষ ও দুর্নীতি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এসব নিয়ে কোন শোভা যাত্রা হয় না।
দেশে ও বিদেশে মুসলিম সম্প্রদায় ইসলামোফবিয়াসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত।
মঙ্গল শোভা যাত্রার বিরোধিতা করতে গিয়ে দেশে ও বহির্বিশ্বে মুসলিম সম্প্রদায়কে আবার নানা প্রশ্নের সন্মুখিন হতে না হয়।
আপনি মুসলিম হলে, আপনার পরিবারে ইসলামের সঠিক অনুশীলনের প্রচলন করুন। অন্য ধর্মের দোষ ত্রুটি না খুজে নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে উপস্থাপন করুন।